প্রচন্ড ব্যস্ততা এবং আরো কিছু কারনে গত বেশ কয়েকদিন ব্লগে আসা হচ্ছে না। আরো বেশ কয়েকটা দিন আসার মতো অবস্থায়ও নাই আমি। তারপরেও একটা পোষ্ট আর তার কমেন্টগুলোতে চোখ আটকে গেল। তারপর থেকে মাথা থেকে যতোই বিষয়টাকে প্রাণপনে সরিয়ে দিতে চাচ্ছি, যাচ্ছে না। ভেবেছিলাম, অন্য কেউ হয়তো এটা নিয়ে প্রতিবাদ করবে। কিন্তু সেরকম কিছুও দেখলাম না। কাজেই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম এটা নিয়ে দু'চার কথা না বললে আমি নিজের বিবেকের কাছে সব সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ থাকবো।
মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশের সূর্যসন্তান। আর আমাদের প্রিয় এই প্ল্যাটফর্মটা সেই সন্তানদেরকে সর্বোচ্চ সন্মান দিয়ে থাকে। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, এই প্ল্যাটফর্মেই একজন ব্লগার যার নাকে-মুখে এখনও দুধের গন্ধ পাওয়া যাবে, সে কিনা একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মামলার হুমকি দিচ্ছে, অসন্মান করে কথা বলছে!! সেলুকাসের মতো করে জানতাম, আমাদের দেশটাই বিচিত্র; এখন দেখছি ব্লগটাও বিচিত্র হয়ে যাচ্ছে যেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হুমকি দেয়া হয়, অসন্মান করা হয়!!!
কথায় আছে, মানুষের আচরণ দিয়ে তার পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়। ব্লগে বেশীরভাগ ব্লগারই একজন আরেকজনের সাথে সরাসরি পরিচিত না। সেখানে তাদের পোষ্ট কিংবা ইন্টারএ্যকশান কার সাথে কেমন, সেটা দিয়েই আপাতঃদৃষ্টিতে বিচার করা হয়।
একজন ব্লগার, যার কিনা মিডিয়া সম্পর্কে পরিস্কার কোন ধারনা নাই। নীতি-নৈতিকতার কোন বালাই নাই। কোন এক পোষ্টের মন্তব্যে বলে এক কথা, পরমুহুর্তে তার ওস্তাদের ব্লগে গিয়ে বলে আরেক কথা। যে ব্লগারের মানদন্ড নির্ধারন করে হিট, টিআরপি ইত্যোকার হাস্যকর কথা-বার্তা দিয়ে। যাকে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ব্লগার ভাড়, ছাগল, খোজা, বলদ, মগজহীন ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করেছে……….তাকে যখন ''ব্যক্তিত্ব'' নিয়ে আলোচনা করতে দেখি, তখন হাসবো নাকি কাদবো বুঝতে পারি না আসলেই। মনের মধ্যে একটা কথাই শুধু ঘুরপাক খায় তখন, ''কেউ আমারে মাইরালায় না ক্যারে?''
এই ব্লগারকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমাদের মডারেটরসহ বহু ব্লগার পরিচ্ছন্ন ব্লগিংয়ের উপদেশ দিয়েছে। সর্বশেষ শায়মা, মডারেটর আর জী এস ভাই বিস্তারিতভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অবস্থা তথৈবচ। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়ে মডুর আক্ষেপ, ''আসুন আমরা এই পোস্টে সকল প্রকার আলোচনা থেকে বিরত হই। কারন সবাই সব কিছু বুঝবে আমি এটা প্রত্যাশা করি না। আমার কমেন্টে কারো নাম না থাকা স্বত্তেও এখানে ক্রমাগতভাবে ব্লগার জুলভার্নকে উদ্দেশ্যে করে আজেবাজে কথা বলা হচ্ছে। আমি মনে করি, এখানে তর্ক করে শুধু মাত্র সময় নষ্ট ছাড়া অন্য কিছুই হবে না।''
আমাদের মডু'র মতো একজন চরম ধৈর্যশীল মানুষকে আমি এভাবে হতাশ হতে হাতে গোনা দুই-একটা ক্ষেত্রেই দেখেছি।
আসলে কানে যদি রিফ্লেক্টর বসানো থাকে, তাহলে কথা ঠিকমতো মগজ পর্যন্ত পৌছায় না। ফলে প্রসেসিংয়ে সমস্যা হয়। কিংবা ব্লগার পাঠক০০৭ এর ভাষ্য মতে মগজের ব্যবহার না করে অন্য কিছু দিয়ে কোন কিছু বুঝতে চাইলেও বোঝা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। ছাগল দিয়ে যেমন হালচাষ হয় না, তেমনি মগজের যথাযথ ব্যবহার না করলেও ব্লগিং হয় না। আমীর খানের ইডিয়েট মুভির মতো বলতে হয়, এই ধরনের মগজ অনেক দামী, কারন এটা অব্যবহৃত; অনেকটা ব্র্যান্ড নিউ মগজ। এই ধরনের ব্লগারকে ছাগল বললে অবিচার করা হয়, রামপাঠা বলা উচিত!!!
সর্বনাশ, আমি কি গালি দিয়ে ফেললাম? এখন আমার নামে কি মামলা হবে? হলে হোক, আমিও দেখি একজন মামলাবাজ ব্লগারের দৌড় কতো!! সবার বোঝা উচিত, বাংলাদেশের মন্ত্রী, সচিব বা ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা শনি গ্রহের বাসিন্দা না। এই ব্লগের অনেকেরই তাদের কাছে পৌছার ক্ষমতা আছে। কাজেই ব্লগে ক্ষমতার শো-অফ না করাই হবে মঙ্গলজনক এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
জুলভার্ণ ভাই যদি গালি দিয়েও থাকেন, তাহলে উনার মতো একজন সজ্জন ব্যক্তি কতোটা ত্যক্ত-বিরক্ত হলে দিতে পারেন, সেটা আমি আমার ব্লগীয় অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝতে পারি।
সবশেষে বলি, সন্মান কোন বাই-ডিফল্ট জিনিস না। কাউকে সন্মান দিলেই শুধুমাত্র সন্মান পাওয়া যায়। আর আমার কাছে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক উপরের মানুষ। শুধুমাত্র ব্লগীয় অপ-মিথস্ক্রিয়ার ধোঁয়া তুলে কেউ যদি উনাদের যে কাউকে অসন্মান করে, আমি তার বিরুদ্ধে দাড়াবো; সে আমার পাশে কেউ থাকুক বা না থাকুক।
যাক গে, আর কথা না বাড়াই। আপনারা ব্লগিং করতে থাকুন, আর ব্লগে যে অল্প কয়েকজন রেয়ার স্পিশিজ আছে, তাদের কর্মকান্ডে মজা লুটতে থাকুন।
হ্যাপি ব্লগিং!!!
ছবিসূত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৫