আমার ফেসবুকে একটা নামমাত্র একাউন্ট আছে। সেখানে যাওয়া হয় না বলতে গেলে। তবে ইউটিউবে সময় পেলেই ঢু মারি, বিভিন্ন রকমের ভিডিও দেখি। ভিডিওগুলোর মন্তব্যে নজর বুলানো আমার একটা অভ্যাস। সেখানে আশ্চর্য হয়ে একটা জিনিস খেয়াল করি। যখনই বাংলাদেশের কোন বিষয় সামনে আসে; সেটা হোক কোন অনুপ্রেরণাদায়ী কন্টেন্ট, কোন অর্জন অথবা কোন সমালোচনা করার মতো বিষয়; কিছু ভারতীয় নেটিজেন সেগুলোতে ঝাপ দিয়ে পড়ে।
সমালোচনা করার মতো বিষয় হলে তো কোন কথাই নাই, পুজার খুশী অনুভব করে তারা। অর্জনের বা অনুপ্রেরণার বিষয় হলেও সেটার খুত বের করার চেষ্টা থাকে। কিংবা ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করে যে, এর জন্য ভারতের অবদান সবচাইতে বেশী। ভারত আমাদের পাশে না থাকলে আমরা এতিম…….ইত্যাদি ইত্যাদি। এ‘ছাড়াও তাদের মনে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে বিদ্বেষ, ঘৃণার বিষবাষ্প লুকানো আছে, তা উগরে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। ইউটিউবের মতো মিডিয়াতে অশিক্ষিত-কুশিক্ষিতসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ আসে। তাদের কথাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়ার কিছু নাই। তবে এসব অশিক্ষিত-কুশিক্ষিতদের একটা প্রেতাত্মা যে ব্লগে এসেও হাজির হবে, সেটা কখনও ভাবি নাই।
বলছি ''গেছোদাদা'' নিকের এক ব্লগারের কথা। কয়েকদিন আগে এই ব্লগার রম্যের নামে একটা পোষ্ট দিয়েছিল, বাংলাদেশী সংবাদ পাঠিকা ও কমেন্টস !! শিরোনামে। সেখানে বুঝে হোক কিংবা না বুঝে, অনেকে বিনোদিত হয়েছেন। অনেকে 'রম্য' নামের এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ লেখার বিরোধিতাও করেছেন। লেখায় মূলতঃ বাংলাদেশের মন্তব্যকারীদের বানান ভুল আর তাদের ইসলামী মানসিকতার বিষয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। মোটিভ বোঝার জন্য কমেন্ট করে বিষয়টা পরিস্কার হলো যে, ইতরামী করাই এর আসল উদ্দেশ্য। মনে হলো বিষয়টা নিয়ে দু'কলম লেখা উচিত। তাই এই পোষ্টের অবতারণা।
বোঝার সুবিধার জন্য একটা উদাহরন দেই আগে। মনে করেন আপনার পরিবারের একজন একটা অন্যায় করেছে, যেটার জন্য আপনি নিজেও বিব্রত এবং বিরক্ত। কিন্তু সেটা নিয়ে আপনার কোন প্রতিবেশী যদি খোচাখুচি করে, আপনাকে ছোট করার মানসিকতা দেখায় তাহলে কেমন হবে? আর সেইসব অন্যায় বা দোষ যদি আপনার সেই প্রতিবেশীর নিজের পরিবারেই বহুগুনে থাকে, তাহলেই বা কেমন হবে? এ'ক্ষেত্রে কমনসেন্স কি বলে? কমনসেন্স বলে যে, পরিবারের ভিতরে আপনি সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপই নেন না কেন; সেল্ফ ডিফেন্সের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই সেই বিষাক্ত প্রতিবেশীর কথাকে আপনি গুরুত্ব দিবেন না।
মূল বিষয়টা হলো, আমাদের দেশ বা দেশের মানুষ সম্পর্কে একজন ভিনদেশী যার কিনা নিজেদের দেশেই সমজাতীয় সমস্যার অন্ত নাই, তেমন কারো কাছ থেকে আমরা কোন নসিহত শুনতে চাই না। আমাদের সমস্যা আমরাই সামলাবো। যে কোন গঠনমূলক সমালোচনা আমরা শুনতে আগ্রহী, কিন্তু ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ একেবারেই বরদাশত করবো না।
এই ব্লগার এতোদিন বিভিন্ন রকমের রম্য লিখতো; খুবই ভালো কথা। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে তার যে চুলকানী, সেটা আর গোপন রাখতে পারলো না। আসলে খাউজানী-চুলকানী এমন একটা ব্যাপার যা কিনা বেশীদিন গোপন রাখা সম্ভবও না। একদিন না একদিন বের হয়ে আসবেই।
লিখতে গেলে বানান ভুল হতেই পারে, অথবা সঠিক বানান সম্পর্কে ধারনা না-ই থাকতে পারে। এই ব্লগেই অনেক নামকরা ব্লগারের এই সমস্যা আছে। কিন্তু লেখার পেছনে আবেগটাই মুখ্য। নিজের ভাব প্রকাশে মানুষ তার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করে সব সময়। সেটাকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নাই। নাকি এই আলোচ্য ব্লগার মনে করে, তাদের দেশের সবাই উচ্চ শিক্ষিত! তাদের কোন বানান ভুল হয় না!!! অন্যদিকে ধর্মীয় বা জাতীয়তাবোধ থেকে যে উগ্রতার জন্ম, সেটাও কম-বেশী সব দেশেই আছে। কিন্তু যেই দেশের ক্ষমতায় একটা ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী, সেই দেশের একজন যদি আরেক দেশের একই বিষয় নিয়ে খোচাখুচি করে, সেটা কতোটুকু শোভনীয়? কিছু মানুষ বিদ্বেষে এতোটা অন্ধ হয় কিভাবে? আর এতোটা কম আক্কেলেরই বা হয় কিভাবে? আমার বুঝে আসে না।
এই ব্লগেই আমরা ওপার বাংলার পদাতিক চৌধুরির মতো একজন অতি সজ্জন ব্লগার পেয়েছি। উনার মতো একজন সর্বজনপ্রিয় ব্লগারকে দেখে কি কিছুই শেখা যায় না? অবশ্য যাদের মনে সব সময়ে ''কি হনুরে'' ভাব খেলা করে, তারা শিখবেই বা কিভাবে? শেখার মানসিকতা গড়ে ওঠে একটা নির্দিষ্ট পরিমানের শিক্ষা থাকলে। সেই 'পরিমান' অর্জন করাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কোনটা রম্য আর কোনটা আমাদের দেশের প্রতি ভিনদেশী একজনের হিংসা উগরে দেয়া, সেটা বোঝা আমাদের অনেকের জন্যই জরুরী। যাই হোক, যাদের গায়ে পড়ে দাদাগিরি করার খায়েশ আছে তাদের বলছি,
Get a life. We don't give a shit of who you are and what you are!!!
পেট ভর্তি বিদ্বেষ নিয়ে ওইপাড়েই মোচড়াইতে থাকেন। সেটাই ভালো হবে।
ছবিসূত্র।