somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিলিং আউট ইন মরোক্কোঃ ওস্তাদের সাথে বহু-প্রত্যাশিত মোলাকাত!!!

২২ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পূর্বকথাঃ আপনাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে সেই ২০২২ এর সেপ্টেম্বর মাসে একটা পোষ্ট করেছিলাম মরোক্কোর তান্জিয়ারে যাওয়া নিয়ে.........বদ লোকের জন্য দোয়া করলে বদ-দোয়া হয়ে যায়!!! শিরোনামে। সেই ভ্রমনের আসল সচিত্র পোষ্টগুলো আর করা হয়ে উঠে নাই। কেন করি নাই, সেটা ব্যাখ্যা দিয়ে আপনাদের ত্যক্ত করতে চাই না; পুরানো কথা আবার নতুন করে বলতে হবে। কয়েকটা আধা-খেচরা পোষ্ট ড্রাফট করা ছিল। তার মধ্যে থেকে প্রথমটা ফাইনাল করেছিলাম গত জুলাইয়ের শুরুতে পোষ্ট করার জন্য। পরের ঘটনা তো আপনাদের সবারই জানা। দেশের সাথে সাথে আমার মন-মানসিকতারও পরিবর্তন হয়ে গেল। তো কিছুদিন আগে ভাবলাম, এটা যেহেতু একেবারে রেডিই হয়ে আছে, বরং পোষ্টটা করেই ফেলি। তান্জিয়ারে যাওয়ার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল সেটা আগেই বলেছি (লিঙ্ক দেয়া পোষ্ট দ্রষ্টব্য), সেই উদ্দেশ্যের সাথে বিধেয় এর একটা সামন্জস্যতা থাকা দরকার। কি বলেন?


আমার আব্বার বেড়ানোর শখ ছিল। ওনার ট্যুরের চাকুরী আর দেশে-বিদেশে বেড়ানোর শখ........দু'টা মিলে যাওয়ার কারনে উনি প্রচুর বেড়াতেন। আমিও সুযোগ পেলেই ওনার পিছু ধরতাম। ফলে, ঘুরে বেড়ানো আমার রক্তের মধ্যেই ছিল/আছে। ক্লাশ ফোর বা ফাইভে পড়ার সময় আব্বা একটা বই উপহার দিয়েছিলেন, বিশ্ব পর্যটক ইবনে বতুতার জীবন কাহিনী। সেটা পড়ার পরে আমার বেড়ানোর পালে প্রচুর হাওয়া লাগে। তখন থেকেই এই বিষয়ে আমি উনাকে আমার আইডল বা ওস্তাদ মানি। সেই বয়সেই ভেবেছিলাম, সময় সুযোগ যখনই আসবে দুনিয়াটাকে যতোটা সম্ভব ঘুরে দেখবো। আধুনিক যানবাহন ছাড়া সেই সময়ে কিভাবে উনি পৃথিবীর বিশাল একটা অঞ্চল ভ্রমন করেছিলেন, ভাবলেই এক্সাইটেড হয়ে যেতাম তখন, এখনও সমানভাবেই হই। উনার ডেডিকেশান দেখে আপ্লুত হই। ওস্তাদ সম্পর্কে পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত পড়ালেখা করার পর থেকেই ইচ্ছা ছিল ওনার জন্মভূমি দেখার, ওনার শেষ আশ্রয়স্থলে গিয়ে ওনাকে একটাবার সালাম দেয়ার। আমার এই অভিযান ছিল সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেয়ার ইচ্ছারই প্রতিফলন।

ইওরোপ থেকে উড়াল দিয়ে পড়ন্ত বিকালে আফ্রিকার তান্জিয়ারের ইবনে বতুতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে মনটা অন্যরকম আনন্দে ভরে গেল। আশা পূরণের আনন্দ। এয়ারপোর্টে থাকতেই বুঝেছিলাম এখানে ভাষাগত সমস্যা হবে। লোকাল লোকজনের স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, আরবী সবই চলে কিন্তু ইংরেজির অবস্থা কাহিল, আর আমার ইংরেজি বাদে বাকীগুলোর অবস্থা কাহিল........না, কাহিল বলা ঠিক না, একেবারেই বকলম অবস্থা!! যাকগে, এই সমস্যা আমার জন্য নতুন না, বিভিন্নভাবে ম্যানেজ হয়েই যায়। এয়ারপোর্ট শহর থেকে অনেকটাই বাইরে। ট্যাক্সিওয়ালার সাথে পার্থ প্রতিম মজুমদার প্রদত্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে হোটেলে পৌছলাম।



প্রাচীণ স্থাপত্যের এই হোটেলটা সিলেক্ট করেছিলাম এর এই চমৎকার প্রবেশদ্বার দেখেই।



চেক ইন করে রুমে ব্যাগটা রেখেই চলে গেলাম ঢিল ছোড়া দূরত্বে জিব্রাল্টার প্রণালীর ধারে। রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানেই কাটালাম নতুন পরিবেশে, নতুন দেশে তথা নতুন মহাদেশে খানিকটা ধাতস্থ হওয়ার আশায়!!! জিব্রাল্টার প্রণালীর ধারে নোনা জলের গন্ধমেশানো আধা-ব্যস্ত সড়ক আর জিব্রাল্টার প্রণালীর একাংশ। ওইপাড়ে স্পেন!!!




খুব টায়ার্ড ছিলাম, তারপরেও অনভ্যস্ত কানে ফজরের আজান শুনে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুমের ঘোরে ভাবছিলাম, আমি কি বাংলাদেশে? আজানের সূর কোথা থেকে ভেসে আসছে? মনটা কেমন যেন এক ভালোলাগায় ভরে উঠলো। উঠে পড়লাম বিছানা থেকে। সকালে নাস্তা করেই রওয়ানা দিলাম ওস্তাদের সাথে মোলাকাতের উদ্দেশ্যে। আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে বতুতা বা সংক্ষেপে ইবনে বতুতাকে সমাহিত করা হয় তান্জিয়ারের মেদিনা (শহরের পুরানো অংশ) অঞ্চলে। সুপ্রাচীন তান্জিয়ার শহরটার ততোধিক প্রাচীন মেদিনা অংশটা দেখার মতো। অত্যন্ত সরু সরু গলি, প্রাচীন স্থাপত্য আর ইসলামিক সংস্কৃতির ধারক-বাহক হলো এই মেদিনা। ওস্তাদকে যেখানে সমাহিত করা হয়, সেখানে যাওয়াটাও একটা চ্যালেন্জ। আকাবাকা, উচুনীচু সরু সরু গলি, তস্য গলি আর সিড়ি বেয়ে সেখানে পৌছাতে হয়। যাত্রাপথের কিছু নমুনা দেখাই,





মাজারে পৌছলাম অবশেষে,




অজুর স্থান, তবে কল নাই!!!!



মাজার বোঝার জন্য এই দু'টা ফলক লাগিয়েই কাজ সেরেছে কর্তৃপক্ষ।




মাজারের মূল দরজা।



আমার কপাল খারাপ, তাই সেই সময়ে মাজার সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ ছিল; ভিতরে যেতে পারি নাই। বাইরে দাড়িয়েই ওস্তাদকে সালাম দিয়ে মোনাজাত সারলাম। অত্যন্ত সাদাসিদা এই মহান পর্যটকের সমাধির ব্যবস্থাপনা। ইন ফ্যাক্ট, তেমন কোন ব্যবস্থাপনাই নাই। তবে বেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। কর্তৃপক্ষের ভাবে মনে হলো পর্যটকদের ব্যাপারে তাদের খুব একটা মাথাব্যথাও নাই। ''আইলে আসো, না আইলে অফ যাও'' টাইপ। দুঃখজনক। যার নামে শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয়েছে, এমন একজন বিশ্বখ্যাত পর্যটকের মাজারে অন্ততঃ একটু হলেও পর্যটকবান্ধব ব্যবস্থাপনা আশা করেছিলাম। এই মাজার যদি ইওরোপের কোন দেশে হতো, তাহলে এটা হতো নগর কর্তৃপক্ষের অন্যতম আয়ের উৎস। বেকুব কি আর গাছে ধরে? কাজকারবারে বোঝা যায়।

এখান থেকে চলে গেলাম ইবনে বতুতা মিউজিয়াম দেখতে। এটা কসবাহ মিউজিয়াম নামেই স্থানীয়ভাবে পরিচিত। ছোটখাটো, সুন্দর, ছিমছাম মিউজিয়াম। কোন ভিড়-ভাট্টা নাই। এটা অবশ্য এক্সপেক্টেডই ছিল। অথচ এই মহান পর্যটককে ব্র্যান্ডিং করে তান্জিয়ার শহরটা হতে পারতো পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। এদের অবস্থা অনেকটা আমাদেরই মতো, অনেকটা বললাম কারন আমাদের চেয়ে কিঞ্চিৎ ভালো!!!

মিউজিয়ামের প্রধান ফটক।



যাইহোক, ১০ দিরহাম দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলাম। এক পাউন্ডে ১২ দিরহাম রেইট পেয়েছিলাম, সেই হিসাবে খুবই সস্তা। ভিতরটা বেশ সুন্দর গ্যালারী করা। অডিও-ভিডিও ডিসপ্লেরও ব্যবস্থা আছে। সম্পূর্ণটা দেখে শেষ করতে খুব বেশী সময় লাগে না, তবে আগ্রহীদের জন্য বেশ আকর্ষনীয়। চলেন, ভিতরের কিছু ছবি দেখাই।

শুরুতেই ওনার ভ্রমনের একটা সংক্ষিপ্ত রুট।






ওস্তাদের ব্যবহৃত কিছু সরন্জামাদি।





সেইসময়ের সমুদ্রগামী জাহাজ।





ঘোড়া বা উটের উপরে স্থাপিত বসার আসন।



ভারতীয় অন্চলে ব্যবহৃত এই পাল্কি উনার বর্ণনা অনুযায়ী তৈরী করা হয়েছে।



মিউজিয়ামে আরো অনেক কিছু আছে........যেমন সেই সময়কার বিভিন্ন মুদ্রা, বিভিন্ন রাজ-দরবার থেকে উনাকে দেয়া বিভিন্ন সন্মাননাসহ প্রচুর দলিল-পত্র, পেইন্টিংস ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনিতেই অনেক ছবি দিয়েছি, আর ওসবের ছবি দিয়ে পোষ্ট লম্বা করার কোন মানে নাই। তাই ক্ষ্যান্ত দিলাম। স্বচক্ষে ওস্তাদের কর্মকান্ডের যাবতীয় বিষয়াদি দেখে মনের মধ্যে মাজারে ঢুকতে না পারার যেই অতৃপ্তি ছিল, সেখানে খানিকটা মলম লাগাতে পারায় মোটামুটি খুশীমনেই দিনটা শেষ করলাম।

দেখি পরের পর্ব কবে নাগাদ দিতে পারি। দোয়ার দরখাস্ত রইলো!!!! :)


শিরোনামে ওস্তাদের ভাস্কর্যের যেই ছবিটা দেখছেন সেটা মূল গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকে ডানে টিকেট কাউন্টার পার হয়ে ডানেই মিউজিয়ামের প্রবেশদ্বারের ঠিক উল্টাদিকে, অর্থাৎ বামদিকে স্থাপন করা হয়েছে। আর হ্যা, বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, ছবি সবগুলো আমার কমদামী মোবাইল আর ক্যামেরায় তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০৬
১৮টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×