somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

Amit biswas
কল্পনা দিয়ে সবকিছুর শুরু, কিন্তু শেষটা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়; তা হল ধর্ম, বিজ্ঞান, বাস্তবতা আর শেষেরটা হল যেখান থেকে শুরু হয়েছিল অর্থাৎ কল্পনা।nযার শুরুটা হয় কল্পনা দিয়ে আর শেষটাও হয় কল্পনাতে তাই আমার প্রিয়। কল্পনাতে বসবাস করতে চাই। কল্পনা বিলাস করতে চায়। আ

মস্তিষ্কের সরিসৃপ

১৭ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা বাঘ ছিল জংগলে। জংগলের পাশেই একটা গ্রাম। গ্রাম থেকে কেউ সেই জংগলে যেতে ভয় পেত কেননা বাঘটা সবাইকে কামড়ানোর ভয় দেখাত! কিন্তু কখনো গ্রামে এসে কাউকে কামড়াত না।
একদিন গ্রামের এক লোকের ছাগল হারানো গেল, জংগলের পাশে ছাগলের মাথা পড়ে থাকতে দেখল গ্রামের লোকজন। সবাই ভাবল, এই কাজ ঐ বাঘের। ছাগলটার মালিক বদি অনেক চেষ্টা করল গ্রামের মানুষকে মেনিপুলেট করতে যে, 'বাঘটাকে মারতে হবে! আজ ছাগ সন্তান খেয়েছে, আরেকদিন মানব শিশু খাবে। চল, পিটায়ে মেরে আসি।'
কিন্তু কেউই রাজী হল না। মোড়াল সবাইকে সাবধানে থাকতে বল্ল, রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থাও করল। অনেক দিন আর কোন ঘটনা ঘটল না। কিন্তু হারানো ছাগলের মালিক বদির চাপা রাগ গেল না। কত কষ্ট করেই না ছাগলটাকে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বড় করেছে। গ্রামের লোকের তো আর কিছু হয় নাই। কেউ ক্ষতিপূরণ ও ওকে দিবে না। সে প্রতিশোধ চায় শুধু এখন তাই। তাই সে সুযোগ বুঝে অন্যদের হাস- মুরগি চুরি করে অর্ধেক অংশ জংগলের আশে পাশে ফেলে আসত। সে যদি পারত একা গিয়েই বাঘটাকে হত্যা করত। কিন্তু তার সাহসে কুলাত না।
এরকম অনেক ঘটনা ঘটানোর পরেও যখন, গ্রামের লোকজন বাঘকে হত্যা করতে যেতে চাইল না, তখন সে একটা রিউমার রটানোর চেষ্টা করল যে, জংগলের উচু ঢিবিটক সোনার খনি। এতে অনেকের চোখ লোভে চক চক করে উঠলেও তখনো শিউর না হয়ায় কেউ যেতে চাইল না। কিন্তু মনোভাব তৈরি হল। একদিন বদি গ্রামের মদখোর মাতাল বাউলাকে মদ খাওয়ালো আর কিছু টাকা দিয়ে একটা অভিনয় করতে বল্ল। অভিনয়টা এমন যে, জংগলের কাছাকাছি পড়ে থাকবে, সবাই এলে বলবে, জংগলের ঐ ঊচূ ঢিভিটা আসলেই সোনার খনি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরদিন সকালে মানুষ ঘুম থেকে উঠার আগে, বাউলাকে জংগলের পাশে শুইয়ে রেখে, বদি লোকদের ডাকতে গেল। সবাই কে নিয়ে আসার পর, যখন তারা বাউলাকে উঠাতে গেল, দেখল বাউলা মারা গেছে, আর তার মুখ থেকে মদের বিচ্ছিরি গন্ধ বের হচ্ছে। সবাই ভাবল, অতিরিক্ত মদ খাবার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু গ্রামের কাছের মদের দোকানে তো তার কাছে মদ বেচা নিষিদ্ধ ছিল! আগে সে মদ খেয়ে কত বদ কাজ যে করেছে তার কোন ঠিক নায়। একবার তো এক মাগী নিয়ে এসে রাস্তায় সবার সামনে অপকর্ম করেছিল। এরপর থেকে গ্রাম থেকে পরোয়ানা জারি করে সেই দোকান থেকে তাকে মদ দিতে নিষেধ করা হয়েছিল! এবার সে কোত্তেকে নিল! এসব খালি চিন্তাই করল মানুষজন ও বলাবলি করল। তারপর চুপ হয়ে গেল। যাই হোক, আপদ বিদায় তো হল!
এদিকে বদি তো চুপ। 'শালার কি করতে আনলাম, আর কি হল' - মনে মনে ভাবছিল সে। এরমধ্যে ওর আরেকটা বুদ্ধি এল। বাড়ি চলে গেল সে। ৩য় বউ এর কৌটা থেকে ১ম বউ এর সোনার ভারি নেকলেস টা নিল, নিয়ে চলে গেল অনেক দূরে তার বন্ধুর সোনার দোকানে, গিয়ে সেটাকে গলিয়ে চ্যাপ্টা বলের আকৃতি দিতে বল্ল। সে যানে, বাউলাকে পোড়াতে অনেকটা সময় লাগবে। বাউলা হিন্দু, তাই তাকে তো পোড়ানো-ই হবে। আর পোড়ানোর যাবতীয় সব উপকরণ যোগাড় করতে ৫-৭ ঘন্টা লেগেই যাবে। ওর ফিরে যেতে ১ ঘন্টা আসতে লেগেছিল ১ ঘন্টা। কাজ শেষ করে ফিরে দেখল, বাউলার লাশ তার বাড়িতে নাম নেওয়া হয়েছে। বাড়ির লোক তার তেমন খোজ রাখত না। সারাদিন মদ খেয়ে কোথায় কোথায় যেত, কি কি করত- এসব জেনে রাখতে তাদের যেন বয়েই গেছিল।
তো এক ফাকে উঠানে লাশের কাছে গিয়ে, কান্নার ভান ধরে তার প্রায় যাওয়া পকেটে সেই বানিয়ে আনা চ্যপ্টা সোনার দলাটা ঢুকিয়ে দিল আর উঠার সময় ছেড়া পকেটটা ইচ্ছা করেই টান দিল, তাতে চ্যাপ্টা সোনার দলাটা বের হয়ে পড়ল। আর সেটা প্রথম দেখার ভান করে 'একি একি... আমরা ঠিকই শুনেছিলাম.... জংগলের উচু ঢিবিটা সোনার খনি।'
এতটুকু বলার পর গ্রামবাসীকে আর চিন্তা করতে হল না যে বাউলা ওখানে গেছিল মাতাল হয়ে ঢিবিতে ঢুকেছিল, সেখান থেকে সোনা কুডিয়ে আসার সময় ঐ বাঘটাকে দেখে দৌড়াতে দৌড়াতে হার্ট এটাক করে মারা গেছিল।
বদি বাউলার পরিবারকে বোঝাতে শুরু করল, বাউলার মৃত্যুর জন্যও দায়ী বাঘটাই,'নইলে বল, বাউলা কত মদ খেত, কোনদিন কি এমন হয়েছে?' চোখের পানি গরিয়ে গরিয়ে পড়ছিল তার। আহা! কত দরদ যেন!
সে গ্রামবাসীদের রাজী করিয়ে ফেল্ল, জংগলের টিলাটা দখল করার জন্য। কিন্তু প্রকৃত ইচ্ছা তো বাঘটাকে হত্যা করা। আর টিলার ওদিকে যেতে হলে বাঘটাকে হত্যা করতেই হবে।
সবাই লাঠি সোটা, জ্বলন্ত মশাল, ছুড়ি ইত্যাদি নিয়ে সেখানে গেল। এমনকি বাউলা'র পরিবার ও বাউলার লাশ চিতায় তোলা বাদ দিয়ে অন্যদের সাথে চল্ল। কিন্তু টিলার ওখানে তিনটা বিশাল অজগর সাপ বাস করত। গ্রাম বাসীর অনেকেই তাদের প্যাচানো কুন্ডলীর ফাদে পড়ল, আর বাকিরা পালাল। ফাদের মধ্যে বদিও আটকা পড়ল। কুন্ডলীর চাপে অন্য সবার সাথে তারও দম বন্ধ হবার অবস্থা হল। শ্বাস নিতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার অবস্থা হল। তারপর স্বপ্ন দেখল নাকি কি হল বুঝল না, দেখল, নাকি শুনল সেটাও বুঝল না, কিন্তু মনে হল কুন্ডলী করা অজগর সাপটাই তাকে এসব দেখাচ্ছে বা শুনাচ্ছে বা উপলব্ধ করাচ্ছে। বদি তার যৌবনে থাকতে এক বিশাল অজগর সাপকে লাঠির আঘাত হানতে হানতে হত্যা করেছিল। সে যে একা করেছিল তা না, অন্য অনেকেই ছিল, কিন্তু কারোরই সাপটাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল না, শুধু বদিই হত্যা করার জন্য সাপ্টাকে আঘাত করছিল তো করছিলই, যতক্ষণ না সাপটা না মারা গেছিল, ততিক্ষণ পর্যন্ত। মরার পরেও মনে হয়, অনেকবার প্রহার করেছিল। আর একটু দূরে, গাছের ডালে পাতার আড়ালে তিনটা বাচ্চা অজগর সাপ বড় সাপটাকে লাঠির আঘাতে আঘাতে মরতে দেখল। সেই বড় সাপটা ছিল তাদের মা।
এরপর সবকিছু সাদা হয়ে গেল, আর দেখল, তার ছাগলটাকে তিনজন বড় অজগর সাপই শেষ করেছিল খেয়ে।
এক ধরনের ভাইব্রেশন পেল বদি। চোখ খুল্ল, কালো কুচকুচে দুষ্ট চোখের চাহনী দেখল সে। হা করা মুখ তার গলা ছিড়ে নেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারো বলছি দেশে জঙ্গী নেই উহা ছিল আম্লিগ ও ভারতের তৈরী

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮


আওয়ামী নস্টালজিয়ায় যারা অন্তরের ভিতর পুলকিত বোধ করে তাদের কাছে বাংলাদেশ মানেই হলো জঙ্গী, অকার্যকর অথবা পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র। ৩৬ জুলাই পরবর্তী মহা-গণবিস্ফােরনকে কোনাভাবেই মানতে পারেনি তারা ভয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী-লীগের ছায়া দায়িত্ব নিয়ে তারেক জিয়া এখন দেশে

লিখেছেন অপলক , ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৬



সংবাদের টাইটেল অনেক কিছু বলে দেয়। ভেতরেটা না পড়লেও চলে। বস্তুত: এতদিন ধরে ভারতের গ্রীন সিগনাল পাচ্ছিলেন না, তাই তারেক জিয়া দেশে আসার সময় বারবার পিছাচ্ছিলেন। এখন চুক্তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×