আগের পর্ব
রাগে আমার গা কষকষ করছিল। আমি ভাবছিলাম, একবার উচিৎ শিক্ষা দিই। বিশেষ কিছু করতে হবে না। শুধু টাইটা ধরে যদি দু'দিকে সমান টান দিই, তাহলে এখুনি আধহাত জিব বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু আবার মনে হল, সুধার ভাবগতিক দেখে সুবিধের মনে হচ্ছে না। এখনো কোনদিকে ঢলবে ঠিক করতে পারেনি সুধা। ঠিক এ সময়ে সুধার কথামত রজতের সামনে বের হয়ে নিজের স্বরূপ প্রকাশ করলে, ফল ভাল না হয়ে মন্দও হতে পারে। তাছাড়া আমার কি মান-অভিমান নেই! মাত্র ক'দিন আগে, ভাল করতে গিয়ে কি নাজেহালই না হয়েছি। সুধা গয়ায় পিণ্ডি দেবে বলেছে! কী দরকার আমার পাঁচ ঝামেলায় থাকার। আমি ভূত, ভূতের মত থাকব। তুমি মানুষ, মানুষের মত। ভূতে-মানুষে তো আর পিরিত হয় না!
সুধা আদুরে গলায় ডাকল, এই শুনছ, তুমি একবার আসবে?
আমি অতি কষ্টে মুখ গোঁজ করে রইলাম।
সুধা আবার বলল, হাসো না একবার। তারপর আবার বলল, আচ্ছা, হাসতে ইচ্ছে না হয়, আমাদের কৌচটাকে একটু টেনে সরিয়ে দাও। তাহলে বুঝব তুমি এসেছ।
সুধার এই আদুরি আদুরি কথা, বায়না, আমার মনে সুরসুরি দিচ্ছিল। কিন্তু আমি শক্ত হয়ে, ঘাড় গোঁজ করে ঘুলঘুলি কামড়ে পড়ে রইলাম। আজ পাঁচ বছর বাদে সুধার মুখে এই ভাল কথা শুনছি। এত সহজে কি ভবী ভোলে! বেঁচে থাকতে ভাল কথা বললে, আর ঘুলঘুলিতে থাকতে হত না দেবু মিত্তিরকে।
সুধার রজতদা একটু দেখল। তারপর হাড় কাঁপিয়ে হেসে উঠল। আচ্ছা! মিলিটারিম্যানকে ভূত কেন, ভগবানও ভয় করে। তোর ভূত আর এসেছে, ভয়েই পালিয়েছে। আয়, কাছে আয় শোন।
রজতের লম্বা হাতটা সুধার কাঁধে এসে পড়ল। আমি সভয়ে চোখ বুজলাম। সতীত্ব রক্ষা স্ত্রীলোকের ধর্ম, ভূতের কর্ম নয়।
দিন তিনেক বাদে সুধা একেবারে সেজেগুজে নতুন বউ হয়ে এল। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি, আর অবাক হয়ে যাচ্ছি। কে বলবে মাত্র ছ'মাস আগে সুধার স্বামী মারা গিয়েছে! চীনে চুল বাঁধার দোকান থেকে চূড়ো করে চুল বেঁধেছে সুধা। গায়ে টকটকে লাল বেনারসী। মুখ কেমন যেন তেলতেলে লাগছিল। মঞ্জুর মত চোখে, ঠোঁটে, গালে মেক-আপ মেরেছে। সুধার শরীরটাও প্যাক-আপ করা, যৌবন ফেটে পড়ছিল। বাহবা, বাহ্! বেড়ে লাগছে সুধাকে। এমনটি তো আমি কোনদিন দেখিনি। এ যে দেখছি মঞ্জুর সেকেন্ড এডিশন!
রজত একরাশ ফুল নিয়ে ঘরে ঢুকল। আজ আদ্দির পাঞ্জাবি পরেছে রজত, কোঁচান ধুতি। পায়ে লপেটা। ফুলগুলো সুধার হাতে দিতে দিতে রজত বলল, এগুলো দিয়ে বিছানাটা সাজিয়ে নাও তুমি। আজ আমাদের ফুলশয্যা। তারপর এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল, ওটাকে ওখানে টাঙিয়ে রেখেছ কেন সুধা?
কোনটা? সুধা চোখ তুলল।
ওই যে, তোমার এক্স-হাসব্যান্ডের ছবি।
কোথায় রাখবো তবে?
জাহান্নামে! --আমার ছবিটা টান মেরে খুলে রজত পা দিয়ে টেবিলের তলায় ঢুকিয়ে দিল। তারপর বলল, তোমার আর আমার মাঝখানে ভূতপূর্ব কোন ব্যাপার থাকবে না সুধা। এখন থেকে তুমি আমার, আমি তোমার। দেবু মিত্তির বলে কেউ কোনদিন ছিল না, থাকতে পারে না, থাকবে না। দ্যাটস অল!
আরে শাবাস! কী আওয়াজ! দেবু মিত্তির ভক্কি হয়ে গেল! লোকটার এলেম আছে বলতে হবে। কী কম্যান্ডিং টোন! তুই তুই করে বলা কথাগুলোকে কি সুন্দর তুমিতে পালটে নিয়েছে।
আমি গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসলাম। ব্যাপার বুঝতে যেটুকু সময়, তারপর অ্যাকশনে নামতে হবে...
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



