আগের পর্ব
বাইরে কড়া নাড়ার শব্দ উঠল। হোটেল থেকে খানা এসেছে। রজত খাবার নিয়ে দরজা বন্ধ করল। তারপর টেবিলে সাজাতে সাজাতে বলল, তোমার হল? আই অ্যাম হাংরি।
আরে, কতরকমের খাবার আনিয়েছে রজত! চিকেন বিরিয়ানি, ফিসফ্রাই থেকে পুডিং পর্যন্ত। ফিসফ্রাই আমার বড় প্রিয় খাদ্য ছিল। একবার ব্রজেনদার মেয়ের বিয়েতে একুশখান ফ্রাই খেয়েছিলাম বলে সুধা আমাকে আদর করে "খুদে রাক্ষস" বলেছিল। আহা! সেই দিন কি আর আছে!
ফুল সাজিয়ে ঝকমকে চোখে সুধা এসে টেবিলে বসল। রজত পকেট থেকে চ্যাপ্টা একটা বোতল বার করে দুটো গ্লাস টেনে নিল। তারপর এক পেগ মাল ঢেলে নিট মেরে দিয়ে, আর আধ পেগ আন্দাজ লাইম মিশিয়ে সুধার দিকে এগিয়ে দিল।
বেশ জিন চালাচ্ছে দেখছি। না, ওদিকে আজ নজর দেবার সময় নেই। মাল খেলে আমি অল্পেই বেহেড হই। শালা আমার ছবিটাতে যে লাথি ঝেড়েছে, সেটা এখনও আমার পাঁজরায় বাজছে। এর শাস্তি দিতেই হবে। একবার ভাবলাম, এবার রণাঙ্গনে নামব নাকি। তারপর ভাবলাম, ধীরে, দেবু মিত্তির, ধীরে। আর একটু দেখা যাক।
সুধা গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল, মদ!
রজত সুধার কাঁধ বা হাতে জড়িয়ে নিল। ইয়েস, মাই সুইট গার্ল। আজ আমরা সেলিব্রেট করব। এতদিনে মনে হচ্ছে, আজ আমি একটা কাজের কাজ করেছি। এ রিয়েল পিস অব গুড ওয়ার্ক।
সুধা গ্লাস নাড়াতে নাড়াতে বলল, মদ যে খাই না।
রজত চোখ তুলল। খাও না, খাবে। আজকের জন্য অন্তত খাবে। লেট আস হ্যাভ ফান। ওয়াইন এণ্ড ওয়াইফ গোজ টুগেদার। নেশা না হলে কি প্রেম জমে?
রজত হা হা করে হেসে উঠল। সুধা নাক টিপে এক চুমুক দিয়ে বলল, তোমার এই ব্যাপারগুলো আর কিছুদিন পেছিয়ে দিলে হত না? অন্তত রেজিস্ট্রিটা হয়ে গেলে? ছিঃ! ছিঃ! বিয়ের আগে ফুলশয্যা, আমার ভাবতেই গা কেমন করছে।
রজত চোখ বড় বড় করল। কাটলেটে একটা কামড় দিতে দিতে বলল, কী বলছ তুমি সুধা! মা কালীকে সাক্ষী রেখে বিয়ে কি বিয়ে নয়! দেখ, পুরুত ডাকিয়ে তোমার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়েছি। ইটস এ রিয়েল ম্যারেজ।
সুধা বলল, ও তো সাতসিকের পুরুত। তাও ব্রাহ্মন কিনা কে জানে!
রজত আর এক পেগ ঢালল। তারপর বলল, ওসব নিয়ে মন খারাপ করতে নেই। আমার হাতে বেশি সময় নেই, কাজ অনেক। নোটিশ দেওয়া আছে, যখন ডাক আসবে, তখন সাক্ষীসাবুদ নিয়ে সই করে এলেই চলবে। ব্যাঙ্কে খবর দিয়েছি, কালই আমার অ্যাকাউন্টটা তোমার সঙ্গে জয়েন্ট করিয়ে নেব। ইনশিওরেন্স পলিসিতেও তোমাকে নমিনি করতে হবে।
সুধা বলল, ব্যাঙ্কে তোমার কত টাকা আছে?
তা লাখ দুয়েক হবে। ইনশিওরেন্সটাও লাখ টাকার।
সুধা অনেকটা যেন আশ্বস্ত হল। এক চামচ বিরিয়ানি তুলে মুখে দিল। রজত সুধার দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে আর বেশিদিন থাকা সম্ভব নয়, আমাকে দেরাদুন যেতেই হবে। যাবার আগে তোমার বাড়িটা বেচে দিয়ে যাব। এই বাড়ির টাকা আর তোমার সামান্য যা কিছু আছে তুমি জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে রাখতে পার। সুধার মুখের দিকে মিনিট খানেক তাকিয়ে দেখে রজত বলল, ইচ্ছে হলে নিজে আর একটা অ্যাকাউন্ট করতে পার।
এতক্ষণে আমার কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে উঠল। সুধার মামাতো ভাই সনৎ-ফনত বাজে কথা। কোথা থেকে খবরটা জোগাড় করে রজত এসেছে। ও একটা কন ম্যান। লোককে টুপি পরিয়ে কাজ হাসিল করে। ও সুধার সর্বনাশ করে ছাড়বে। সুধার দিকে তাকিয়ে আমার মায়া হচ্ছিল। আহা! বিয়ে করার কত শখ। ভূতের বউ হয়ে কার আর বাঁচতে সাধ হয়!
আমি খিকখিক করে হেসে উঠলাম...
শেষ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



