somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি পুরানা রম্য গল্প

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একবার এক গ্রামের এক পন্ডিত মশাইয়ের কাশির সাথে খুব ছোট পালকের মত কিছু একটা বের হয়ে এসেছিলো। এটা দেখে তো পন্ডিত মশাই খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। খুব ভয়ও পেয়ে গেলেন তিনি। না জানি এটা কোথা থেকে আর কেমন করে তার পেটের মধ্যে গিয়ে ঢুকলো? তিনি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন।

দুপুরে বাড়িতে গিয়ে খাবার দাবার খেয়ে পন্ডিত মশাই দুশ্চিন্তার সাগরে ডুবে ডুবে পাখির পালক খুঁজতে লাগলেন, ভাবতে লাগলেন আর কাহিনী উদ্ধারের চেষ্টায় পড়ে গেলেন।

তখন তার বিবিজান মানে তেনার গিন্নী সাহেবা তেনার এইরাম মনমরা মুখ দেইখা কিছুটা অবাক হইলেন। তার সোয়ামী সাধারনত এরকম হয়ে মনমরা থাকেন না। জিজ্ঞেস করলো,
"কি গো সোয়ামি, আপনের মুখটা আইজকা অমন হুকনা ত্যানার মত হুকাইয়া রইছে ক্যান? কি হইছে, মাথা ঘুরাইতেছে? আমি তেল মালিশ করে দিই!"

বিবিজানের কথা শুইনা ত্যানা বদনে পন্ডিত সাহেব বললেন,
"না গিন্নী, মাথা ধরে নাই। আইজ একখান খারাপ ঘটনা অই গেছে গিন্নী। এখনো পর্যন্ত কাউরে কিচ্ছু কই নাই। তোমারে কইলে তুমি কাউরে কইবা না তো?"

হস্ত কচলিত করতে করতে হকচকিত হইয়া গিন্নী সাহেবা বলিলেন,
"আস্তাগফিরুল্লাহ। আপনের ইস্তিরিরে আপনে অবিশ্বাস করেন? :'( সোয়ামির গোপন কথা কি কোন বউ কোনোদিন কাউরে কয়? আল্লার কিরা কইলাম আমি কাউরে কিচ্ছু কমু না।"

তারপরে সোয়ামি পন্ডিত তার গিন্নীকে এক নিঃশ্বাসে পালক সম্পর্কিত সমস্ত কাহিনী কইয়া তারপর এক মগ পানি ডগ ডগ শব্দে পান কইরা ইয়া বড় এক ঢেকুর দিয়া হাঁফ ছাড়িলেন।

গিন্নী পালকের কাহিনী শুইনা কয়েক পলক কি ভাইবা কইল, "ঠিকাছে, আমি কাউরে একথা কক্ষনো কমুনা।"

কিন্তু কাহিনী শুনার পর থেকে তো গিন্নী সাহেবের পেটের ভিত্রে মোচরামুচরি শুরু হইয়া গেছে। কথাটা কোনোমতেই তার পেটের মধ্যে হজম হইতেছে না। কাউরে না বললে যেন তার শান্তি নাই এরকম। হয়তোবা মেয়ে জাতির পেট বলে কথা.... (এইটা কিন্তু আমি মনে মনে বলছি)

সন্ধ্যায় গিন্নী গ্রামের পুকুর থেকে পানি আনতে গেল। আর সেখানে তার ছোটকালের সখী কাকুলির সাথে তার দেখা।
এবার পন্ডিতের গিন্নী আর কাকুলির ডায়লগ লাইভ শুনেন...

গিন্নীঃ কাকুলি, তুই হইলি আমার পরানের সঁই। আমি কি তোরে আমার পরাণের হগল কথা না কইয়া কখনো থাকবার পারি? ক...?

কাকুলিঃ ক্যান, কি হইছে কমলা বু...?

গিন্নীঃ কেমতে যে তোরে আমি কইতাম, হেইতেনে তো আমারে কিরকা দিয়া কাউরে কথাডা কইতে মানা কইরা দিছে।

কাকুলিঃ আরে কি কইবা তারাতারি কও তো। আর একটা দুইটা কিরকা ভাঙলে কিচ্ছু হয় না। আমি কত কিরকা ভাঙছি তার হিসাব নাই। তুমি নিশ্চিন্তে কইতে পারো...

অতঃপর পন্ডিত সাহেবের একমাত্র বউ গিন্নী সাহেবা কাকুলীকে ঘটনাটা গোপন রাখিবার শর্তে সবিস্তারে কাহিনী খানকি ছিলো তা বর্ননা করিলেন।

কাকুলি পুরা কাহিনী শুইনা কইল....,
"ঠিকেছে বু। আমি এই কথা জিন্দেগিতেও কাউরে কমু না। এমনকি কাক পক্ষীও আমার এই কথা কোনোদিন জানবার পারব না। বিশ্বাস না হইলে আমি মা কালির দিব্যি খাইলাম।"

দিন গিয়ে রাত হলো। রাত পেরিয়ে সকাল এলো। আর পন্ডিতমশাইর ঘুম ভাঙলো। কিন্তু বাইরে শোরগোল মনে হইলো তার। লোকজনের শোরগোলের আওয়াজ শুনে পন্ডিত মশাই ঘুম থেকে উঠে তার গিন্নীকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু তিনি গিন্নীর কোনো সাড়া শব্দ তিনি পাইলেন না। শোরগোল কেবল বাড়তে থাকলো॥


এবার এট্টু খেয়াল কইরেন...
গোপন কথাটা প্রথমে শুধু পন্ডিত মশাই জানত। পন্ডিত তার গিন্নীকে জানালেন, আর গিন্নী থেকে কাকুলী, কাকুলী থেকে শ্যামলী, শ্যামলী থেকে নিলুফা, নিলুফা থেকে হনুফা, হনুফা থেকে তার স্বামী মফিজ, মফিজ থেকে তার ভাই রমিজ, রমিজ থেকে জব্বর, জব্বর থেকে গ্রামের মাতব্বর, মাতব্বর থেকে তার বোন শালেকা,,,
আর এভাবেই হয়ে গেলো পুরা এলাকা।
তবে সবাই কিন্তু গোপন রাখার শর্তে কথাটা শুনেছিলো।

আর সর্বশেষে কথাটার লেজ গজাতে গজাতে গ্রামবাসী জানলো যে গতকাল দুপুর থেকে নাকি পন্ডিত মশাইয়ের মুখ দিয়ে নানান রঙ বেরঙের পাখি বেরুচ্ছে আর একের পর এক পাখি আকাশে নাকি উড়াল দিয়া দিয়া চলে যাচ্ছে। এরকম দৃশ্য দেখার জন্য এই কারণে সকাল সকাল পন্ডিতের বাড়িতে মানুষের এত শোরগোল ছিল।


[গল্পটা প্রধান না, গল্পের শিক্ষাটাই প্রধান]
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×