somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*** রিয়া, তুমি খুব খারাপ ***

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম বন্ধুঃ কিরে, আজ এতো চুপ কেন রে, কি চিন্তা করছিস তখন থেকে??

২য় বন্ধুঃ ওহহ, নারে, রিয়ার ব্যপারটা নিয়ে একটু চিন্তায় আছি ।

১ম বন্ধুঃ রিয়া??? কোন রিয়া বলতো?? আমাদের ক্লাসের ২য় বেঞ্চে বসে সবসময়, ফর্সা করে বেশ, ওই মেয়েটা??? নাকি পাশের ক্লাশের লম্বা করে চশমা পড়া…

২য় বন্ধুঃ আরে ধ্যাৎ, থামবি তুই?? এই রিয়া ওই রিয়া না, এটা অনেক অনেক ড্যাঞ্জারাস জিনিস।

১ম বন্ধুঃ কি বলিস?? কার কথা বলছিস, ঝেড়ে কাশ ।

২য় বন্ধুঃ কার না, বল, কিসের কথা। এটা কোন মানুষ না, এটা একটা ইসলামিক টার্ম। শরীয়ার দৃষ্টিতে রিয়া হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন আমল করার অভিনয় করা হয়, অথচ নিয়্যাত থাকে, অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জন করা। বুঝলি এবার??

১ম বন্ধুঃ ওওও, হুম, একটু একটু জানি এটা নিয়ে। তো এটা নিয়ে হঠাৎ এতো মাথা ব্যথা কেন??

২য় বন্ধুঃ মাথা ব্যথার যথেষ্ঠ কারন তো আছেই। তুই তো জানিস, সকল আমল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। আর রাসুল(সা) বলেন, তোমাদের জন্য যে বিষয়টিকে আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই, তা হচ্ছে ছোট শিরক বা রিয়া। আরেক হাদীসে রাসুল(সা) বলেন, তিনি তার অনুসারীদের জন্য দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রিয়ার ক্ষতিকেই বেশী ভয় করতেন।

১ম বন্ধুঃ মারাত্নক ব্যপার তো।

২য় বন্ধুঃ আরো শোন, আবু হুরায়রা(রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল(সা) বলেন, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ বিচারের জন্য যাকে প্রথম ডাকবেন, সে একজন ক্বারী(কুরান তিলাওয়াতকারী), তারপর ডাকবেন একজন শহীদকে, তারপর একজন দানশীলকে। এবং আল্লাহপাক তাদের তিনজনকেই মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে বলবেন, লোকে তোমাকে মস্ত বড় ক্বারী/ বীর/ দানশীল বলবে, তাই তুমি চেয়েছিলে বলে সেই আমল করেছ, আর তা তোমরা পৃথিবীতেই পেয়েছ। তারপর এরাই হবে আল্লাহর সৃষ্টি জীবের মধ্যে প্রথম জাহান্নামে প্রবেশকারী, যারা রিয়ার রোগে আক্রান্ত ছিল ।

১ম বন্ধুঃ ইয়া আল্লাহ্, এমন মানুষ তো আমাদের আশেপাশেই প্রচুর দেখি আমরা। কিন্তু রিয়ার কারনগুলো আসলে কি কি ??

২য় বন্ধুঃ রিয়ার কারনগুলো হচ্ছে প্রধানত- ১। প্রশংসার প্রতি ভালোবাসা ২। সমালোচনার ভয় ৩। পার্থিব মোহ ।

১ম বন্ধুঃ ঠিক বলছিস। ফেসবুকেও তো অনেককে দেখি, খালি ভাল ভাল ইসলামিক কথা বলে , নোট লেখে বিশাল বিশাল, শুধু মাত্র লাইক পাওয়ার আশায়, ফ্রেন্ডদের প্রশংসা পাবার আশায়, এটাও তো তাহলে রিয়া, তাই না??

২য় বন্ধুঃ ১০০% রিয়া। কোন সন্দেহ নাই। তবে যে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির থেকে কোনরূপ প্রশংসা না পাবার আশায় এইসব আমল করেও যদি প্রশংসা পেয়ে যায়, সেটা রিয়া হবে না। যেমন, রাসুল(সা) কে একবার প্রশ্ন করা হল, “সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কি অভিমত, যে নেক আমল করে ও লোকেরা তার প্রশংসা করে?? রাসুল(সা) বলেন, এতো মুমিন ব্যক্তির জন্য তাৎক্ষনিক সুসংবাদ”। কিন্তু সত্যিকারের ঈমানদারেরা এই ধরনের প্রশংসা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে, যেহেতু সে জানে, এর দ্বারা ভবিষ্যতে তার বিশুদ্ধ নিয়্যাত পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

১ম বন্ধুঃ বুঝলাম, তো এই রিয়া থেকে কিভাবে বাঁচা যায় তাহলে??

২য় বন্ধুঃ রিয়া থেকে বাঁচার উপায়গুলো হচ্ছে- ১। নিজের ইলম বৃদ্ধি করা ২। রিয়া থেকে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা ৩। নিজের ভাল আমলগুলো গোপন রাখা ৪। নিজের দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়া ৬। আল্লাহভীরু ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকা ।

১ম বন্ধুঃ আচ্ছা, কেউ যদি রিয়ার ভয়ে ভাল কাজ করাই বন্ধ করে দেয়, তাহলে কি হবে??

২য় বন্ধুঃ এটা দারুন প্রশ্ন করছিস একটা । এটা অনেকেরই হতে পারে আসলে। কিন্তু রিয়ার ভয়ে ভাল আমল ত্যাগ করা শয়তানের আরেকটি অভিনব কৌশল। শয়তান যখন রিয়ার মাধ্যমে আমাদের ভাল আমলগুলো ধ্বংস করতে পারে না, তখন সে অন্তরে মাত্রাতিরিক্ত রিয়ার ভয় সৃষ্টি করে ভাল আমল থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। ইবলিশ কি আর সাধে হইসে?? কত বুদ্ধি দেখ। বরং এক্ষেত্রে একজন মুসলিমের কর্তব্য হবে, ভাল আমল চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিয়্যাত বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাওয়া, যেন সেই আমল একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় আর রিয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া।

রিয়ার সবচেয়ে মারাত্নক দিক, কোন ব্যক্তি সহজে নিজের রিয়ার সমস্যা নির্ণয় করতে পারে না। রাসুল (সা) বলেন, “তোমরা রিয়াকে ভয় কর, কেননা তা পিপীলিকার পদ ধ্বনি অপেক্ষাও সূক্ষ্ণতর” । খুব অল্প সংখ্যক লোকই আল্লাহ্ তা’আলার রহমতে রিয়া থেকে বেঁচে থাকতে পারে।

তাই প্রত্যেক মুসলিমের/মুসলিমার উচিত, যখন সে কোন ভাল আমল করবে, নিজেকে বারবার প্রশ্ন করবে, “আমি এই কাজ কেন করছি?” সেখানে আল্লাহ্ ছাড়া বা আল্লাহ্সহ আর কারো অবস্থান থাকলে, দোয়া করতে হবে আল্লাহর কাছে, যেন অন্তর থেকে তিনি রিয়া নামের এই ভয়াবহ ব্যধি দূর করে, একনিষ্টভাবে শুধু আল্লাহর জন্য সৎ আমল করার তৌফিক দান করেন। আল্লাহপাক যেন আমাদের সবাইকে রিয়ামুক্ত বিশুদ্ধ আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।

১ম বন্ধুঃ আমীন।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×