১৯৩০ সাল। কংগ্রেস একটি আইন পাস করে আমেরিকার মদ নিষিদ্ধ করলো।এই ঘটনার পর প্রায় ৫ লক্ষ লোক জেলে বন্দী হলো, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় হলো এই আইন বাস্তবায়নের জন্য। হাজার হাজার লোক হত্যাকান্ডের শিকার হলো। কিন্তু, সেই মদ খাওয়া তো কমলোই না, উলটো মানুষ ঘরে ঘরে মদ বানানো শুরু করলো। প্রায় চার বছর এই দুর্বিষহ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমেরিকা বাধ্য হলো এই আইন বাতিল করতে।
ভেবে দেখুন, বিশ্বের তথাকথিত সুপার পাওয়ার, পরাক্রমশালী এক জাতি, আমেরিকা, তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করেও একটা আইন বাস্তবায়ন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিলো।
এবার ফিরে চলুন, ঠিক একই রকম আরেকটি অবস্থার দিকে, চৌদ্দশত বছর আগের ঘটনায়। আল্লাহপাক জিব্রাঈল ফেরেশতার মাধ্যমে নবীজী (সা) এর কাছে সুরা মায়েদার আয়াত নাজিল করলেন- “হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক তীরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।”
একটি মাত্র আয়াত, মাত্র একটি । আল্লাহপাকের দরবার থেকে আইন পাস করে নবীজীকে জানানো হলো। রাসুল (সা) তার সাহাবীদেরকে এই আয়াতটি পড়ে শোনালেন মাত্র। সাহাবারা এই হুকুম জানামাত্র সাথে সাথে মদীনার রাস্তায় বেড়িয়ে ঘোষনা দিতে লাগলেন,
--- “ইসলামে মদ খাওয়া এখন থেকে হারাম, এর কোন বৈধতা আর ইসলামে নেই।“
আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেন, “আমি তখন কয়েকজন সাহাবীকে মদ পরিবেশন করছিলাম। এই ঘোষনা শোনা মাত্র আমি হাত থেকে মদের জগ ছুঁড়ে ফেলে দিলাম, সাহাবারা হাত থেকে মদের পাত্র ফেলে দিল। যাদের মুখে মদ ছিল, তারা থুতু দিয়ে মদটুকু ফেলে দিলেন আর যারা গিলে ফেলেছিলেন, তারা বমি করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন মদটুকু বের করার জন্য”। বলা হয়ে থাকে, এর পর, মদীনার রাস্তায় মদের বন্যা বয়ে গিয়েছিল, মানুষ নিজেদের জমানো মদ এভাবে চিরতরে ধ্বংস করে দিল। আল্লাহ্ সুবহানু ওয়া তাআলার আইন বাস্তবায়ন হয়ে গেলো।
কোন পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, কংগ্রেস, জোর-জবরদস্তি বা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় ছাড়াই সাথে সাথে সবাই এই আইনকে মেনে নিল অন্তর থেকে।কিন্তু কেন???
কেন একই আইন চৌদ্দশত বছর আগের মদীনায় এত সহজেই কাজ করলো কিন্তু অত্যাধুনিক আমেরিকায় কিছুতেই কাজ করলো না?? পার্থক্যটা কোথায় ছিল দুটি সমাজের ???
পার্থক্যটা ছিল আল্লাহর প্রতি ঈমানের, তাকওয়ায় । সাহাবীরা আল্লাহর আইন মেনে চলার ব্যাপারে নিজেদের এভাবেই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। আল্লাহর দেয়া বিধানের ব্যাপারে তাঁদের মানসিকতাই ছিল, “শুনলাম আর মানলাম”, সুবহানাল্লাহ !!! একজন সত্যিকারের মুসলিমের এই রকম ঈমানই থাকতে হবে সব সময়।
----- আল্লাহপাক আমাদের সবার অন্তরেও যেন আল্লাহর দেয়া বিধানের ব্যাপারে রাসুল (সা) ও তাঁর জান্নাতী সাহাবীদের মত ““শুনলাম আর মানলাম” মানসিকতা তৈরী করে দেন, যাতে আমরাও কল্যানপ্রাপ্ত হই, এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ও চিরস্থায়ী আখিরাতের জীবনে, আমীন।