ছবি: নিজের তোলা
" কিছু অনুভূতি পাল্টে দেয় মানুষের জীবন ; বদলে দেয় দৃষ্টিভঙ্গি ; পরিবর্তন করে দেয় মানুষের আচরণ। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাই অনুভূতির জাগরণ ঘটায় না, কিছু অনুভূতি মূল্যায়ন হতেও আসে। যা বিশুদ্ধ করে আমাদের আত্নাকে এবং মজবুত করে ঈমান।
তাই এমনি একটি গল্প নিয়ে আবারো চলে এলাম।"
| প্রথম অংশ |
বাবা-মায়ের ছোট সন্তান তিথী। বাবা-মা ও ভাই- বোনের অত্যন্ত আদরের সহজ-সরল ও শান্তিপ্রিয় স্বভাবের একটি মেয়ে। যেমন আল্লাহভীরু ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী তেমনি সাহসী একটি মেয়ে। বিপদে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্য্য রাখতে জানে তিথী। যেকোন সমস্যা মোকাবেলা করা এবং ব্যর্থতায় শিক্ষা অর্জন করা তিথীর একটি ভালো গুন। সময় পেলেই পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে তিথী। বাবা-মা, ভাই-বোনের সাথে গল্প-আড্ডা-বেড়াতে যাওয়া এভাবেই ভালো সময়গুলো কাটায় তিথী।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরিক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে তিথী। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও প্রবেশিকা পরীক্ষার অকৃতকার্য হওয়াটা মেনে নিতে পারছিল না তিথী। এই ব্যর্থতার ফলে এক ধাপ পিছিয়ে যায় তার স্বপ্ন এবং ছুটে যায় কিছু পুরোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্ত ব্যর্থতায় গভীরভাবে বিষণ্নতায় ডুবে যায় তিথী। আগেই বলেছি বিপদে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে তিথী। তাই বিষণ্নতার দিনগুলোতে বাবা-মায়ের সাথে বেশি সময় কাটাতে শুরু করে তিথী। কেননা, মন ভালো করতে বাবা-মায়ের চেয়ে ভালো বন্ধু আর কেউ হতে পারে না। কিছু বলার না থাকলেও নিরবে তাদের পাশে বসেও মনের উপশম খুজে পাওয়া যায়। পরিবারের প্রতি এই অকৃত্রিম ভালোবাসাই অকুল -পাথরেও তিথীর শক্ত খুটি।
বিষন্নতার এমন ই এক দিনে তাই মন ভালো করতে বাবা-মায়ের সাথে বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা ঠিক হয়ে গেল। রাতে সকল প্রস্তুতি শেষ করেই ঘুমিয়ে পড়ল তিথী। সকালেই বেরুবে তারা। ঘুম থেকে উঠে অন্যমনস্কভাবে তৈরী হয়ে গেল তিথী। কোথায় যাবে কিছুই জানে না সে। অবশ্য জানার আগ্রহটাও ছিলো না। যন্ত্রচালিত রোবটের মতো শুধু বাবা-মাকে অনুসরণ করে যাচ্ছে সে।
শহর ছেড়ে খানিকটা দুরে প্রায় দুই ঘন্টার ভ্রমণের পর একটি অপরিচিত স্থানে এসে তিথীদের গাড়ি থামলো। স্থানটি একটি ভগ্নাবশেষ নিদর্শন। তিথীর মন ভালো করতে এর চেয়ে বিশেষ স্থান হতে পারে না তাই বাবা-মা বেশ উৎসুক। বাবার হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করল তিথী। স্থানটির আকর্ষণীয়তার কারণে অনেক দুর-দুরান্ত থেকেও পর্যটকরা ছুটে আসে। কিছুক্ষণ ঘুরে দেখার পর অপরিচিত সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সাথে পরিচয় হয় তিথীর । নতুন কিছু বন্ধুবান্ধব জুটে গেল তার। স্থানটির পরিদর্শনে দুর-দুরান্ত হতে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে অনেক রকম সুব্যবস্থাও রয়েছে।
মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নানারকম শিল্পকর্মের প্রদর্শনীসহ প্রায় জমজমাট উৎসবমুখর একটি পরিবেশ। শুধু তাই নয় ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য একটি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনও করা হল সেখানে। আল্লহভীরু তিথী মনের প্রশান্তির জন্য বাবা-মায়ের সাথে সেই মাহফিলে যোগদান করে। অনেক ধর্ম প্রাণ মানুষের ভীড়েও হঠাৎ কিছু আত্মীয়কে পেয়ে গেল তিথী। নানু, খালা, খালাতো ভাইবোন এবং মামা-মামী। হঠাৎ করেই এমন পরম আত্মীয়দের সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় খানিকটা স্বতি বোধ করল তিথী। ক্যারিয়ার গঠনের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ আপনজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। তাই অনেক দিন পর তাদের দেখতে পেয়ে এক অজানা আনন্দ কাজ করল তার মনে।
মাহফিল শেষে খালাতো ভাইবোনদের সাথে অস্থায়ী মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল তিথী। গল্প-আড্ডায় অনেকটাই হালকা লাগছিল মন। সকল বিষন্নতা যেন মুহুর্তেই কেটে গেল। কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ ছোটবেলার কিছু পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। অনেক বছর পর দেখা! প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যপার! ছোট বেলার সেই কাছের বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও দীর্ঘদিন যোগাযোগ হয়নি, তাই আজ এমন অপ্রত্যাশিত সাক্ষাতে আনন্দে মনটা ভরে গেল।
একমুহূর্তে তিথীর মনে হল এ বিষন্নতায় ভালোই হল একপ্রকার। কেননা, বিষন্নতায় না ভুগলে এখানে আসা হত না এবং অপ্রত্যাশিতভাবে এতগুলো মানুষের সাথেও দেখা হতো না। অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল যেন আজকের দিনটি বিশেষ।
এ এক অদ্ভুত ভ্রমণ! এখানে কিছু মানুষ সদ্য পরিচিত, কিছু চিরপরিচিত, কিছু মানুষের সাথে জুড়ে আছে সুখময় শৈশবের স্মৃতি, তো কিছু মানুষের সাথে অতীত-বর্তমান এবং সুখ-দুঃখের সকল দিন। একদিনেই এতসব মানুষের সঙ্গে দেখা এবং এতসব অনুভূতির জাগরণ অবাক লাগলেও সত্যি ছিল, এক অজানা আনন্দময় সত্যি! বিষণ্নতার ভাবনা গুলো ভুলে যেন চির-পরিচিত মানুষ গুলোর ভীড়েই আনন্দে হারিয়ে গেল তিথী।
সাফল্যে ভরা একাকিত্বের জীবনের চেয়ে আপনজনদের নিয়ে সাধারণ জীবনযাপনটাও এক বিশাল অর্জন। আরও সহজ করে বললে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক সফলতাই প্রকৃত সফলতা নয় বরং আপনজনদের সাথে সন্তুষ্টিপূর্ণ সাধারণ জীবনটাই প্রকৃত সাফল্য অর্জন। সেই দুর্লভ সাফল্যতাই যেন তিথী অনুভব করতে লাগল।
.........................................
......................................
......................
ধন্যবাদ।
[ বিঃ দ্রঃ পরবর্তী অংশ শীঘ্রই পোস্ট করা হবে। ]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:২২