somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই শিকড় সন্ধানী- বাসদেও পান্ডে এবং নিমাই ভট্টাচার্য্য এর গল্প।

২৪ শে আগস্ট, ২০১২ ভোর ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাসদেও পান্ডে এবং নিমাই ভট্টাচার্য্য দুজনে পৃথিবীর দুই মেরুর বাসিন্দা। এই দুই ব্যাক্তি একে অপরকে কোনদিন দেখেননি, তবুও তাদের মধ্যে অদ্ভুত মিল। নিমাই ভট্টাচার্য্যের নাম শিক্ষিত বাঙ্গালী সবাই কম বেশী জানেন। তার লেখা “মেমসাহেব” উপন্যাস অনেকেই পড়েছেন। বাসদেও পান্ডের নাম খুব কম বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী জানেন। তাদের দুজনের মধ্যে যে মিল আমি খুজে পেয়েছিলাম সেই কথা বলতেই আজ আমার কলম ধরা। এখন আগের লেখকদের মত লিখতে কলম ধরতে হয় না। কম্পিউটারে লিখে সরাসরি প্রকাশ করে দিলেই হল। কাগজ কলমের বালাই নেই, প্রকাশকের বালাই নেই , তবুও লিখতে বসাকে কলম ধরা হিসেবে চালিয়ে দেওয়া।

দু জনের মধ্যে কি মিল আমি পেয়েছি তা জানতে হলে আপনাদের সবাইকে কিন্তু বাকীটা পড়তে হবে।
প্রথম নিমাই ভট্টাচার্য্য দিয়ে শুরু করি। দিন তারিখ ভুলে গেছি , তবে সেটা ছিল প্রেসিডেন্ট এরশাদের শাসনামল, সম্ভবত ১৯৮৬/৮৭ সালে হবে। হরিনাকুন্ডু উপজেলায় মেডিকেল অফিসারের চাকরী করি। ছুটিতে নড়াইলের বাড়ীতে আসি ২/৩ সপ্তাহ পর পর। সেবার ছুটিতে বাড়ী এসে আত্মীয়ের পীড়াপিড়িতে বেড়াতে গেলাম তাদের গ্রামের বাড়ী শরুশুনায়। শরুশুনা গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। একপারে হাট বাজার আর অপর পারে গ্রামের স্কুল। সেদিন ছিল হাটের দিন। বিকেলে হাটে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বাশের সাঁকো পার হয়ে অপর পারের স্কুলে গিয়ে পৌছলাম।পুরোনো স্কুলের মেরামত কাজ চলছে। অনেক বছরের পুরোনো স্কুল বাড়ী নতুন করে যৌবন ফিরে পাচ্ছে দেখে ভাল লাগল। সেদিন রাতে খেতে বসে স্কুলের এই নতুন রুপ ফিরে পাওয়ার কাহিনী শুনলাম পরিমলদার কাছে। প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক নিমাই ভট্টাচার্য্যের পূর্ব পুরুষের বাড়ী ছিল এই গ্রামে। মাস খানেক আগে লেখক এসেছিলেন তার পিতৃপুরুষের ভিটে দেখতে। কোলকাতায় ফেরার পথে ঢাকায় এসে দেখা করলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল এরশাদের সাথে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ সবিনয়ে লেখকের কাছে জানতে চাইলেন – আপনার জন্য আমি কি কিছু করতে পারি? লেখকের নিজের জন্য কিছুই চাওয়ার ছিল না। শুধু বললেন “ গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে আমাদের স্কুলের ভাঙ্গা দালান দেখে খারাপ লাগল” আর বেশী বলতে হল না লেখককে। তাকে বসিয়ে রেখেই প্রসিডেন্ট টেলিফোনে নির্দেশ দিলেন স্কুল মেরামতের জন্য ১০ লক্ষ টাকা অনুদানের । ১ সপ্তাহের মধ্যেই টাকা পৌছেছিল স্কুল কতৃপক্ষের হাতে আর তাতেই স্কুল ভবন ফিরে পাচ্ছিল নতুন রূপ।


এখন আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি বাসদেও পান্ডেকে । তিনি ছিলেন ত্রিনিদাদ এবং টোব্যাগো রাস্ট্রের ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। বাসদেও পান্ডে নাম শুনে ধারনা করা স্বাভাবিক যে তিনি ভারতীয় কেউ হবেন। তিনি ভারতীয় ছিলেন না, তবে তার পূর্বপুরুষ সেই ১৮৪৫ সালে বৃটিশদের দাস হিসেবে এসেছিলেন ত্রিনিদাদে। ৬০ এর দশকে বৃটিশরা ত্রিনিদাদ ছেড়ে চলে যায়। ১৯৯৫ সালে স্বাধীন দেশ ত্রিনিদাদের ৬ষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হন বাসদেও। ত্রিনিদাদ দেশ সম্পর্কে যাদের ধারনা নেই তাদেরকে জানিয়ে রাখি যে কফি, কোকো এবং আখের চাষ করতে বৃটিশরা আফ্রিকা থেকে এবং ভারত থেকে দাস হিসেবে নিয়ে এসেছিল এখনকার ত্রিনিদাদের বাসিন্দার পূর্বপূরুষদের। এখন সে দেশে ভারতীয় এবং আফ্রিকীয় বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা প্রায় সমান সমান। তাদের ভাষা ইংরাজী।

২০০৫/০৬ সালে, তখন আমি ত্রিনিদাদে। ব্রাদার রামা ছিলেন আমাদের প্রতিবেশী । ব্রাদার রামার সাথে একদিন গিয়ে হাজির হলাম এক হিন্দি গানের আসরে। গায়ক ছিলেন সুখরাম পান্ডে। ৭০ এর কোঠায় পা রেখেছেন সুখরাম। ভারত থেকে ২০ হাজার কিলোমিটার দুরেও ভদ্রলোকের হিন্দী গান শুনে অবাক হলাম। গান শেষে পরিচিত হলাম তার সাথে।কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন যে প্রায় ৫০ বছর ধরে হিন্দীগানের চর্চা করে চলেছেন তিনি । ভদ্রলোক বলছিলেন তার পূর্ব পুরুষদের কথা। এক ফাকে তাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি তার পূর্বপুরুষের দেশ ভারতে কখনো এসেছেন কিনা?
সুখরাম জানালেন তার ভারত ভ্রমনের অভিজ্ঞতা। প্রধানমন্ত্রী বাসদেও , গায়ক সুখরামের ছোট ভাই। প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে ১৯৯৬/৯৭ সালে বাসদেও রাস্ট্রীয় সফরে ভারত আসছেন শুনে তিনিও সফর সঙ্গী হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনিও গিয়েছিলেন তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটে দেখতে অন্ধ্র প্রদেশের গ্রামে। পাকা রাস্তা ছেড়ে শেষ ৫/৬ কিলোমিটার যেতে হয়েছিল পায়ে হেটে, কোন উপায় ছিল না। পূর্ব পুরুষের গ্রামে যখন তারা পৌছলেন তখন ছিল দুপুর বেলা। আত্মীয় স্বজন যাদেরকে পেলেন তারা তখন খেতে বসেছেন। দোভাষীর মাধ্যমে আলাপ করলেন তাদের সাথে। একটা মাত্র টিনের বাড়ী এখন তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটেয়। সে বাড়ীতে ৩টে ঘর। এক ঘরে থাকেন দুখীরাম পান্ডে, তার স্ত্রী, মা, বাবা এবং ২ সন্তান। আরেকটা ঘর হল তাদের বসার এবং খাওয়ার ঘর এবং একই বাড়ীর অন্য ঘর হল গরু রাখার গোয়াল ঘর। পাশে আলাদা ছোট রান্না ঘর। ২/৩ ঘন্টা সে গ্রামে থেকে তারা ফিরে এসেছিলেন দিল্লিতে। প্রধানমন্ত্রী বাসদেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে ১০ লক্ষ ডলারের চেক দিয়ে এসেছিলেন তাদের পূর্বপুরুষের গ্রামের রাস্তাটা পাকা করে দেওয়ার জন্য।

প্রধানমন্ত্রী বাসদেও পান্ডের ইচ্ছে কতটা পূরন হয়েছিল আমি জানি না, তবে লেখক নিমাই ভট্টাচার্য্যের ইচ্ছে পুরন হতে আমি স্বচক্ষে দেখেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:২০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×