somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিয়ে যাওয়া এক মাউসের কাহিনি

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর অ্যাসপেন শহরের মাটির নিচে হারিয়ে গিয়েছিল প্রযুক্তির ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ। অবশেষে অনুসন্ধানকারীরা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন অ্যাপলের তৈরি সেই অমূল্য সম্পদ ‘লিজা মাউস’।
তিন দশক ধরে মাটির নিচে গোপনে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল অ্যাপলের তৈরি লিজা কম্পিউটারের এই মাউস। ১৯৮৩ সালে অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস এক সম্মেলনে এই মাউসটি দেখিয়েছিলেন। এটি অ্যাপলের তৈরি প্রথম মাউস। কাঠ খোদাই করে তৈরি এই মাউসের নিচে মোশন ট্র্যাক করার জন্য দুটি চাকা রয়েছে।
১৯৭৯ সালে প্রথম যখন অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস বিজনেস কম্পিউটার বাজারে আনার কথা ভাবতে শুরু করেন তখন তিনি জেরক্স পার্ক রিসার্চ সেন্টারে যান এবং সেখানে যেসব প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা চলছিল তা পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানেই কাজ চলছিল ডগলাস এঙ্গেলবার্টের তৈরি প্রথম মাউসটি নিয়ে।
১৯৬৩ সালে কম্পিউটারের জন্য বিশ্বের প্রথম মাউসটি তৈরি করেন এঙ্গেলবার্ট। স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এটি তৈরি করেন তিনি। এ হার্ডওয়্যারটিকে ব্যবহারের সুবিধার্থে ‘ইঁদুর’ আকৃতি দেওয়া হয়েছিল। তাই এর নামও হয়ে যায় ‘মাউস’। এটি একটি ইনপুট ডিভাইস, , এর মাধ্যমে প্রোগ্রাম কমান্ড দেওয়া যায়। মাউসের ফলে কম্পিউটারের গ্রাফিকস ইউজার ইন্টারফেস বা অপারেটিং সিস্টেম জনপ্রিয় হয়। স্ট্যানফোর্ডে গবেষণার সময় মাউস আবিষ্কার করায় এর পেটেন্ট যায় স্ট্যানফোর্ডের নামে। তাই মাউস আবিষ্কারের পেটেন্ট থেকে কোনো অর্থ পাননি এঙ্গেলবার্ট।

মাউস আবিষ্কারের পর স্ট্যানফোর্ডের গবেষকেরা একে ‘বাগ’ নামে ডাকতে শুরু করেন। তবে মাউসের সঙ্গে ইঁদুরের লেজের মতো তার যুক্ত থাকায় এর নাম ‘মাউস’ রাখেন এঙ্গেলবার্ট। তাঁর দেওয়া নামটিই জনপ্রিয় হয়। এঙ্গেলবার্টের মাউসটির আকার আজকের পরিচিত মাউসের মতো ছিল না, বরং এটি তৈরি করা হয়েছিল একটি বাক্সের মধ্যে। মাউস নাড়াচড়া করার মতো বিশেষ চাকা ছিল বাক্সে। আকারে এটি ছিল বর্তমান মাউসগুলোর তুলনায় বেশ খানিকটা বড়। এ মাউসটি তৈরি করতে পুরোনো টিন ব্যবহার করা হয়েছিল।এই লিজা মাউসটি হারিয়ে গিয়েছিল
সত্তরের দশকে জেরক্সের কম্পিউটারে মাউসের ব্যবহার শুরু হয়। এক সাক্ষাত্কারে অ্যাঙ্গেলবার্ট জানিয়েছিলেন, ‘আমার তৈরি মাউসটি পেটেন্ট করানোর সময় এর মূল্য বোঝা যায়নি। পরে অ্যাপল যখন এর পেটেন্ট করে তখন এর মূল্য বোঝা যায়। অ্যাপল মাউস দেখে এত বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছিল যে পুরো নকশা বদলে দিয়েছিল।’

সে সময় জেরক্স মাউসের খরচ ছিল বেশি আর তা ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ব্যবহার উপযোগীও ছিল না। তখনই স্টিভ জবস মাউসের নকশা নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং মাউস তৈরির খরচও কমিয়ে আনেন এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি করেন। ১৯৮৩ সালে অ্যাপল লিজা কম্পিউটার বাজারে আনার সময় তার সঙ্গে যে মাউসটির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তা মাউসকে আমূল বদলে দিয়েছিল।

১৯৮৩ সালে অ্যাসপেন ইন্টারন্যাশনাল ডিজাইন কনফারেন্স নামের সম্মেলনে প্রযুক্তি জগতের ভবিষ্যত্দ্রষ্টা স্টিভ জবস আইপ্যাড, ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং অ্যাপ স্টোরের মতো বিষয়গুলো এই লিজা মাউসের সাহায্যে দেখিয়েছিলেন। পরে ‘অ্যাসপেন টাইম টিউব’ নামের একটি ক্যাপসুলে করে এই মাউসটিসহ আরও বেশ কিছু জিনিস অ্যাসপেন শহরের কোথাও মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিল সম্মেলনের আয়োজকেরা। পরে এই গোপন টাইম টিউবটি ‘স্টিভ জবস টাইম ক্যাপসুল’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু এই টাইম ক্যাপসুলটি কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছিল সে স্থানটির কথা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলেন তাঁরা।

২০০০ সালে আয়োজকেরা স্টিভ জবসের টাইম ক্যাপসুলটি মাটির নিচে থেকে তুলে আনার কথা চিন্তা করলেও তাঁরা সেটি খুঁজে পাননি। এরপর গত ১৪ বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া এই ক্যাপসুলটির খোঁজ চলেছে।

প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেট এক খবরে জানিয়েছে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের ‘ডিগার্স’ প্রোগ্রামের কর্মীরা গত বছরের সেপ্টেম্বরে অ্যাসপেন মিউজিক্যাল ফেস্টিভাল অ্যান্ড স্কুলের মাঠে এই ক্যাপসুলটি উদ্ধার করেছেন। এই টাইম ক্যাপসুলে অ্যাপলের লিজা মাউসটি ছাড়াও ব্যালান্টিন বিয়ারের ক্যান, মুডি ব্লু টেপ, রুবিক কিউবের মতো বেশ কিছু জিনিস প্লাস্টিক ব্যাগে সংরক্ষিত ছিল। সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল স্টিভ জবসের টাইম ক্যাপসুল উদ্ধারের ভিডিওচিত্রটির মাধ্যমে ‘ডিগার্স’ শো উদ্বোধন করতে যাচ্ছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি এই শোটি সম্প্রচার করতে পারে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×