বাংলাদেশের পিছনের ইতিহাস যেমন নির্মম আর অত্যাচারের ঠিক তেমনি তা অনুপ্রেরনাদায়ক। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতি দখল করেছে এই ভূখণ্ড , শাষনের নামে শোষণ করেছে । একসময় এদেশের মানুষ প্রতিবাদ করেছে , যুদ্ধ করে তাদের বিদায় করেছে। মারাঠা , বর্গি , ডাচ, ফরাসি, ইংরেজ সবশেষে ছিলো পাকিস্তানিরা । ১৯৭১ এ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে তাদের পরাজিত করে আমরা অর্জন করি আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। এই যুদ্ধ শুরু হয় মার্চ মাসে, তাই ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস।আর তা বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর। তাই ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।
দেখা যায় মার্চ আর ডিসেম্বর মাস আসলেই আমাদের দেশপ্রেম যেন হু হু করে বেড়ে যায় । এই সময়ে বেড়ে যায় পঙ্গু আর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ নেয়া। সারাদেশের বিরঙ্গনাদের এই মাসে টিভিতে খুব দেখা যায়। তাদের সাক্ষাৎকার, অতীত স্মৃতি এসব খুব করে প্রচার করে থাকে আমাদের মিডিয়াগুলো। বাদ যায়না তাদের নিজের খাবার তৈরি করা থেকে তাদের গরু ছাগলের খাবার পরিবেশনের দৃশ্য। তাদের ভাঙ্গা ঘরে হটাত বেড়ে যায় সাংবাদিকের ভীড় । হটাত করেই তারা মিডিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মানুষে পরিনত হয়ে যান।
এই দুইমাস আসলে মনে হয় আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধাদের আর বিরঙ্গনাদের অনেক সম্মান আর মর্যাদা দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন । এইভাবে যখন দিন গুনে গুনে ৩১ ডিসেম্বর চলে আসবে , তখন এই মিডিয়া আর এই সাংবাদিকরা ব্যস্ত হয়ে যাবে Thirty First Night উৎযাপনের সংবাদ নিয়ে । কোন হোটেল কত বড় আয়োজন করলো , কোথায় কত বেশি টাকা টিকেট দিয়ে পার্টিতে অংশ নিয়েছে মানুষ – এইসব সংবাদ ব্যাপক আকারে এই মিডিয়াগুলোই প্রচার করবে। ঠিক তার একদিন পর তারা আবার মেতে উঠবে ইংরেজি নববর্ষের সংবাদ নিয়ে । সেই সময় তারা ভুলেই যাবে তারা বাঙালি বা বাংলাদেশি ।
এই দুই মাসেই শুধু মুক্তিযুদ্ধাদের আর বিরঙ্গনাদের নিয়ে মিডিয়ার অতি বেশি প্রচারনা কোনভাবেই তাদের সম্মান দেখানো হতে পারেনা। এটা মনে হয় তাদের প্রতি অনুকম্পা দেখানো।
মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের স্বার্থেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মিডিয়ার এই বেশ্যাবৃত্তি বন্ধ হওয়া দরকার।