ময়লার গাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় মেয়েরা নাক মুখ ওড়না দিয়ে ঢেকে ফেলে , ছেলেরাও নাক মুখ ঢেকে ফেলে না হলে দম বন্ধ করে দ্রুত চলে যায়। আর যদি দেখে কোন টোকাই কোন ময়লা আবর্জনার স্তূপ ঘেঁটে কিছু খোজার চেষ্টা করছে , তবে তাকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গালি একটা দিবেই। কারন ময়লা ঘাঁটলে দুর্গন্ধ বেশি বেড়োয় ।
১৯৭১ । কথা ছিলো ক্ষমতার পালাবদল হবে। কেউ ক্ষমতা থেকে সরে যাবে কেউ নতুন করে ক্ষমতায় গিয়ে শাসন করবে । কিন্তু মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট হলো ক্ষমতা একবার পেলে আর ছাড়তে চায় না। মিঃ ভুট্টোও ছাড়তে চাইলেন না । বিভিন্নভাবে আলাপ-আলোচনা হলো , কিন্তু শেষপর্যন্ত সমাধান হলো না । যুদ্ধ লেগেই গেলো । জন্ম হলো স্বাধীন বাংলাদেশের । বাংলার মানুষ পেলো স্বাধীন একটা পতাকা । আর যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলার মানুষ হয়ে যায় তিনভাগে বিভক্ত । স্বাধীনতা জন্য সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেয় একপক্ষ , অপরপক্ষ যুদ্ধ ব্যতিরেখে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায় , তৃতীয়পক্ষ পাকিস্তান সরকারের অধীনে থেকে চাকুরি করে (প্রচ্ছন্নভাবে পাকিস্তানের পক্ষ কাজ করে যায়)।
এই মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেকের ভুমিকা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে । আছে শহীদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক । এখন যাদের দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশি সোচ্চার থাকতে , তাদেরকে নিয়েই অনেকসময় অভিযোগ তুলেছেন রণাঙ্গনের অনেক বাঘা বাঘা মুক্তিযোদ্ধা । যাদের মাঝে রয়েছেন কাদের সিদ্দিকীর মত মানুষ ।
যে তৃতীয়পক্ষের কথা বললাম , উনারা কেউ ডাক্তার , কেউ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক , আইনজীবী , সাহিত্যিক । তারা অনেকেই তাদের চাকুরিতে ১৯৭১ এর সারা বছর বহাল থাকেন , নিয়মিত বেতন নিয়েছেন , নিরাপদে সরকারী বাসভবনে থেকেছেন । যাদের আমরা জেনে এসেছি শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে তারা সবাই ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসের ১২-১৫ তারিখে মারা যান, বেশিরভাগ অবশ্য ১৪ ডিসেম্বর মারা যান, ব্যতিক্রম শুধু জহির রায়হান।
এতকাল শহীদের সংখ্যা নিয়ে বেশ বিতর্ক থাকলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ভুমিকা নিয়ে খুব বেশি বিতর্ক ছিলোনা। যে দুই একজন তাদের বিতর্কিত ভুমিকা নিয়ে কথা বলতেন তার পরিমান ছিলো খুব সামান্য । যার ফলে খুব বেশি হালে পানি পায়নি । আর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ভুমিকা নিয়ে জানা ছিলো খুব অল্পসংখ্যক মানুষের , যারা এতদিন চুপই ছিলেন । যার ফলে তাদের সন্তানেরাও বেশ মর্যাদার সাথে থেকেছেন ।
কিন্তু হটাত কি হয়ে গেলো । বেগম খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যা নিয়ে বক্তব্য দিলেন । তারপরই দুইপক্ষ আবার সোচ্চার হয় । তিন মিলিয়ন না তিন লক্ষ তা নিয়ে আবার কথা শুরু হয় । এই বিষয়টা আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে । এরপর পরই আলোচনায় যোগ দেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় । তিনি সরাসরি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । এরপর আলোচনা নতুন মোড় নেয় । তাকে আক্রমন করে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন অনেকেই । বাদ যাননা বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরাও ।
এর মাঝে আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এর বাসার ঠিকানা চেয়ে বসেন সাংবাদিকদের কাছে । তার উদ্দেশ্য তিনি হাত থাকতে মুখোমুখি হতে রাজি নন । এরপর আসেন শহিদুল্লাহ কায়সার এর মেয়ে শমী কায়সার । আর তারপরই সব ভয়ংকর সব তথ্য বেড়িয়ে আসে । বেড়িয়ে আসে শহীদ পরিবারের সাথে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সেই ১৯৭২ সালের সাক্ষাতের ঘটনা , যেদিন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব সরাসরি তাদের মুখের ওপর বলে দেন , “ অনেকেই তো দালালী করতে গিয়ে মরেছে।”
সেই সময়ে কার কি ভুমিকা ছিলো তা অনেকেই জানত না । কিন্তু এত বছর পর এসে সেই পুরনো আবর্জনা বেশি ঘাঁটার ফলেই এত দুর্গন্ধ বের হচ্ছে । যাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরন করা হত তারা বেশ বিতর্কিত এমনকি তাদের অনেকে যে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তাও বেড়িয়ে আসছে । এই ঘাঁটাঘাঁটি যদি চলতে থাকে তাহলে আরো অনেকের ভুমিকা আমাদের সামনে আরো পরিষ্কার হবে ।
চলতে থাকুক এই চলমান বিতর্ক , বেড়িয়ে আসুক অজানা সত্য , মুখোশ খুলে যাক সবার ।
সেইদিনের অপেক্ষায় ..................... যেদিন শাহরিয়ার কবির , মুনতাসির মামুন , নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু , জাফর ইকবাল স্যারের সত্যিকার সেই সময়ের অবস্থান জাতির সামনে পরিষ্কার হবে ।