গত এক সপ্তাহ পুলিশের নির্যাতনের ঘটনায় মিডিয়া , সুশীল সমাজ , সাধারন মানুষ সবাই বেশ সোচ্চার । তাতে লাভের লাভ আদেও কিছু হবে না , অতীতে হয়নি , এখনো হবে না , ভবিষ্যতেও হবে না ।
এই কিছুদিন আগে পুলিশে এসআই তারপর কনস্টেবল নিয়োগ দেয়া হলো । সেখানে বানিজ্য ছিলো অনেকটা ফিক্সড প্রাইজের মত । এসআই পোস্টের চাকুরি পাবার জন্য সব যোগ্যতার পরে দরকার ছিলো ১৩ লাখ টাকা । দেড় মাস আগে বাড়ি গিয়েছিলাম একটা কাজে , সেখানে দেখি কিছু ছেলে কনস্টেবল এর চাকুরির জন্য ফরম পুরন করছে । তারা অবলীলায় স্বীকার করে নিচ্ছে তারা কেউ ছয় কেউ সাত লাখ টাকা দিয়ে কন্ট্রাক্ট করে কনস্টেবলের চাকুরি নিচ্ছে ।
কত টাকা বেতন পায় একজন এসআই বা কনস্টেবল ? যে তার জীবনের শুরুতেই ১২/১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তার সবসময় লক্ষ্য থাকবে সেই বিনিয়োগের টাকা উসুল করা ।
২০১২ থেকে ২০১৫ , দেশে জামায়াত – শিবির এক নারকীয় তান্ডব চালায় , পরিনামে অসংখ্য মামলা হয় তাদের নামে । ধুমছে চলে গ্রেফতার বানিজ্য , টাকার বিনিময়ে আসামী ছেড়ে দেয়া , বিভিন্ন মেসে অভিযান চালিয়ে জিনিসপত্র লুটপাটের মহাযজ্ঞ চলে ।পুলিশ সেই সময় ভয়ংকর মামলার ভয় দেখিয়ে , কাওকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে । পুলিশের ইনকাম তখন আশাতীতভাবে বেড়ে যায় । তারা সেই অনুপাতে তাদের খরচের হাত ও খাত দুটোই বেড়ে যায় ।
তারপর হটাত জামায়াত-শিবির আন্দোলন বন্ধ করে দেয় , চলে যায় গোপনে । এখন আর মামলা হয়না , খুব বেশি গ্রেফতারও হয়না । পরিনামে পুলিশের ইনকামে হটাত ব্যাপক ধ্বস নামে । তখন পুলিশের কুনজর পড়ে সাধারন মানুষের উপর । শুরু হয় তাদের হেনস্থা করা ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু ছাত্রকে শিবির করে গুলি করা , ঝালকাঠির লিমনকে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়ার ঘটনায় এর আগে সমালোচনা হয়েছে কিছুটা । কিন্তু শিবিরের ওপর অন্যায় হামলা বা মামলা হলে আমরা সাধারন মানুষ একেবারে চুপ থেকেছি , ভেবেছি হয়ত ওদের ওপর দিয়েই চলে যাবে ।
কিন্তু না । জামায়াত- শিবির কে হামালার মধ্য দিয়ে পুলিশের যে নৈতিক স্খলন হয়েছিলো তার রেশ এখন সবাইকে টানতে হচ্ছে ।
এখন সবাই ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বি আর সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাকে নিয়ে ব্যস্ত । খেয়াল করলে খুব সহজে বোঝা যাবে , দুইজনকে হামলার সময় পুলিশের ভাষ্য এমন ছিলো যে কেউ তাদের কিছু করতে পারবে । এমনকি এসআই মাসুদ একজন এসপির ফোনের কথা শুনে ফোন না ধরে তাকেও অবজ্ঞা করেছে ।
কেন পুলিশ এত বেপরোয়া ?
যখন তাদের নির্বিচারে গুলি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয় , কাওকে শেষ করে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয় যার দায় তার উপর স্যার বা মন্ত্রী নিতে চান তখন আর তাকে কোন অন্যায় করতে ভাবার দরকার পড়ে না ।
অন্যায় সব সময় অন্যায় । অন্যের সাথে হলে সেটা ন্যায় আর আমার সাথে হলে অন্যায় ----- এই নীতির পরিণাম খুব বেশি ভালো হয় না ।
পুলিশে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য , দক্ষ মানুষ থেকে দলীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া , তাদের অবাধ ক্ষমতা দেয়া , অতীতে তাদের কৃত কর্মের জন্য খুব বেশি সাজা না পেয়ে বরং পুরস্কৃত হওয়া --- এসবই আমাদের পুলিশের আজকের এই নৈতিক স্কলনের জন্য দায়ী ।
অতীতে যারা পুলিশের অন্যায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে তারা কেউ হয়ত গোলাম রাব্বির মত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা বা মিডিয়াকর্মী ছিলেন না , বা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ছিলেন না । তাই তারা কোন প্রতিকার বা প্রতিদান কিছুই পায়নি ।
এই বিশ্রি অবস্থা থেকে মুক্তি তখনি আসবে যদি দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া যায় সেই সাথে পুলিশ বিভাগের সবাইকে সতর্ক করা যায় ।
আর সর্বদা অন্যায়কে অন্যায় বলতে পারতে হবে না হলে একে একে সবাইকে লিমন , গোলাম রাব্বি হতে হবে ....................................