somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মামা কাহিনী, কিছু সরল স্বীকারোক্তি এবং একটি নামের জন্য আবেদন

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



[কমেন্টে একটা মেয়ে বাবুর নাম রেখে যিবেন। আমার ভাগ্নির জন্য]

আজ আমি ১২তম বারের মত আঙ্কেল হলাম। আঙ্কেল শব্দটার একটা বিশেষ সুবিধা আছে, আবার আছে এক বিশেষ অসুবিধাও। সংক্ষেপে বলতে গেলে বুঝানো কঠিন হয় আমি কার কাকা আর কার মামা। আর সুবিধা হলো তার উল্টোটা তথা ক্ষেত্রভেদে একশব্দে উত্তর করা যায়। তবে পরিবারের বাইরে একজন রিক্সা চালক থেকে শুরু করে সহপাঠী পর্যন্ত নানা স্তরে যে পরিমান মানুষের কাছ থেকে মামা ডাক শুনতে হয়, তাতে বোধ করি আঙ্কেল কথাটার অর্থ মামাদের ওয়াকফ করে দেয়া উচিৎ। আবার নিজের ভাইদের ছেলেমেয়েসহ নিকটাত্মীয় ও পাড়াপ্রতিবেশীদের ছেলেমেয়রা সাধারণত কাকা সম্বোধনেই ডেকে থাকে। সে বিচারে আঙ্কেল শব্দের অর্থ কাকা না হওয়াটাও অবিচার। শেষতক আঙ্কেলের মালিকানা কার হবে সে সিদ্ধান্ত আপাতত তোলা থাক।

মামা শব্দের সাথে এত এত স্মৃতি জড়িত আছে তা বলতে গেলেই শেষ না হবার ভয় থাকে। তবু আত্মসংযম করে খানিকটা বলার লোভও সামলানো যাচ্ছে না। কাকা শব্দটা রেখে মামা শব্দ নিয়ে কথা বলার একটা জোরালো যুক্তি আছে। আমি যে আজ ১২তম বারের মত আঙ্কেল হলাম তাতে আমার মামা হওয়ার অবদান ১০ বারের। তথা বড় ভাইয়ের দুই মেয়ের কাকা হওয়া ছাড়া বাকি সবটাই মামাত্ব। ভাবী সাহেবা জানালেন তিনি আমার পুনর্বার কাকা হওয়াকে নিশ্চিতভাবেই আটকাবেন। অর্থাৎ আমি সহসাই আর কাবা হচ্ছি না। যাহোক, মামাময় স্মৃতির কয়েক টুকরা তুলে ধরা যাক।।

আমি প্রথম যখন আমি হই তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। অর্থাৎ আমি প্রাইমারিতে পড়াকালীন মামা। এই সুযোগটা হওয়ার একমাত্র কারণ ভাই-বোনদের মধ্যে আমি সেশনজটে পড়ে পৃথিবীর আলো দেখেছি সবার শেষে। পুরো বংশে একমাত্র বাচ্চা হওয়ায় আমি আমার মামাত্ব দেখানোর খুব একটা সুযোগ পেতাম না তখন। সবাই বাবুটাকে নিয়ে টানাটানি করতো। এছাড়াও অন্যতম একটা কারণ ছিল আমি সবার ছোট তথা দেখতেও বিশেষ ছোট। বাবু আমার কাছে দিলে হাত থেকে পড়ে যাবে বলে সবার একটা প্রবল ধারণা ছিল। অবশ্য ধারণাটাও যৌক্তিক। আমি খুবই বাচ্চা শিশু কোলে নিতে পারতাম না। (বাচ্চা শিশু আছে, বড় শিশুও নিশ্চয়ই থাকবে)। যেভাবে হাত ভাজ করতাম তাতে আমার হাতের ফাঁক গলে একটা শিশুবাচ্চা অনায়াসে পড়ে যেতে পারে। সুতরাং মামাত্ব দেখানোটা হলো সীমিত।

সেকেন্ডারিতে পড়ার সময় মামা হলাম দুইবার। কী ভাগ্য। উন্নতি হলো। মেঝো আপুর মেয়ে হলো নাম রাখলাম আমার জীবনের প্রথম ক্রাশের নামে। সেকেন্ডারিতে পড়ার সময় ক্রাশ পেলাম কোথায় ভাবছেন? ভুল করলেন। আমি সেই প্রাইমারি থেকেই ক্রাশিত। সম্ভবত ক্লাস ফাইভ। ক্রাশ মানে সিরিয়াস লেভেলের ক্রাশ। ক্রাশের সাথে একটা লম্বা সময় পর্যন্ত সম্পর্কও ছিল। এটা কেমন সম্পর্ক সেটা আমি নিজেই ডিফাইন করতে পারি না। কেমন যেন না প্রেম না বন্ধুত্ব। যাহোক, মজার কথা বলি। আমার ভাগ্নির নাম যার নামে রাখলাম অর্থাৎ আমার চিরদিনের সেরা ক্রাশ, সেও কিন্তু দশ-পনেরোটা লতাপাতা আত্মীয় হিসাব করলে আন্টি গোছের একজন হয়। তারচেয়ে বড় কথা ক্রাশের বড়বোনকে (আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র) একদিন টিজ করতে গিয়ে খালা বলে ডাক দিয়েছিলাম (অবশ্য তখনো ক্রাশ খাই)। সে গল্প অন্যদিন হবে। সেই ক্রাশের সাথে মিলিয়ে রাখা আমার ভাগ্নির নামটা এখানে উহ্য রাখলাম। পাঠক নাম জেনে গেলে আমার চাকরী (চাকুরি) থাকবে না।

সেকেন্ডারিতে থাকাকালে আমি দ্বিতীয়বার যার মামা হয়েছিলাম সে আমার বড় আপুর মেঝো ছেলে। তার নাম অবশ্য উল্লেখ করা যায়। তারিফুল ইসলাম তুষার। সংশোধিত তথ্য এই যে জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত কোন এক সমস্যার কারণে তার না পরিবর্তন হয়ে নতুন নাম হয় আরিফুল ইসলাম তুষার। নাম তো বিশেষ ঘটনা না। ঘটনা হচ্ছে তার খাওয়ার একটা বিশেষ ভঙ্গি। ভাত খাওয়ার সময় তাকে অনেক গরম ভাত মেখে মুখে দিতে হতো। কিন্তু গরমের কারণে খেতে পারতো না বলে তার মুখে ফু দিতে হতো। ফু দিয়ে ঠান্ডা করে দিলে তারপর সে গলধঃকরণ করতো। আর ফু দেয়ার জন্য আমাকে ছিল তার বিশেষ পছন্দ। মজার ব্যাপার হলো এই একটু ফু দেয়ার আগে পরে সে আমাকে পছন্দ করতো না। পছন্দ কী! দেখতেও পারতো না। কোলে নেয়ার চেষ্টা করলে তো কথাই নেই মাঝেমাঝে আমাকে দেখলেই কান্না করতো। হায়রে মামা!



সেকেন্ডারির ওই দুইটা মামাত্বের ঘটনা থাকলেও একাদশ-দ্বাদশে (আবার দুইবার) মামা হওয়ার সাথে বিশেষ কৃতিত্বের সহিত চাচা হলাম একবার এবং এটাই প্রথম। মেঝো আপুর ছেলে বাবু হলো। তার নাম রাখলাম মেহেদি হাসান। গায়ের রঙে আমাকে পেছনে ফেলা আমার এই ভাগ্নে একটু চুপচাপ স্বভাবের। দেখলে মনে হয় যেন "একটু ভাব নেয়"। যেমনটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রায় সবটা সময় জুড়ে আমাকে শুনতে হয়েছে। ছোট আপুর মেয়ে বাবু হলো। যথারীতি আমিই নাম রাখলাম। মারিয়া। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই নিকনেমটা তার মূল নাম হয়ে গেল। নামের আগে পরে মোসা- আক্তার টাইপের কিছু যোগ হয়েছে মাত্র। আমার নাম টা বেশি পছন্দ হয়ে গেছে হয়তো। তার অল্প কয়েকদিন পরেই ভাইয়ের প্রথম মেয়ে আমাদের সাথে যোগ দিল। তার জন্মস্থান নানার বাড়ি। যাকে বইয়ে লিখে মাতুলালয়। আছি ছোট চাচ্চু। আবার ভাবীর বিশেষ আদরের। তিনি আমাকে না ভেবে, ভাই ভাবতেন। তিনিই এসব কথা বলতেন এবং কাজেকর্মে সেরকম প্রমাণও থাকতো। যাহোক। বাবুটাকে দেখতে গেলাম। ভাবীর আম্মু বাবুটাকে টিভিরুমে নিয়ে আসলেন আমাকে দেখাবেন বলে। আমার কাছে এসে বাবুটে মুচকির হাসির মতো করে হাসি দিলো। এত ছোট শিশু হাসতে পারে-কি-পারে-না, তা আমি জানি না। আমার কাছে এবং ভাবীর মায়ের কাছে মনে হলো হাসি দিল। আমার মনে একটা স্বর্গীয় অনুভূতি হলো। সত্যিই এমন অসাধারণ অনুভূতি খুব কমবারই হয়েছে আমার। যদি সায়েন্স বলে এত ছোট শিশু হাসি দিতে জানে তবে সায়েন্সের সেই কথাটা না মেনে, নিদেনপক্ষে না শুনে বেঁচে থাকবো। তবুও বিশ্বাস করতে চাইবো না সেটা হাসি ছিল না এমন কথা।

ভাইয়ের মেয়ের নাম রাখা হলো সাদিয়া। কিছুদিন পর ভাই আর ভাবী ভাবলেন নামটা সেকেলে। নাম পাল্টালেন। পাল্টিয়ে কী যেন একটা রাখলেন, আমার আপাতত মনে আসছে না। তারও কিছুদিন পর আবার একই কথা মনে হলো তাদের। এই নামটা চলছে না। আরো আধুনিকীকরণ করা প্রয়োজন। তারা আগের নামটাকে যোগ করে নাম রাখলেন সাদিয়া সালবিন ফাইজা। নামটা টিকে গেল। পরে যখন আরেকটা মেয়েবাবু হলো ভাইয়ের তখন তার নাম রাখা হলো নাদিয়া সালবিন ফারিয়া। তখন আশ্বস্ত হওয়া গেল। নামগুলো অন্তত টিকে যাবে।

পরবর্তীতে তথা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও তৎপরবর্তী সময়ে ভাইয়ের এক মেয়ের চাচা হওয়া ছাড়াও আমি মামা হয়েছি আরো পাঁচ বার। যার সর্বশেষ সংযোজন আজ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ । তারিখটা কথায় লিখলে আনকটু আর্টিস্টিক হবে বোধ করি। ১৯.০৯.১৯ । নয় সংখ্যাটা তিনবার ও ডান পাশে। আমার ভাগ্নির জন্য একটা নাম রাখা চাই। আমি এখানে একটু মামাত্ব ফলাতে চাই। আমি একটা নাম ঠিক করলাম " আফসানা ইসলাম সামান্তা। (বাবুর মায়ের নাম আয়েশা আফরীন এবং বাবার নাম সাইফুল ইসলাম)।

আপনারাও নতুন নাম বলে আমাকে সাহায্য করতে পারেন।

ও, আরেকটা কথা। পরিসংখ্যানিক দিক বিবেচনায় আমি কোন মামা স্মারক পাবো কি-না, দয়া করে জানাবেন।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:২২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×