somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমের জীবন চক্র অথবা প্রেমিক-প্রেমিকার

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"তোমার মিলনে বুঝি গো জীবন, বিরহে মরণ"।
প্রেমের চরম স্টেজটা পার করতে গিয়ে এই রকম একটা অনুভূতি আসে। একজন আরেকজনকে ছাড়া বাঁচে না। এই স্টেজটা যদি কোনভাবে খারাপের দিকে যায় তখন মানুষের নানা পাগলামি লক্ষ্য করা যায়। কখনো কখনো পাগলামিটা তার গন্ডি ছাড়িয়ে ছাগলামিতে রূপ নেয়। আমি একজন প্রেমিককে চিনি যে প্রেমের কঠিন স্টেজটা পার করার সময় নিজেকে ছাগল মনে করতো। তখন চারপাশের কাঁঠাল গাছগুলো তার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে থাকতো। ভালোর দিকে গেলেও কখনো কখনো সেইম কেস দেখা যায় (অন্যদিন বলবো)! তবু তো সময় বহিতে হয়। ৭ গোল খেয়ে নিশ্চিত হারতে বসা ব্রাজিল ফুটবল টিমটাও তো শেষ বাঁশি শোনার জন্য অপেক্ষা করেছিল। তাই না?

পাঠক, বুঝতেই পারছেন– আমার আজকের খিচুড়ি "প্রেমিক-প্রেমিকা, তাদের মধ্যে প্রবাহমান প্রেম এবং তার প্রতিক্রিয়া" নিয়ে। আমার আজকের বক্তব্যে আমি- জনজীবনের উপর (প্রেম) পতিত হওয়ার ধরণ ও প্রতিক্রিয়া বিচার করে একে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছি। যা নিম্নরূপ-
১. প্রেমের চেষ্টা থেকে চূড়ান্ত রূপ লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত
২. প্রেমের চূড়ান্ত পর্যায়
৩. বিচ্ছেদ কিংবা মিলনাত্মক পর্যায়।
আজ এই তিনটি পর্যায়ের প্রাথমিক হালনাগাদ করা হবে। পরবর্তীতে কোন একদিন প্রতিটি বিষয়ের আলাদা আলাদা খিচুড়ি পরিবেশন করা হবে। আপাতত বসে পড়ুন।

পর্যায়-১:
এই একটি পর্যায় তথা সময় চির বসন্তকাল। ফাল্গুনের ছোঁয়া পেয়ে শীত যেমন সটকে পড়ে, তেমনি প্রেমের প্রাথমিক সময়টাতে ছেলেমেয়েদের যাবতীয় লজ্জা শরম অদৃশ্য হয়ে যায়। যে ছেলেটা একটা মেয়ের সাথে বা মেয়েটা একটা ছেলের সাথে কথা বলতে, বিশেষ করে প্রেমসংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে পারতো না, বললেও লজ্জায় মুখখানা খয়েরি কিংবা বেগুনি হয়ে যেত, সেই ছেলে বা মেয়েটাই পানাহারের সাথে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে আরেকজনের পেছেনে ঘুরতে শুরু করে। প্রেমের চেষ্টাকারী মেয়ে হলে নতুন করে নতুন রঙের লিপস্টিক ও অন্যান্য প্রসাধনী যোগ করতে থাকে তার ড্রয়ারে। চুলগুলো বেনী করতে শুরু করে, সাথে আয়নার সামনে দাড়ানোর পরিমানটা বাড়িয়ে দেয়।

আর যদি চেষ্টাকারী হয় ছেলে, তবে তো তার প্রেমচেষ্টা আরো অধিক। সে মাথায় তেল দিয়ে উসখোখুশকো চুলকে বশে আনার চেষ্টা করে। একটা চিরুনি ফুলহাতা শার্টের বুক পকেটে কিংবা সেলাই করা টরি কাপড়ের প্যান্টে পার্মানেন্ট লালন করে এবং তা দিয়ে চুলকে বিশেষ কদর করে। এসবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মেয়েটাকে করায়ত্ত করার অবিরাম চেষ্টা। ফোন নম্বর সংগ্রহ থেকে শুরু করে ফেসবুক কিংবা ই-মেইল কিছুই বাদ যায় না। ভার্চুয়াল কানেক্টেভিটির সাথে ভিজ্যুয়াল যোগসূত্র তৈরি না হলে হয় নাকি! সুতরাং মেয়েটার পড়াশোনা কিংবা চাকুরি– সূত্র যাই হোক সেখানে ছেলেটা ঢু মারতে থাকে। চেষ্টা চালাতে শুরু করে কিভাবে তাকে বশ করা যায়, তার।
ছেলেমেয়েরা এটা করতে করতে একটা চূড়ান্ত রূপের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। শেষতক যারা সফল বনে যেতে পারে এখানে তাদের কথা বলছি। নানা স্টেজে যারা ব্যর্থ হয়, তারা এই বক্তব্যের বাইরে।

পর্যায়-২:
এটা অসাধারণ একটা সময়। প্রেমের এই স্টেজটাতে সব কিছু কেবল প্রেম প্রেম লাগে।পৃথিবীর কোন দুর্যোগ এই স্টেজ পার করতে থাকা পাব্লিকগুলোকে স্পর্শ করতে পারে না। সাতদিন উপোস করেও (এদের) মনে হয় তাদের মতো ভরপেট মানুষ পৃথিবীতে খুব কম আছে। এই স্টেজটাতে প্রেমিক-প্রেমিকার কিছু সমস্যা) দেখা দেয়। সবচে' বেশি যাদের সমস্যা হয় তারা হচ্ছে 'মন' এবং 'চোখ'। (হাত-পায়ের কি সমস্যা হয় সেটা অন্যদিন বলা যাবে)। চোখের সমস্যাটা চোখের একা না। মগজ থাকে সিগনাল পাঠায়। তখন চোখ দেখে রঙিন চিত্র। এবার সমস্যার ধরণ-টা একটু বলা যাক। ধরুন, একজন প্রেমিক (অথবা প্রেমিকা) টাউনহল মাঠে দাড়িয়ে আছে। একটা কাপল ফুচকা খাচ্ছে। তখন তার কাছে মনে হতে থাকে তারা প্রেম খাচ্ছে।

শুধু কি প্রেম খাচ্ছে? ফুচকাওয়ালা মামা যে ফর্মুলা মেনে ফুচকা তৈরি করে দিচ্ছেন তার প্রতিটি পর্যায়েই প্রেমের মিশ্রণ দেখতে পায় তারা। এমনকি মামা যে তেঁতুল রস দিচ্ছে, প্রেমের ফাইনাল স্টেজে থাকা পাব্লিকটা সে তেঁতুল রসটাকেও প্রেম ভেবে বসে। আহারে প্রেম! শুধু ফুচকা না। পান–বিড়ি–সিগারেট সবকিছুতেই প্রেম। প্রেমিকা যদি ২৫ কেজি ওজনের একটা ঘুষি দেয়, প্রেমিক তাতেও প্রেম খুঁজে পায়। পায় কী(!) তার কাছে মনে হতে থাকে যেন ২৫ কেজি ওজনের একটা প্রেম দিল! কামার যখন দা-বটি বানাতে উত্তপ্ত লোহার উপর সর্বোচ্চ শক্তিতে আঘাত করে, তখনও প্রেমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করা যুগল ভাবে– আহ! কত বড় একটা প্রেম দিল!

এই পর্যায়টাতে তারা কিছু গান গায়। রোমান্টিকতা প্রকাশ করার জন্য না। এটা তাদের ন্যাচার হয়ে যায়। এক অপ্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে "বাথরুম সিঙ্গার" কথাটার জন্ম হয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকাদের সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টায়। এই স্টেজে তারা উভয়েই মনের ভেতর গান লালন করে। একটা গান মনে হয় সবচে' বেশি বার গাওয়া হয়েছে। গানটা এমন–
যো ওয়াদা কিয়া ও নিভানা পাড়েগা
রোকে যামানা চাহে রোকে খুদাই তুমকো
আনা পাড়েগা।


প্রভাবিত হওয়ার কথা আর কী বলল। প্রেমের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছলে তাদের প্রভাবিত হওয়ার ক্ষমতা (পড়ুন, প্রবণতা) বেড়ে যায় হাজারগুণ। একটি উদাহরণ দিচ্ছি–
প্রেমে পড়লে এমনিতেই ন্যাকামি করার প্রবণতা বাড়ে। তখন প্রেমিকা যদি বলে "ইস! ছাগলটা কত্ত সুন্দর করে কাঁঠালপাতা খাচ্ছে"। ঠিক তখনি প্রেমিক মহাপুরুষটি নিজেকে ছাগল ভেবে কাঁঠালপাতা খেতে শুরু করে। যদি খেতে নাও পারে তবে প্রেমিক মহাপুরুষটি নিদেনপক্ষে এটুকু বলে "ইস! আমি যদি ছাগল হতাম তবে কত সুন্দর করেই না কাঁঠালপাতা খেতে পারতাম!"



পর্যায়-৩:
এই স্টেজটাতে সাহিত্যিক উপাদানের সাথে ঐতিহাসিক সত্যতার ব্যাপক অমিল রয়েছে। প্রায় সকল রূপকথার গল্পে "অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল" টাইপ কথা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। প্রেমের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় শেষ হওয়ার পর বস্তুত প্রেমের পরিসমাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ প্রেমের তৃতীয় পর্যায় মূলত প্রেম পরবর্তী পর্যায়। ইতোপূর্বে প্রেমের দ্বিতীয় পর্যায়কে আমি প্রেমের "চূড়ান্ত" পর্যায় বলে অভিহিত করেছি, সচেতন পাঠক মাত্রই লক্ষ্য করেছেন বিশ্বাস করি। তাহলে আরেকটা প্রকরণ কেন করলাম? করলাম এই কারণে, প্রেমের যে ফলটা তখনো বাকি থাকে, তার রূপরেখা তুলে ধরতে।

প্রেমের চূড়ান্ত পর্যায় অতিক্রান্ত হওয়ার পর যদি প্রেমিক-প্রেমিকা যুদ্ধ করতে (পড়ুন, বিবাহ করতে) সম্মত হয় তবে জীবনের বাকিটা সময় একটা মহাযুদ্ধ লেগেই থাকে এবং একই সাথে ভালোবাসাটা মরে যায়। আর যদি অর্থ–যশ–খ্যাতি–বংশ–চাহিদা–ইগো–বয়স–ধৈর্য্য ইত্যাদি কারণে শেষতক সংসার পাতা সম্ভব না হয়ে উঠে তবে দুই মেরুতে থেকে তাদের ভালোবাসা ঠিক থাকে কি-না তা বলা মুশকিল। তবে কলিজাপোড়া গন্ধ নিয়ে বেঁচে থাকে দু'জনই, ইহা সত্য। দূরত্ব বজায় রেখে বেঁচে থাকা দুজন মানুষের ভালোবাসাটা একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে ফিকে হতে হতে এক সময় কর্পূরের ন্যায় উবে যায়।

এ অবস্থায় নানা প্রকার গান শোনা যায়। আসলে এই সময়ের গানের ধরণ-টা নির্ভর করে দীর্ঘদিনের প্রেমের বর্তমান অবস্থা ও তার স্থায়ী পরিণতির উপর।
কমন একটা গান দিয়ে আজকের খিচুড়ি শেষ করা যাক।
"আমি কাউকে বলিনি সে নাম
কেউ জানেনা না জানে আড়াল.."




অথবা এমন কিছু আসতে পারে–
"কংক্রিট মন মিছে আলাপন
বিসর্জনে ক্লান্ত ভীষণ.."


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×