somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সার্বজনীন পাগলামী : জ্যাক লাঁকার তাত্ত্বিক কাঠামো ও আমাদের অবস্থান এবং অন্যান্য

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক রাজা তার রাজ্যে পাগলের সংখ্যা ও তাদের অবস্থা বুঝার জন্য একজন সাইক্রিয়াটিস্ট নিয়োগ করলেন। সাইক্রিয়াটিস্ট রাজ্য ঘুরে দেখলেন, তারপর আবার রাজ-দরবারে ফিরে আসলেন।

রাজা সাইক্রিয়াটিস্টকে জিজ্ঞেস করলেন, "আমার রাজ্যে কি কোন পাগল খুঁজে পেলেন?"

সাইক্রিয়াটিস্ট বললেন, "মহারাজ, আমার তো মনে হয়ে আপনার রাজ্যে সবাই পাগল!"

রাজা বললেন, "সে কী? আপনি কি বলতে চাচ্ছেন আমিও পাগল?"

সাইক্রিয়াটিস্ট বললেন, "যার রাজ্যের সকল প্রজা পাগল, তাদের রাজা কি আর পাগল না হয়ে পারে?"

রাজা সব শুনে বললেন, "আমার মনে হচ্ছে আপনিও পাগল!"

গল্পের মত বাস্তবেও প্রত্যেকেই অল্পবিস্তর পাগল। যার মধ্যে কম বেশি অস্বাভাবিকতা বিরাজ করে সেই পাগল। আর মনোবিজ্ঞান বলছে সব মানুষের মধ্যেই কম বেশি অস্থিরতা তথা অস্বাভাবিকতা কাজ করে। ফলে একটা পজিটিভ অর্থে সবাই পাগল। তবে পাগলামির পরিমানের উপর ভিত্তি করে তার প্রকারভেদ নির্ণয় করা যায়। পাগল নিয়ে সবচে' বেশি পঠিত বইয়ের নাম History of madness এবং তার লেখক Michel Foucault (মিশেল ফুঁকো) এবং সহলেখক ছিলেন Jean KhalfaJonathan Murphy নামের আরো দু'জন ভদ্রলোক।


এই পাগলামি তত্ত্ব নিয়ে আরো বহু পন্ডিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও গবেষণা করেছেন। উনিশ-বিশ পার্থক্য সত্ত্বেও সবার বক্তব্যের সারকথা এক। তবে পাগল নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে Jacques Lacan (জ্যাক লাঁকা) 'র নাম সবার প্রথমে থাকবে। মিশেল ফুঁকো— যদিও লাঁকার নাম তার লেখায় নিয়ে আসেন নি তবুও লাঁকার নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ্য। জ্যাক লাঁকা প্রথমে সকল মানুষকে তার পাগলামির পরিমান ও ধরণ দেখে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন।

লাঁকাই প্রথম তত্ত্ব দিয়ে দেখালেন যে, সকল মানুষকে নিম্নোক্ত চারটি শ্রেণিতে পাগল হিশেবে চিহ্নিত করা যায়—
i. Psychotic (সাইকোটিক)
ii. Neurotic (নিউরেটিক)
iii. Hysterical (হিস্টেরিক)
iv. Perverse (পারভার্স)

চলুন এদের সম্পর্কে অল্পস্বল্প কিছু জেনে নেয়ার পাশাপাশি আমরা আজকে পাগলামির ধরণ ও পরিমান অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান ঠিক করি।

i. Psychotic:
এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা খুব কম। সাধারণত লেখক, বুদ্ধিজীবী, পেইন্টার, কবি, সমাজসংস্কারক, রাজনীতিবিদ প্রভৃতি পেশার লোকদের একাংশ এই Psychotic শ্রেণির পাগল। তারা মনে করেন, সমাজের-রাষ্ট্রের সবকিছু বেঠিকভাবে চলছে। প্রতিটি বিষয়কে ঠিক করা তাদের দায়িত্ব। তারা সে মোতাবেক চেষ্টা করেও থাকেন। সমাজকে পাল্টে দেয়ার যে প্রবণতা, তা তাদের মধ্যে সারাক্ষণ কাজ করে এবং তাদের অস্থির করে তোলে। এরকম লোকেরা সমাজের জন্য অনেক কাজ করেন। এই শ্রেণির লোকের উদাহরণ হবে— কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আব্রাহাম লিংকন, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

ii. Neurotic:
এই শ্রেণির লোকের সংখ্যা সবচে' বেশি। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা প্রায় সবসময় সিদ্ধান্তহীনতায় (Indecision) ভোগে। কোন বিষয়েই এরা সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারে না। এই অবস্থায় একটি কাজ সম্পাদন করে তার ফলাফল নিয়ে আবার এরা অসন্তুষ্ট থাকে। সৃষ্টিশীল মানুষদের মধ্যেও এদের সংখ্যা অনেক। এর উদারহন হিশেবে আমরা জীবনানন্দের নাম বলতে পারি।

iii.Hysterical:
নারীবাদীরা হয়তো রেগে যেতে পারেন তবুও বলতে হচ্ছে বাচ্চা বয়সী মহিলাগণ, যারা ৪০ বছরের কম বয়সী- তারা, এই শ্রেণিভুক্ত। বায়োলজিক্যাল কারণে তারা মাসের একটা সময় নির্দিষ্ট কিছু অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। ফলে তাদের আচরণে কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যেমন- হঠাৎ করে মেজাজ বা ধৈর্য হারিয়ে ফেলা, কোন কিছুর প্রতি অনেক বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়া বা আকর্ষণবোধ করা, কোন কিছুকে অপ্রয়োজনে এক্সট্রিম লেভেলে অপছন্দ (Neglect) করা। মূলত নারীরা মেজাজ হারিয়ে হিস্টোরিয়া (Hysteria) রোগীর মত আচরণ করেন বিধায় এমন নামকরণ (Hysteric) করা হয়েছে।

iv. Perverse:
এটা হচ্ছে যৌন বিকারগ্রস্ত লোকদের বিশেষ শ্রেণি। মনঃসমীক্ষক সিগমুন্ড ফ্রয়েড (Sigmund Freud) এদেরকে আলাদা করে দিতে চেয়েছেন। ফ্রয়েড এদের জন্য Pervert শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু জ্যাক লাঁকা তাদেরকে আলাদা না করে বলেছেন এদের একটা ওরিয়েন্টেশান আছে। তিনি Perverse বুঝাতে Periverse শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এরা মূলত নারীদের মাঝে Motherer কে খুঁজে। লাঁকা Motherer শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এই শব্দটি দ্বারা বুঝায়— ছোট বাচ্চা তার মায়ের কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। তেমনি যৌন বিকারগ্রস্ত লোক বিভিন্ন নারীর কাছে সুখ খুঁজে বেড়ায়। সে নিজেও হয়তো জানে না যে সে নারীর কাছে মাতৃ-নিরাপত্তার ন্যায় নিশ্চিত সুখ খুঁজছে। লাঁকা Motherer শব্দটির পাশাপাশি Fatherer শব্দটিও ব্যবহার করেছেন। বিশদ আলোচনা অন্যদিন হবে।

আমার মনে হচ্ছে, আমি চিন্তায় সাইকোটিক কিন্তু কাজে নিউরোটিক প্রকৃতির পাগল। পাঠক, আপনি কোন ক্যাটাগরির পাগল?


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×