বেশ কদিন ধরেই এমনটা হচ্ছে মিজানের। কেমন যেন একটা খারাপ লাগার বোধ কাজ করে মনের মধ্যে। কেন খারাপ লাগছে এর কোনো কুল কিনারা উদ্ধার করতে পারে না মিজান। মাঝে মাঝে মনে হয় এই যান্ত্রিক ঢাকা শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে মিজান। যেখানে কোনো কাজের চাপ নেই। চাওয়া নেই। প্রত্যাশা নেই। শুধু মনের আনন্দে বেড়ানো যাবে।
ঘোরাঘুরি করা যাবে। মাঝে মাঝে মিজানের খুব কষ্ট হয়। এই শহরে একটা প্রতিষ্ঠিত কর্পোরটে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। ভালো বেতন। গাড়ী। সব আছে। ভরা সংসার। বউ সন্তান। কিন্তু কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি । কোথায় যেন না পাওয়া।
গ্রামের সোনালী কৈশোর যেন এখনও ঘুমের মধ্যে ডাকে মিজানকে। কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলে একগাদা উপন্যাস নিয়ে পড়া শুরু করত মিজান। বইয়ের রাজ্যে ডুব দিত। একেকটা সমরেশ, শীর্ষন্দেু, সুনীল, সমরসেট মম, সেক্সপিয়ারে ডুবে থাকত। খুব করে টানত হুমায়ন আহমদে। বাংলা আর হিন্দি সিনেমা। ভিসিআর। এই বৈশাখে সারাদিন মফস্বল শহরে অনুষ্ঠান দেখা। সন্ধ্যায় কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফেরা।
এখন শুধু দায়ত্বি আর দায়িত্ব। মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাও সাত সকালে। বউয়ের আবদার মেটাও। অফিসের কাজ, শুধুই চাওয়া আর চাওয়া। সংগঠনের চাওয়া। সারা দিন পর রাতে ঘুমাতে যায় মিজান রাত ২টায়। আবার ভোরে ওঠ। সবাই যেন মিজানকে কাজে লাগাতে (ইউজ করতে) চায়। কিন্তু মিজান নিজের জন্য এক ফোটা সময় বের করতে পারে না। একটুও নিজের জন্য কিছু করতে পারে না। ইচ্ছা করে ছুটির দিন রমনা পার্কে একা একা হাটবে। হিমুর মতো একা হাটবে ফুটপাতে।
ইদানিং একটু সময় পেলেই ঘুমানোর চেষ্টা করে মিজান। আসলে ঘুমে চোখ ঢুলে পড়ে মিজানের। অথচ বয়স কিন্তু বেশি হয়নি মিজানের। মাত্র ৩৫ বছর। ঘুমের জন্য বউ সহ অন্য অনেকের কথা শুনতে হয়। কিন্তু মিজান যেন ঘুমের আড়ালে নিজেকে সারাক্ষণ লুকিয়ে রাখতে চায়।
প্রাণ ভরে এক বুক নিঃশ্বাস নিতে যেন মুখিয়ে আছে মিজান। সেই সুযোগ কি আদৌ পাবে সে? প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঘূর্নি স্রোতের মতো শুধুই ঘুরতে থাকে। আরেকবার যদি মনের মতো সাজিয়ে নেওয়া যেত জীবনটা! কতই না ভালো হতো তাহলে!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৯