আকাশ বুঝতে পারছিল না এই লোকটি কে? এমন অদ্ভুতভাবে কেন তার কাছে দাঁড়িয়ে আছে?এত ভয়ংকর চেহারার লক সে জীবনেও দেখেনি। অবশ্য তার জীবনও বা কতটুকু? মাত্র ৮ বছর। লোকটা তার দিকে তাকিয়ে বলল, “এসো আকাশ”। আকাশ অবাক হয়ে গেল, এত ভয়ানক গলাও সে কোনদিন শোনে নি।আর বললেই হল, এই লোকের সাথে সে যাবে কেন? আম্মু নিষেধ করেছে কোন অচেনা লোকের সাথে কোথাও যেতে, আচ্ছা আম্মু কোথায়? আকাশ তো আম্মুর সাথেই স্কুল থেকে আসছিল, প্রতিদিনের মত দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছিল, একটি বাস দেখল, তারপর... তারপর... অনেক কাছে এসেছিলো বাসটি, এরপর... উহহ আর তো কিছুই মনে আসছে না।কিন্তু আম্মু তো কখনও ওকে একা ছাড়ে না ও এখানে একা এই কিম্ভূতকিমাকার লোকটির সামনে কি করছে? লোকটি আবার বলল, “এসো আকাশ, আমার সাথে।” আকাশের এবার রাগ হল, বলল, “তুমি কে? তোমাকে আমি চিনি না,যাব না তোমার সাথে। আর আম্মু কোথায়?” লোকটা তার ভয়ানক গলায় বলল, “আমি যমদুত,তোমার মৃত্যু হয়েছে তাই তোমার আত্মাকে নিয়ে যেতে এসেছি। আর কথা বাড়িও না তো জলদি চলো আমার হাতে সময় কম।” এখন আকাশ বুঝতে পারল এই লোকটির মাথা খারাপ,তাই ভয় অনেকটাই কমে গেল সে লোকটির দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল, “তুমি পাগলের মত কি বলছ? আমার বয়স ৮ বছর আমি কিভাবে মারা যাব? মানুষ তো বুড়ো হলে মারা যায়। আর আমার কত কাজ বাকি আছে তুমি জান? রুশকে ট্রেন টা দিয়েছি কালকে, আজ ওর কাছ থেকে আনতে হবে, মিস আজ অনেক হোমওয়ার্ক দিয়েছে তাও করতে হবে আর তুমি বলছ আমি মরে গেছি। ইসস মরা এও সোজা না? যমদুত নামের লোকটি বলল,“আমার কথা বিশ্বাস না হলে পিছনে তাকাও ছেলে”
আকাশ জলদি পেছনে তাকাল ও কিছুই বুঝতে পারছেনা ও দেখতে পাচ্ছে ওর আম্মু কাঁদছে, স্কুলের সবাই দাঁড়িয়ে আছে প্রত্যেকেই কাঁদছে কিন্তু ও কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছে না। ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখল ওর স্কুলব্যাগ ও টিফিন বক্স রাস্তায় পরে আছে এবং...একি! এতো ও নিজেই রাস্তায় পরে আছে,রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ, এ কিভাবে সম্ভব?
ওর আম্মুর কাছে গিয়ে আম্মুকে ধরে বলল, “আম্মু আমার কি হয়েছে? তুমি কাদছ কেন?”ওর মা ওর স্পর্শ অনুভব করতে পারল না, ও একটু পর বুঝতে পারল কেউ ওকে দেখতে পাচ্ছে না,তখন সে আবার সেই লোকটিকে দেখতে পেল যে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আকাশ তার কাছেই ফিরে গিয়ে বলল, “আমি মারা গেছি, তাই না?কিন্তু কিভাবে?”
-বাসের ধাক্কায়
-সেই বাসটা?
-হ্যা
-কিন্তু তা কি করে সম্ভব?আমি মারা গেলে আম্মু কিভাবে থাকবে? আমাকে ছাড়া তো আম্মু ঘুমাতে পারে না। আমি কি আর স্কুলে যেতে পারবনা?আমি যে বড় হয়ে পাইলট হতে চেয়েছিলাম তাও কি হতে পারব না? আমি মারা গেলাম সবকিছু ফেলে এটাতো হতেই পারে না।
-হয়েছে তো
-যমদুত আঙ্কেল, আমি তোমার সব সব কথা শুনব তুমি আমায় বাসায় পৌছে দাও বাবা আজ আমার জন্য নতুন একটা খেলনা আনবে। প্লিজ...
-শোন ছেলে, অনেক বেশী সময় নিয়ে ফেলেছ তুমি আর কথা বাড়িও না। জলদি আমার সাথে চল। আমার হাত ধর।
আকাশ আর কোন কথা বলল না। সে যমদুতের হাত ধরে দেখল, সে তার হাত ধ্রতে পারছে, এখন শুধুমাত্র এই একজনই তার কথা শুনতে পারে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি হল তার সাথে, কিছু বোঝার আগেই যেন সব শেষ হয়ে গেল। একবার পেছনে তাকিয়ে আকাশ আকাশের দিকে যাত্রা করল।