একটা কথা কোথায় জানি শুনেছিলাম, মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি জানলে নাস্তিক হয় আর তার থেকেও বেশি জানলে সৃষ্টিকর্তাভীরু হয় তথা ঈশ্বরভীরু হয় । প্রফেসর স্টিফেন হকিং বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন বিজ্ঞানী ও পেশায় বর্তমান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা গবেষণার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন ।
তার দেয়া বক্তব্য কোনসময়ই ঈশ্বরতত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না । বরং তাঁর "A Brief History of Time" বইতে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টির পেছনে একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন থাকার দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন । কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত "The Grand Design" বইতে বলেছেন,
“Because there is a law such as gravity, the universe can and will create itself from nothing. Spontaneous creation is the reason there is something rather than nothing, why the universe exists, why we exist. It is not necessary to invoke God to light the blue touch paper and set the universe going.”
অর্থাৎ এর বাংলা করলে দাড়ায়ঃ
যেহেতু গ্রাভিটি নামক একটা বিষয় রয়েছে, সেহেতু মহাবিশ্ব নিজে নিজেই তৈরি হতে পারে এবং সেটার উৎস কোন কিছুই না । স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টিসমূহই একমাত্র কারণ যে শূন্য ছাড়া আর কিছুই নেই, এটাই কারণ যে এই মহাবিশ্ব আজও টিকে আছে, আমরা আজও টিকে আছি । ঈশ্বরের মত কোন কিছুই দরকার নেই নীল কোন কাগজে আলো ধরার এবং এই মহাবিশ্ব চালিয়ে নেওয়ার ।
তার মানে প্রফেসর হকিং-এর আগের বক্তব্যের সাথে বর্তমান বক্তব্য সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। আজ বাদে কাল আবার নতুন কিছু যে বলবেন না – তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ হালের নাস্তিকরা তড়িঘড়ি করে তাঁর এই বক্তব্যকে "ঈশ্বরের অভ্রান্ত বাণী" ধরে নিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসধারীদের বিশেষ করে মুসলিমদেরকে আক্রমণ করেছে এই বলে যে, মুসলিমরা বিজ্ঞান মানে না ! প্রফেসর হকিং-এর এই বক্তব্য নাকি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য ! এমনকি বাংলা নাস্তিকদের কাছে অনেকটাই পীরতুল্য রিচার্ড ডকিন্স তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন এভাবে:
“Darwinism kicked God out of biology but physics remained more uncertain. Hawking is now administering the coup de grace.”
অর্থাৎ এর বাংলা করলে দাড়ায়ঃ
ডারউইনিসিম জীববিজ্ঞান থেকে ঈশ্বরতত্ত্বকে প্রথমেই নাকচ করে দিয়েছে কিন্তু পদার্থবিদ্যায় সেই বিষয়টাই অনেকটাই অনিশ্চয়তায় ঘেরা ছিল । হকিং এবার সেখান থেকেও ঈশ্বরতত্ত্বকে বিদায় করেছে ।
অথচ স্টিফেন হকিং নিজেও বিষয়গুলোতে "হয়তো", "হওয়া উচিৎ", "স্বাভাবিক" ইত্যাদি শব্দগুলোর ব্যবহার করেছেন । তাছাড়া কয়েকদিন আগেই পত্রিকায় পড়েছিলাম, তিনি বলছেন, মৃত্যুর পরের স্বর্গ বা নরকের যে ধারণা সেটি নাকি নিতান্তই অমূলক । অর্থাৎ জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই নাকি সবকিছু শেষ । আবার আজ বলছেন, কৃষ্ণগহ্বরে কিছুই হারিয়ে যায় না । কোন জিনিস কৃষ্ণগহ্বরে পড়ে গেলে সেটি নাকি অন্য কোন জায়গায় তথা মহাবিশ্বে গিয়ে পৌঁছায় । আসলেই কতটা ফাউল কথাবার্তা । তিনি নিজেই কোন মহাকাশযানে উঠে এই কথার সত্যতা প্রমাণ করেন না কেন ? আমি ব্যক্তিগতভাবে লোকটাকে বেশ পছন্দ করতাম কিন্তু এই শেষ বয়সে এসে হঠাৎ করে তিনি কেন উল্টাপাল্টা বকা শুরু করলেন, তা আমার মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না ।
অনেকেই ভাবতে পারেন, তার নাস্তিকতা বিশ্বাসের কারণেই তার প্রতি আমার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে । সত্য কথা বলতে গেলে, সেটা ঠিক । তবে আরও অনেক কারণ রয়েছে । তার মত এত বড় মাপের একজন বিজ্ঞানী কেন এভাবে সাংঘর্ষিক কথাবার্তায় জড়াবেন ? আর তার নতুন এই থিউরিগুলো কি তার নতুন বইয়ের বিক্রি বাড়ানোর কোন কৌশল ? যাই হোক, পুরোপুরি সত্যতা প্রমাণ করা ছাড়া এভাবে এই কথাগুলোকে তথা থিউরিগুলোকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ সতর্কতা বজায় রাখতে হবে, সেটা কিন্তু পরিস্কারই ।
খবর সূত্রঃ প্রথম আলো ও বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী ব্লগ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭