আগের চারটি পর্ব -
ছেলেটির কথায় দাদার আক্কেলগুড়ুম - একটি রসীয় কড়চা - পর্ব ১-৪
এবারের কথোপকথন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অর্থ চুরি সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে । একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০ কোটি ১০ লক্ষ ডলার পরিমাণ অর্থ চুরি করে সরিয়ে নেওয়া হবে, আর সেটা নিয়ে কোন কাহিনী হবে না, তা কি হয় ? তবে এদের কথাবার্তার শেষ কিন্তু ঐ বৌদিকে নিয়েই । পড়ুন তাইলে......
- হ্যালো সুনীল, আছো কেমন ?
- হ্যাঁ, দাদা । ভালোই আছি । আপনি কই ? অনেকদিন আপনাকে দেখি না । এদিকে আসবেন-টাসবেন না নাকি ?
- আরে, আমি তো সেই জন্যই তোমাকে ফোন দিয়েছি । তুমি আছো ওখানে ? তাইলে আমি আসছি ।
- হ্যাঁ, দাদা, আছি । ছেলে-পেলেগুলোও আছে । আপনি আসেন ।
সুনীলের সাথে এতটুকু কথা বলেই ফোন রেখে দেয় দাদাবাবু । দাদাবাবু চাকরী করেন অগ্রণী ব্যাংকে । সরকারী চাকরী বলে কথা, ইচ্ছেমত যান আবার হুট করে হয়তো বেরিয়েও আসেন । তবে ইদানিং একটি বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত । এখন তার খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে । একা একা খেতে ভালো লাগবে না ভেবেই তিনি সুনীলকে ফোন দিয়েছেন । ছেলেগুলো আসলে খুব মিশুক ।
- আরে, দাদা, এসেছেন ? আছেন কেমন ?
- ভালো নেই সুনীল । একেবারেই ভালো নেই ।
- কেন দাদা ? (দাদাবাবুর মুখ থেকে এই কথা শুনে সুনীল মনে মনে ভাবলো, আবার বৌদির কি কিছু হয়েছে)
- কেন তুমি জানো না ? দেশের সকল মানুষই তো জানে ।
- (দাদাবাবুর মুখ থেকে এই কথা শুনে সুনীল এতটুকু আশ্বস্ত হলো, যাক বৌদির কিছু হয়নি) কি হয়েছে দাদা ? একটু খুলে তো বলবেন ।
- আরে দেশ থেকে যে ৮০০ কোটিরও বেশি টাকা চুরি হয়ে গেলো, তুমি শোনো নি ?
- হুম, শুনেছি তো । কিন্তু দাদা, দেশে এত পুলিশ-র্যাব-আর্মি থাকতে এটা হলো কি করে ?
- আরে ধুর, এ তো হ্যাকিং হয়েছে, এখানে পুলিশ-র্যাব-আর্মির কিছুই করার নেই ।
- যা শালা, এই হ্যাকিং জিনিসটা আবার কি দাদা ?
- কি জানি, ইন্টারনেটের মাধ্যমে নাকি চুরি । আমিও ব্যাপারটা ভালো করে জানি না । যাই হোক, ব্যাংক থেকে এখন হেব্বি প্রেশার দিচ্ছে । কিভাবে ব্র্যান্ডিং বাড়াতে হবে, কিভাবে একাউন্ট আরও খোলা যায়, কিভাবে লোকজনকে আরও ব্যাংকিং খাটের উপর বিশ্বস্ত করে তোলা যায় ইত্যাদি নিয়ে চাকরীতে সেই প্রেশার । লোকজন তো এখন ব্যাংকে টাকা রাখতেই একরকম ভয় পাছে, বুঝলা না ?
- হুম, সে তো হওয়ারই কথা দাদা । এটাই তো স্বাভাবিক । তা দাদা, আমাদের বৌদিকে আবার এসব নিয়ে টেনশন দিচ্ছেন না তো ?
- তোমাদের বৌদিকে এসব নিয়ে টেনশন কেন দেবো ? এমনিতেই তো আমি তার আবদার মিটিয়ে পারি না ।
- কি বলেন দাদা ? বৌদির আবার কি আবদার ? আপনি না পারলে আমাদের তো বলতে পারেন । আমরা আছি কোন দিনের জন্য ?
- ধুর, বাপু, বাজে বকো না তো । তোমাদের কষ্ট দিতে যাবো কেন ?
- কি যে বলেন, দাদা, বৌদির জন্য এই কষ্ট কোন কষ্ট হলো ?
- নাহ, তোমাদের নিয়ে আর পারি না । ভাবলাম, একা একা সিগারেট খাওয়ার চেয়ে একটু তোমাদের সাথে নিয়ে খাই, তাও শান্তি নেই । আমি বরং যাই ।
- যাবার আগে একটা কথা তো বলে যান দাদা......
- কি কথা ?
- ঐ টাকা কি আদৌ উদ্ধার হবে ?
- ২০০ কোটি টাকার মত উদ্ধার তো হয়েছে, দেখা যাক, বাকী টাকার ক্ষেত্রে কি হয়...... কিছুই বলা যাচ্ছে না এখন ।
এই বলেই দাদাবাবু প্রস্থান করলেন । লোকটা বউয়ের প্রশংসা কেউ করুক, এটা শুনতেই পারেন না । ওদিকে সুনীল নিচের ঠোঁটটা দাঁত দিয়ে কামড়াতে লাগলো । সে যখন অতিরিক্ত চিন্তায় পড়ে যায়, তখন ওর এমনটা হয় । ৬০০ কোটি টাকা, এতোগুলো টাকা, কম তো নয় । আদৌ কি উদ্ধার হবে এতোগুলো টাকা ?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭