আধুনিক দাসপ্রথার অবসান হোক
দুঃসহ বেকার জীবনের অবসান ঘটাতে সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমায়। বৈধ পথে সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় তারা অবৈধ পথে দালালদের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বিদেশে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশ্বাস মাফিক চাকরি পায় না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দালালদের মাধ্যমে পাচার হওয়া কিংবা আদম বেপারির খপ্পরে পড়ে দেশছাড়া বাংলাদেশীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন ও হয়রানি। কিছুদিন আগে স্পেন যাবার সময় মরক্কোর ভূ-মধ্যসাগরে বাংলাদেশীদের সলিল সমাধির করুণ কাহিনী দেশবাসী এখনো ভুলেনি। গত ৫ জানুয়ারি পত্রিকান্তরে ইতালি ও দুবাইতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সুদানে পাচার হওয়া বাংলাদেশীদের ওপর নির্যাতনের যে করুণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। জীবজন্তু'র মতো তাদের একটি গোডাউনে রাখা হয়েছে। অর্ধাহারে-অনাহারে নির্যাতনে মৃত্যু হলে ফ্যাক্টরিতে তারা বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে বলে দাবি করা হয়। এমনকি পেট্রোল ঢেলে ১৭ জন বাংলাদেশীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, সুদানে প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে মধ্যযুগীয় পন্থায় বাংলাদেশীদের পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হয়। তাদেরকে দিয়ে করানো হয় নানা অমানবিক কাজ।।সূর্যের প্রচন্ড খরতাপে প্রতিদিন ১৮-২০ ঘণ্টা ভারী বস্তা বহন, পাথর কাটা ইত্যাদি। সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াই মাস শেষে সামান্য যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় তার তিনভাগের দুইভাগ নিয়ে যায় সুদানের হামদে কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যারা মরুভূমিতে কঠিন পরিশ্রম করতে পারে না তাদেরকে গুদামে এনে বন্দি করে অনাহারে রেখে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। এতে কেউ মারা গেলে তাকে পুঁতে ফেলা হয় মরুভূমিতে।
উল্লিখিত ঘটনাগুলো আদম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাচার হওয়া বাংলাদেশী যুবকদের দুঃসহ জীবনের খণ্ডচিত্র। দেশে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থাকা সত্ত্বেও স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশীদের ওপর এরকম অত্যাচার নিপীড়ন সত্যিই দুঃখজনক। কিছু সংখ্যক ভুয়া আদম ব্যবসায়ীর কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হোক এটা কারো কাম্য নয়। আমরা চাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আর বিদেশে চাকরির নামে বাংলাদেশীদের ওপর আধুনিক দাসত্বের অবসান হবে-এটাই প্রত্যাশা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ৯:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




