somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কঙ্কাবতীর কথা (গল্প বই)/বইমেলা-২০১৯

১২ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বইয়ের রিভিউ কীভাবে লিখা হয় বা কীভাবে সাজাতে হয় তা আমার জানা নেই। কখনো বই পড়ে রিভিউ লিখিনি। বই পড়া অনেকদিন যাবত হয় না। স্কুল কলেজ জীবন এমনকি সংসার চাকুরী জীবনেও বই পড়েছি প্রচুর। যেই না সংসার বড় হলো বাচ্চারা বড় হতে থাকলো আর অফিসের দায়িত্ব বাড়তে থাকলো সেই থেকে বই পড়া মোটেও হয় না। তবে অনলাইলে কখনো কখনো গল্প পড়া হয়ে যায়। অনেকের কবিতা পড়ি। আবার সামহোয়্যার ব্লগেও গল্প এবং সমসাময়িক লেখাগুলো পড়ে ফেলি সামান্য সময় নিজের হতে ধার করে। প্রতিবারই অসংখ্য বই কেনা হয় বইমেলা হতে। আমার সহব্লগারদের বই, নামীদামী লেখকদের বই। কিন্তু একটু আধটু পড়লেও পুরো বই শেষ করতে পারি না, এ আমার ব্যর্থতা। এবার বইমেলা থেকে বই কিনেই ভাবছি যেভাবেই হোক বই পড়বো এবং পড়বো এবং পড়বোই। যেই কথা সেই কাজ........বিসমিল্লাহ বলে প্রথমেই কঙ্কাবতীর কথা পড়তে লাগলাম............এবং পড়ে শেষও করলাম।

আমি ভাবতেই পারিনি এত সুন্দর একটা গল্প বইয়ের ভিতরে ঘাপটি মেরে বসেছিলো। আমি বাপু খুব আবেগী মানুষ। যেখানে সিনেমা নাটকের কোনো কষ্টের দৃশ্য এলে নির্দ্বিধায় কেঁদে ফেলি, কত যে লুকিয়ে চোখের পানি মুছতে হয় তার ইয়ত্তা নেই-পাশে কেউ দেখে না ফেলে হাহাহা। কঙ্গাবতী বইখানিও তেমন.....২০ পৃষ্ঠা পড়েই কেঁদে ফেলেছি। ৪০শে গিয়ে শিহরিত হয়েছি রোমাঞ্চিত হয়েছি। একটি মেয়ের জীবন, কতটা সাহসী ছিলো, কত দ্রুত নিজেকে পাল্টে ফেলতে পারে এই বই না পড়লে কেউ বুঝবে না। মানুষ অহংকারী হয়, কেউ হয় টাকায়, কেউ বিত্ত বৈভবে, কেউ হয় শিক্ষায় দীক্ষায়, জ্ঞানে গরীমায় আবার এখানে দেখা যায় একজন নারী রূপের অহংকারে নিজেকে কতটা কষ্টের অতলে নিয়ে ফেলে দিয়েছেন। প্রশংসা ভালো জিনিস, সম্মুখে প্রশংসা করলে আত্ম অহংকার বেড়ে যায় ঠিক কিন্তু তাকে সামাল দেয়ার ক্ষমতা না থাকলে সেই অহংকার জীবনের সুখের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আল্লাহ কোন কোন নারীকে এতটাই সুন্দর করে গড়ে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন এবং মনে দিয়ে দেন এক সমুদ্দুর অহংকার। সে সুন্দর অটুট থাকতো এবং একটা সুখী জীবন হতে পারতো গল্পে মেয়েটির মায়ের যদি না অহম ভিতরে বাস না করতো। প্রশংসার সম্মোহনী শক্তিতে তিনি নিজেকে রাজকুমারী ভাবতেন এবং ডুবে যেতেন কল্প গল্প গাঁথায়।

ছোট একটি মেয়ে মায়ের কত আদরের সন্তান অথচ হুটহাট তার জীবন পাল্টে যায়, মা মেয়ের সম্পর্কে ধেয়ে আসে দুরত্বের ঢেউ। সে ঢেউয়ে মা বেচে নেন আড়ম্বরপূর্ণ জীবন। একটিবারও মেয়ের কথা ভাবেন নি। নিজের রূপের অহংকারে পুড়তে পুড়তে তিনি নিজেকে পাষান হিসেবে গড়ে তুলেন এক সময়। কঙ্কাবতীর ইচ্ছে করেনি তার দাদা বাড়িতে ফিরে যাওয়ার । কারণ মায়ের কাছাকাছি থাকতে পারাটা তার কাছে বেশী প্রিয় ছিলো। কী দরদ মেশানো কথাগুলো, গল্পের লাইনগুলোতে। কান্না না এসে পারে নাকি এমন কথায়। মা না ফেরা পর্যন্ত একটি মেয়ের মায়ের জন্য অপেক্ষা উফ্ কী কষ্টদায়ক পরিস্থিতি। যে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সেই জানে কতটা কষ্ট তার বুক জুড়ে দাপটে ঘুরে বেড়ায়।

মায়েরা তো হয় মমতাময়ী, কোনো কোনো মা কেনো হয় এত পাষাণ
সেই মায়েদের গল্প পড়ে হৃদয়বাড়ি ভেঙ্গে হয় খান খান
খোঁজ রাখে না তাঁর সন্তানের, নিজ সুখেতে সুখি হয় সেই মা,
রাজকন্যার তার বাড়ে কেবল অন্তরেতে ঘা।
ছোট একটি রাজকন্যা তার, একা বসত করে
মা কেনো হয় এমনতরো, মেয়ে ফেলে থাকে অন্য ঘরে।

সকল কষ্ট উতরে উঠে মেয়েটি সাহসের সাথে উঠে দাঁড়ায়, কষ্ট বুকে না পুষে সে নিজেই নিজের মাঝে আনন্দ খুঁজে নেয়। এই গল্পের মেয়েটির সাথে আমার বেশ মিল আছে। আমিও কষ্ট ধরে রাখি না, যদিও অযস্র কষ্ট বুকের বাড়ি। কিন্তু সব ভুলে যাই অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখি নিজেকে। মেয়েটিও তেমন। শত কষ্টের মাঝেও মেয়েটি বাগানের মালি আর মায়াময়ী শিউলীকে অন্তত কাছে পায়। যার কাঁধে মাথা রেখে অন্তত মন খুলে কাঁদা যায়। ঝুমকি ফুফুর আগমন আহা ...... কী করে যে উনি মেয়েটির মন বুঝে একেবারে কাছে এসে পড়েছিলেন। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়েছি গল্পটি। আরবাজ আর দোলন দুটি সত্ত্বা কিন্তু মেয়েটির জীবনের প্রথম প্রেমই বুকের গহীনে ভালোবাসার রঙতুলিতে আঁকা। জীবনের পথে নিশ্চুপ একাকি হেঁটে যাওয়া মেয়েটির জীবনে আরও দুটো জীবন্ত চরিত্র আরবাজ আর দোলন। শত কষ্টের মাঝেও কিছু সময় কিছু উচ্ছ্বলিত মুহুর্ত, রোমাঞ্চ, প্রেম শিহরিত ক্ষণ মেয়েটিকে বারবার স্বপ্ন দেখায় কীভাবে কষ্ট নিয়েও বাঁচা যায় দু:খ ব্যথাগুলো পিছনে ঠেলে আগানো যায় কিছু সুখ মুহুর্ত নিয়ে। এমন ঘটনা অসত্য নয় আমাদের চারপাশেই এমন আরও হৃদয় দোলানো কাহিনী বিরাজমান। কেউ উঠিয়ে আনে গল্পে কেউ কবিতায়। নিপূন হাতের লিখনি শায়মা আপুর। দোলনকে দোলনের জায়গায় আরবাজকে আরবাজের জায়গায় ঠিক রেখে গল্প এগিয়ে গেছে ভাটির জলের মত সম্মুখে কূলকিনারাহীন সমুদ্দুরে নিয়েছে ঠাঁয় অবশেষে। আমার একটু আকর্ষন ছিলো মায়ের ডায়রিটার হাহাহা কী লিখা ছিলো তা জানতে মন উদগ্রীব ছিলো। গোপন সব কিছুতেই মানুষের আকর্ষণ হাহাহাহা। যাক শেষ পর্যন্ত ডায়রীটাও পড়া হয়ে গেছো....... থ্যাংকিউ আপুনি।

একটি মেয়ে জীবন গল্প, বইয়ের পাতায় পাতায়
গল্পের ভিতর গল্প ছিলো, মায়ের মলিন খাতায়।
একটি মেয়ে কাঁদে নিরব, মা-তো ছিলো পাশে
কষ্টগুলো তাকে নিয়ে, একাকিত্বে ভাসে।
একটি মেয়ে ছোট্ট মেয়ে, দু:খ বুকে পুষে
একটি নারী পুড়ে একা, রূপের আগুন তুষে।
মেয়েবেলা কষ্টে ভরা, একটি মেয়ের জীবন
একটি নারী মা হয়েও, সাজায় অন্য ভূবন।
প্রেমও আসে মেয়ের পাশে, কষ্টগুলো ভুলে
কতক স্মৃতি রাখে মেয়ে, মন ডহরে তুলে।
আপন হয়েও পর হলো, ছোট মেয়ে কাঁদে
মা হয়েও মা'টি যে তার, বাঁধা বিদ্বেষ ফাঁদে।
আরবাজ এলো মেয়ের পাশে, আগে ছিলো দোলন
সময় এসে দেয় সেঁটে দেয়, প্রেমের শেষে কোলন।
এইতো জীবন মেনে নেয়া, বাঁচা নিজের মতন
কষ্টগুলো দূর ভাগিয়ে, সুখ সাজানো যতন।

তবে আমার মনে হয় গল্পটি আরো ধীরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতো। হয়তো ফর্মা বা পাতা বেশী হয়ে যাবে এমন কোন ইচ্ছায় গল্পটি তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে। আর গল্পের ভিতর কিছু কঠিন শব্দ আছে। আরো সহজ করে বলে দিলে ভালো হতো। যাই হোক ....... এই গল্পটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে পড়েছি এবং শেষ করেছি। বইটি আরো বড় হলে আরো ভালো লাগতো। শায়মাপুকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প বই উপহার দেয়ার জন্য। আপুর হাত লিখে লিখে আরও শাণিত হোক দোয়া করছি। আরও সুন্দর গল্প বই যেনো আবারও আমরা পাই সেই দোয়াও করছি। আল্লাহ ভরসা। সেই সুবাদে প্রিয় আপিটার সাথে একবারও হলেও দেখা হবে ইনশাআল্লাহ আশা রাখি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:৩৫
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×