©কাজী ফাতেমা ছবি
=খাবে গো খাবে ব্ল্যাক টি?
তিতে মুখে তিতে কথা, ঠোঁটে তোমার নিষিন্দা,
ভালোবেসে বলছি এসব ভেবো না এসব নিন্দা;
তিতে বোল
ভুলে বেভোল,
কত যে ছড়াও সম্মুখে আমার, উফ্, নাও ব্লাক টি খাও,
শুনছো, তিতে চায়ের মূল্যে মিঠে বোল এবার আমার কাছে বিকাও।
রান্নাবান্নার কাজকর্ম এখনো কমই করি। শাশুড়ির রান্না দিয়ে শুরু সংসার। যৌথ ফ্যামিলি। শাশুড়ি ছিলেন যখন তখন শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের আনাগোনা বেশী থাকতো। আর একজন হেল্পার সব সময়ই থাকতো। তাই যারা আসতেন তারাও রান্না বান্না করে ফেলতেন। কেউ না থাকলে হয়তো এক দুই সপ্তাহ আমি রান্না করেছি। প্রথম দিকে শাশুড়ি বাড়ী গেলে রান্নার দায়িত্ব পড়তো আমার। অফিস করে রান্না করা কঠিন। খুব ভোরে উঠতে হতো। হেল্পার সব কাটাকুটি করে দিলে আমি রান্না বসাতাম। তেমন একটা ঝামেলা হয়নি।
প্রথম প্রথম রান্না বান্নায় প্রচুর ভুল হতো। একদিন রাত এগারোটায় ভাত বাড়তে গিয়ে দেখি ভাতের পাতিল নাই। মানে দুই তিনটা তরকারী রান্না করার পর আর ভাত রাঁধতে মনে ছিলো না হাহাহাহা। ভাতের বোল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করে দেখি আমি ভাতই রান্না করি না। তারপর আর কী । তখনই ভাত রান্না করলাম। খেতে খেতে রাত বারো সাড়ে বারো। এমন করেই গেছে বহু বছর। ১২ সালে দেবর বিয়ে করে। তখনো শাশুড়িই রান্না করতেন তবে কিছুটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলেন। আমি সকালের রান্না আর শাশুড়ি দুপুর আর রাত। এমন করে গেছে দুই বছর। যখন তামীমকে স্কুলে ভর্তি করালাম তখন দেখলাম সকালে রান্না করে তাকে খাইয়ে ভোরের স্কুলে নিয়ে যাওয়া কঠিন। তখন শাশুড়িকে বললাম আম্মা আমি তো সকালে রান্না করে তামীমকে স্কুলে নিয়ে যেতে কষ্ট। তখন তিনি দেবরের বউয়ের হাতে সকালের রান্নার দায়িত্ব দিলেন। হেল্পার তো আছেই, কাটাকুটি করার পর রান্না বসাতে কষ্ট লাগে না।
০২।
সেই থেকে দেবরের বউই রান্না করে সকালে আর শাশুড়ি দুইবেলা। এমন করে করে শাশুড়ির বয়স বাড়লো তিনি কোমড় নিয়ে দাঁড়াতে পারেন না আর। দেবরের বউ চাকুরীজীবী না হওয়াতে রান্নার দায়িত্ব এখন পর্যন্ত তার হাতে। মাঝে কিছুদিন সে না থাকলে আমি রান্না করি। অথবা অসুস্থ হলে আমিই রান্না করি। প্রায় তিন বছর যাবত আমাদের হেল্পার বা দৈনিক বুয়া নাই। ভাগবাটোয়ারা করে কাজ ভালোই চলছে। হেল্পারদের সাথে মুখ তিতাতিতির আর প্রয়োজন পড়েনি।
সমস্যা হলো ছোট মাছ কাটাকুটি উফ্, ভয়ংকর অবস্থা লাগে আমার। ভাল্লাগে না এত সময় ছোট মাছের পিছনে ব্যয় করতে। কিন্তু শুধু বড় মাছে কী আর চলে! সাথে ছোট মাছ লাগবেই। তাসীনের বাপকে কই কখনো হাবিজাবি মাছ আনবেন না। আনবেন হলো মলা মাছ, বাতাসি মাছ, বড় চিংড়ী, কাইক্কা, বড় টেংরা, সরপুটি যেগুলো কাটতে কষ্ট বেশী হয় না বা সময় বেশী লাগে না। আর কই মাছ আনলে কাটাইয়া আনবেন। বাইম মাছও না, শিং মাগুরও না হাহাহা।
০৩।
কয়েকদিন আগে দেবরের বউ বাড়িত গেলো, মহামুস্কিল ছোট মাছ শেষ। আনলো বাতাসী মাছ। একটা কাচি কিনেছিলাম, সবাই দেখি ইউটিউবে কাচি দিয়ে মাছ কাটে। ব্যস, ভাবলাম কাজটা সহজ হতে পারে। যে কোনো জায়গায় বসে কাটা যাবে। বয়স বাড়ছে তাই বেশীক্ষণ হাঁটু গেঁড়ে বসা যায় না। আর বেশীক্ষণ ছোট মাছ কাটলে চোখেও যন্ত্রণা হয়। সেদিন কাচি দিয়া এত্তগুলা মাছ কাটছি আর টিভি দেখছি। নিজেই অবাক খুব তাড়াতাড়ি কাটা হয়ে গেছে। এক হাত ময়লা হয়নি। কী মজা।
০৪।
যখন আমার হাতে রান্নার দায়িত্ব থাকে। আমি সবজি কাটাকুটিসহ পিঁয়াজ পানি ঝুড়ি বাটি সব একসঙ্গে নিয়া বসি। মন চাইলে চা রাখি এক কাপ। কাজ করি আর চা খাই। অতিরিক্ত গরমও খাই না। প্যাডস্টাল ফ্যান এনে ছেড়ে কাজ করি। কাজ করতে তেমন বিতৃষ্ণা লাগে না। গুছানো, জিনিসপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ভালোই লাগে। তবে সমস্যা একটাই সময় কম হাতে। অফিস থেকে গিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলে বের হইতে প্রায় ৯ টা বাজে। একজন হেল্পারের প্রয়োজনবোধ করি তখন। আসলে ছোটাছুটির কাজকর্ম করলে শরীর হালকাই লাগে। তবুও আলসেমী করি আমরা। আসলে এই ফেইসবুক, নেটজগতই এর জন্য দায়ী। আগের মত এখন পিঠা বা অন্যান্য নাস্তা করতে গিয়ে মনে হয় বিরাট ঝামেলা। কিছুই করতে মন চায় না ।
আর এই হলো ছোটখাটো বুদ্ধির কাম। আমি সাধারণত কাচি/চাকু দিয়ে সবজি পেয়াজ এসব কাটতে পারি না। আর ফ্লোরে বসে কাটলে বটি পা দিয়ে ধরে রাখা কষ্ট হয়। বেশীক্ষণ বসলে হাঁটুতে সমস্যা হয়। বটি শক্ত করে ধরে রাখার উপায় আমি এভাবে বের করছি। একটা ফিতা দিয়ে বেঁধে বসার টোলের নিচে আটকে সেটাতে বসলে বটি আর সরে যায় না। ব্যস যেমন ইচ্ছা পা ছড়িয়ে বসে কাটাকুটি করো ঝামেলা নেই। তাসীনের বাপে কয় আপনি কী শুধু এইসব হাবিজাবি কামই করছেন বিয়ার আগে। আমি নাকি আকামে সময় নষ্ট করি হুহ।
০৫।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:২৬