somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

=কনে দেখার প্রথম অভিজ্ঞতা=

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবার বাড়িতে গিয়েছিলাম ভাইয়ের ছেলের আকিকা অনুষ্ঠানে আর ছোট ভাইয়ের জন্য কনে দেখতে। কনে দেখার অভিজ্ঞতা আমার এই প্রথম।

আমাকে কনে হিসেবে একজন দেখেছিল যখন আমি কম্পিউটার বিজনেস করতাম সেই সেন্টারে। সেদিন বেটা বজ্জাত কিছু কথা বলে চলে গিয়ে বলেছিল কইন্যা বাইট্টা। তখন আমার বাংলাদেশ ব্যাংকের জব হয় নাই। যাই হোক আমার লক্ষ্যই ছিল একটা জবের। ২০০১ এ ঢুকছি বাংলাদেশ ব্যাংকে, তখন প্রশাসন বিভাগ প্রশাসন শাখায় কাজ করার সুযোগ হয় এবং সেখানকার বড় স্যার ভাবীরা তাসীনের বাপরে পাত্র হিসাবে দেখায়, সে সরাসরি কথা বলেনি আমিও না। যেহেতু একই অফিস দেখা করে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি। ভাই ভাবীরা দুলাভাইকে খবর দিয়ে এনে প্রস্তাব পাঠায় । এবং ২০০২ এ আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। কন্যা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা আমার হয় নাই আলহামদুলিল্লাহ। আর আমাদের সময় এত সাজগুজের প্রচলনও ছিল না মনে হয়। অথবা আমি গ্রামের মেয়ে বলে কোনো সাজগুজ ছাড়াই একবার কনে হিসেবে মুখ দেখাইছি আর তাসীনের বাপে এমনেই দেখছে।

যাই হোক এবার ভাইয়ের জন্য কনে দেখলাম দুই জায়গায়। প্রথম যাই বাহুবল থানায় কনে দেখতে কনেদের বাড়ী। কথামত ঘটককে সাথে নিয়ে আমরা বিকেলে পৌছিঁ তাদের বাড়ী। রাস্তার পাশেই বাড়ীটি। আমরা তিনবোন আর দুলাভাই আর ছোট বোনের জামাই আর আন্ডা বাচ্চা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম।

বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখি চারিদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, কনের বাবা এমনকি আপন চাচাও নেই। চাচাতো চাচারা আমাদের সাথে ছিলেন সারাক্ষণ। ওদের বাড়ির উঠোনটা পাকা। বাড়িগুলো এমন ভাবে করা হয়েছে যেন শহরের বাড়ীর মত মনে হয়েছে। একেবারেই গুছানো। ড্রয়িং রুমে বসে চারিদিক লক্ষ্য করলাম। দেখলাম দেয়ালের রঙের সাথে মিলিয়ে ঘরের পর্দা। উনাদের সাত আট'টা রুম হবে মনে হয়। উনারা আমাদের ড্রয়িং রুমে নাস্তা এনে দিলেন না সরাসরি নিয়ে গেলেন ডাইনিংয়ে । গ্রামের ডাইনিং হিসেবে তাদের ডাইনিং রুমটা ভালোই।

নাস্তার আইটেমগুলো খুবই সুন্দর এবং পরিপাটিভাবে টেবিলে সাজানো। অনেক নাস্তা ছিল সেদিন, পুডিং, পায়েস, নুডুলসসহ তিন চার জাতের পিঠা পুলি, আঙ্গুর আপেল থেকে ধরে পনেরো আইটেম হতে পারে আনুমানিক। সবই হাতের তৈরী ছিল। পুডিংটা বেশ লেগেছিল। ভদ্রতা প্রকাশ পেয়েছে ধাপে ধাপে। খেয়ে এসে বসলাম কনে দেখার অপেক্ষায়।

অবশেষে কনে আসলো আস্তে আস্তে করে। কিছু একটা গন্ডগোল বুঝেছিলাম। উনারা বলেছিলেন কনে ৫.২ ইঞ্চি। যাই হোক। কনেকে উনারা মেকাপ দিয়ে সাজিয়ে এনেছেন, এটা আমরা চাইছিলাম না। যাই হোক কথা বার্তা বলে কনে সহ আমরা তিনবোন ভিতরে গেলাম। কনের সাথে নানান কথা বললাম। তার কনেকে আমার আম্মা আব্বাকে দেখানোর জন্য ভিডিও কল দেয়ার সময় আমার ছোট বোন বললো বোন কিছু মনে করবেন না । তোমার জুতো খুলে ফেলো,. প্লিজ মাইন্ড করো না। কনে জুতা খোলার পর দেখলাম আমার বোনের সমান মানে আমার সমানই....... আমি আর আমার বোন দুইজনেই পাঁচফুটের নিচে। কিন্তু মেয়েটার চোখ মাশাআল্লহ, আর কী মায়াবী তার চাহনি। তিনবোনেরই কনে পছন্দ হয়ে যায় মুহূর্তে। যেহেতু কনে দেখার অভিজ্ঞতা আমার নেই আমি বললাম পরে ভেবে কথা বলতে হবে। শেষে কনের মা চাচীরা আসলেন।

গল্পের এক পর্যায়ে চা এল, উফ্ কী বলবো একেবারে আমার হাতের তৈরী চায়ের মতন। ঘন লিকার ওয়ালা চা। খেয়ে আরাম পেয়েছি। সেদিনের মত বিদেয় নিয়ে চলে আসলাম। রাতে আমাদের আলোচনায় উঠে আসলো মেয়ে খাটো এবং কালো। আমরা বোনেরা বলি মেয়ে এত কালো না কিন্তু বোন জামাইরা বজ্জাত দুইজনে কয় মেয়ে কালো খাটো। আমার ভাই বলেছে খাটো কোনো ফ্যাক্টর না আসল হলো ভদ্রতা পরিবেশ এবং তাদের আতিথেয়তা। এই আলাপ এখনো চলছে। তারাও আমাদের কথা বার্তা ফ্যামিলি পছন্দ করেছে। আমাদের বাড়ী আসতে চায়। আমরা চলে আসাতে সে সুযোগ হয়নি আর। কারণ আব্বা আম্মা বুড়ো মানুষ তারা কোনোভাবেই মেহমানদের যত্ন করতে পারবেন না। আমার ভাবতে এখন কষ্ট লাগে আমাদের ঘর দোর আর আগের মত নাই। আব্বার বয়স প্রায় নব্বই আর আম্মার বয়স ৭০ হতে পারে। দুইজনেই অসুখে আক্রান্ত। বাড়ীর জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে খালি কান্না পায়। ভাবি ভাইয়ের বউটা যেন গুছানো হয়। সেইজন্য এই কনেকে বেশী পছন্দ হয়েছে। কারণ তাদের বাড়ীঘর খুব সুন্দর গুছানো। কিন্তু আরেকটা জিনিসের জন্য আমার মন খারাপ হয়েছিল। এত সুন্দর বাড়িতে ফুলগাছ লাগানো হয়নি একটাও।

০২।

পরেরদিন গেলাম আমুবাগান চুনারুঘাট এ পাত্রী দেখতে। আমরাই আবার গেলাম কনে দেখতে। কনের বাবা রিটায়ার্ড আর্মি পার্সন, বড় দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ব্যবসা করেন। কনের বাড়ীতে ঢুকেই মন খারাপ হয়, যেদিকে ঢুকবো উঠোনের মাঝামাঝি দেখলাম মেয়েদের কাপড় টানানো আর মেয়েদের সালোয়ার এমনভাবে রোদে দেয়া হয়েছে দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেছে। আরে বাবা আমরা এসব কাপড় তুলে উঠোন পার হয়ে তোমাদের ঘরে যাবো। যেহেতু আগে থেকেই জান আমরা আসবো পাত্রী দেখতে। যাই হোক , পাকা বাড়ীর ড্রইং রুমে বসতে দিল, বসেই দেখি সোফার পাশে বিছানা আর সেই বিছানায় মশারীর তিন ডানা টানানো। যেহেতু পাত্রী দেখতে যাবো মশারীটা খোলা উচিত ছিল। মশারী খোলা হলো না দেখে আবার মন খারাপ হল।

আমরা বসার পর প্রথমেই কনের মা আসলেন। আমাদের এমন পরিবেশ বাহির থেকে কেউ আসলে আগে ছেলেরা যায় দেখা করতে। কিন্তু সেখানে কনের মাই আসলেন আগে এখানে দুলাভাই আর ছোট বোন জামাই ছিলেন। তারপর নাস্তা আসলো। ইয়া মাবুদ সমোচা দেখি বাজারের কেনা, সাথে দিলেন খেজুর আর আপেল। আপেলগুলো কাটাও হয়নি। বিচি সহ আপেলের আগা পাছা না কেটেই। বুঝলাম ধন থাকলেই রুচি হয় না অনেকের। শেষে পাস্তা দিলেন ঘরের বানানো সেটাও মুখে তোলা যায়নি।

তারপর কনে দেখতে আমরা ভিতরের রুমে চলে গেলাম। কনে ৫.২ লম্বা। মাত্র ইন্টার পরীক্ষা দিছে আমার বড় ছেলের সাথে। সে মেয়েটি মেকাপ করেনি। কিন্তু চেহারায় খুব মায়া লুকানো। এত ফর্সা না তবে কালোও না। উনাদের সব বোনের দেখলাম মাঝখানে দাঁত ফাক। সেটার জন্য আবার বিশ্রিও লাগছিল না। মেয়ের হাতে ধরে দেখি সে ঘেমে যাচ্ছে। ছোট বোন বললো বইন তুমি ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন, তুমিও আমাদের বোন নো টেনশন।

এক পর্যায়ে চা আসলো, উনারা চাও সঠিক বানাতে পারলেন না। এক চুমুক দিয়ে সবাই রেখে দিলাম। অনেক কথা বার্তার পর চলে এলাম বাড়ীতে। এদের পরিবেশ দেখে আমাদের পছন্দ হয়নি তাই কথা আগে বাড়লো না আর।

আসলে এগুলো কারো বদনাম না, ধন সম্পত্তি থাকলেই হবে না। রুচি থাকতে হবে। গুছানো হতে হবে। ভদ্রতা মনে হয় এটাকেই বলে। পাত্রী দেখতে গেলে কত কিছু বিবেচনা করতে হয় মাগো মা। একেকজনের ভাবনা চিন্তা একেকরমের। এমনিতে দেখি হাজার লক্ষ মেয়ে, লক্ষ লক্ষ ছেলে যেই না পাত্র পাত্রি দেখতে যাওয়া হয় তখন দেখা যায় পাত্রও নাই পাত্রীও নাই। এটা আমার প্রথম কনে দেখার অভিজ্ঞতা। প্লিজ যা সত্য ঘটেছিল তাই বললাম এখানে কোনো পরিবারকে ছোট করার প্রয়াস ছিল না। অনেকের এমন অভিজ্ঞতা আছে হয়তো। আবারও বলছি এসব আমার অভিজ্ঞতা কারো বদনাম নয়।

সবচেয়ে বড় সত্য হল, জন্ম মৃত্যু বিয়ে সব আল্লাহর হাতে। আমার ভাইয়ের জোড়া যার সাথে, তার সাথেই ইংশাআল্লহ বিয়ে হবে। আমাদের দেখা অদেখায় কিছুই হবে না যদি না আল্লাহর ইচ্ছা থাকে।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৩০
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×