©কাজী ফাতেমা ছবি
#গাঁয়ের_মেয়েদের_জীবন_গদ্য
দিনভর কাজের ভিতরে নিজেকে ডুবালেই মানুষ ভুলে যায় তার চাহিদা, অপূর্ণতা। এখানে অবসর নেই কারো, শীত কী গ্রীষ্ম কাক ডাকা ভোরে মানুষরা জেগে উঠে আযানের সুরে। আড়মোড়া ঘুম ভেঙ্গে ওযুতে ভাসিয়ে দেয় ঘুমের যত ক্লান্তি। মাটির চুলায় লাকড়ির আগুনে টগবগ ভাতের ফেন উতলায়, চুলোর সম্মুখ বসে গৃহিনী খড় শুকনো পাতা অথবা গাছের ডাল ঠেলে দিয়ে ফের ব্যস্ত হয় ক্ষেত থেকে তুলে আনা সব্জি কাটায়। পাটায় মসলা বেটে ক্লান্ত গৃহিনীর কপালে বিন্দু সুখ ঘাম ফুটে উঠে। ধুয়া ওড়া প্রহরে চুলোর আগুনে পুড়ে যায় ক্ষিধে যত।
তৃপ্তিতে খেয়ে কর্তা আর সন্তানরা চলে যায় যে যার মত। পিছনে রেখে যায় এঁটো থালাবাটি মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো ভাত আর গৃহিনীর জন্য আরও এক বস্তা ক্লান্তি। ব্যস্ততা সব তাকে ঘিরে হাসে অতৃপ্তির হাসি। চাপকল টিপে টিপে যেটুকু কষ্টের জল, নিমেষেই মাটি শুষে নেয় আর গৃহিনী আঁচলে ঘাম মুছে উঠে দাঁড়ায় জীবন অথবা পেটের তোষামোদকারী সব আয়োজন গুছাতে।
অতঃপর গৃহিনী আলতো হেঁটে যায় গোয়াল ঘরে, কোদাল হাতে গোবর টুকরিতে ভরে ফেলে আসে গোবরের খনিতে। হাঁস মুরগীর ঘর পরিস্কার শেষে কপালের ঘাম মুছে হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায় নিরবে পুকুর পানে। দীর্ঘশ্বাস জলে ঢেলে সে ফিরে আসে।
সময় চলে যায়, সে উঠে দাঁড়ায়, বিছানার এক কোণে বসে,আয়েসে ছরতার মাঝখনে সুপারী রেখে কুটুস কাটুস শব্দে মুখে পুড়ে এক খিলি পান জর্দা চুন, চিবুতে চিবুতে ফের ব্যস্ত হওয়ার বাহানায় গিয়ে দাঁড়ায় উঠোনে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে এখান সেখান থেকে লাকড়ি জোগাড়ে হয় মত্ত। দুপুরে পেট আয়োজনে তাকে আবার হতে হবে ব্যস্ত।
সেই একই কাজ সেই একই আয়োজনে গৃহিনী নিজেকে ব্যস্ত রেখে খুঁজে এক পসলা অবসর। দুপুরের ক্লান্তি পুকুরে ঢেলে আটপৌরে শাড়িতে নিজেকে গুছিয়ে জায়নামাজে,দাঁড়িয়ে শোকর গুজার করে প্রভুর। অথচ এই ব্যস্ততাই তাকে ভুলিয়ে দিয়েছে অঢেল চাহিদা, অসুখ অপূর্ণতা। দুপুর শেষে রোদে বসে উকুনের চিড়ুনিতে চুল আঁচড়িয়ে দেখে নেয় কে কে তার রক্ত মাংস খুবলে খুবলে খায়। সেই ছোট প্রাণীটিকে নখে তোলে পটাস করে মারার যে কী আনন্দ তা গৃহিনীর চোখেই ভেসে উঠে।
দুপুর গড়ায় বিকেল সেই একই ব্যস্ততা। রাতের খাওয়ার আয়োজন শেষে, গৃহিনী বসে পড়ে তার ক্লান্তি কেড়ে নেওয়া সেই খাদ্যের ছাল ছাড়াতে। কেটে যায় দিন কেটে যায় রাত। তার মনের চাহিদা তার অপূর্ণতা কেউ খুঁজে না। না স্বামি না সন্তানরা। সে যার মত স্বার্থের ঝুলি খুলে হেঁটে যায় অন্য সুখ খুঁজতে। এইতো জীবন, গাঁও গেরামের জীবন। মেয়েরা বেঁচে থাকে অন্যের স্বার্থে নিজেদের ইচ্ছেগুলো সব জলাঞ্জলি দিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:৪৯