somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক্য মতবাদ

২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Atheist শব্দের অর্থ Disbelief in the existence of God , অর্থাৎ নাস্তিক শব্দের অর্থ—যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা । এটাই বিশ্বজনীন মতবাদ অর্থাৎ এই মতবাদ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ।

বৈদিক সাহিত্য অবশ্য ‘নাস্তিক’ শব্দের একটু অন্যধরনের বিস্তৃত অর্থ তৈরি করেছে । যথা-
১) যে বেদ মানেনা
২) যে বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বর-সৃষ্ট মনে করেনা
৩ যে বেদকে অভ্রান্ত মানেনা
৪) যে দেশাচার মানেনা
৫) যে পরলোকে বিশ্বাস করেনা
৬) যে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা ।

বৈ্দিক সাহিত্যে ৬ টি শ্রেনীর নাস্তিকের কথা বলেছে , ১) মাধ্যমিক ২) যোগাচার ৩) সৌত্রান্তিক ৪) বৈভাষিক ৫) চার্বাক ৬) দিগম্বর ।

প্রাচীন ভারতীয় দর্শন বলতে যে চিন্তাধারা বোঝায় , তা প্রধানত নিরীশ্বরবাদী । কথাটা একটু নতুন শোনালেও এটাই সত্যি , একশ শতাংশ সত্যি ।

খবরের কাগজ পড়ে আমরা ততোটুকুই জানতে পারি, যা জানান হয়, ছাপা হয় । চাপা খবর আমরা পাইনা । ঠিক তেমনি বেশির ভাগ ‘ভারতীয় দার্শনিক’ যতটা ছেপেছেন , তার চেয়ে বেশি চেপেছেন ও বিকৃত করেছেন ।

বেদ এ কথাই বলে যে , বাঞ্ছিত ফল পেতে যজ্ঞই একমাত্র সত্য, দেবতার কোনও ভুমিকা নেই । দেবতা ফল দিতেও পারেনা , ফল লাভ বন্দ্ধও করতে পারেনা । বৈ্দিক যজ্ঞ নীতি ব্রাহ্মণ তার প্রমান । তাহলে দেবতা বা ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন । বৈ্দিক সাহিত্য একেশ্বরবাদীত নয়ই এমনকি ঈশ্বরকে সমস্ত কিছুর নিয়ন্তা বলে মনে করেনা ।

সাংখ্য ঃ
সাংখ্য দর্শনকে ভারতের প্রাচীনতম দর্শন বলে মনে করেন ভারতীয় দার্শনিকেরা এবং তথাকথিত পন্ডিতেরা । সাংখ্য দর্শন নিরীশ্বরবাদী দর্শন । এখানেই শেষ নয়, সাংখ্য দর্শন মুলত বস্তুবাদী দর্শন । সাংখ্য দর্শন যে একটি প্রাচীন মতবাদ , তার প্রমান –উপনিষদ সমুহে ও মহাভারতে সাংখ্য দর্শনের উল্লেখ আছে । গৌতম বুদ্ধ গৃহত্যাগের পরে সাংখ্য দর্শন অধ্যয়ন করেছিলেন বলে মনে হয় । কারন সাংখ্য দার্শনিক কপিল ছিলেন গৌতম বুদ্ধের উত্তরসুরী এবং বৌদ্ধ ধর্মের উপর সাংখ্য দর্শনের প্রভাব স্পস্ট ।

কপিল তার সাংখ্যে ব্রহ্ম বা পরমাত্মাকে স্থান দেননি । তার মতে, প্রকৃতি নিত্য , সমস্ত জাগতিক পদার্থ তারই পরিবর্তনের ফলে উতপন্ন ।

নিরীশ্বরবাদী কপিল মুনি হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে ঈশ্বরের পরম্ভক্ত মুনি হিসেবে পুজিত হচ্ছেন—এটাই দুঃখ । ইতিহাস বিকৃতিকে দেখার দুঃখ । পুনঃপুন প্রচারের বদৌলতে বিকৃতকারী ও বিক্রিতকারীদের আলোকিত হতে দেখার দুঃখ ।

মীমাংসা ঃ

ভারতবর্ষে আরও একটি প্রাচীন ও অত্যান্ত শক্তিশালী দর্শন হোল মীমাংসা । মিমাংসাবাদীরা স্পস্টতই নিরীশ্বরবাদী । মীমাংসক কুমারিল ভট্টের রচিত শ্লকবাতিক থেকে আমরা মীমাংসা দর্শনের কিছু মতামত এখানে তুলে ধরছি ।
১) কেও যদি বলেন, এই বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আগে থেকেই ঈশ্বর ছিলেন , তবে তাঁকে প্রশ্ন করা যেতে পারে , সৃষ্টি না থাকলে স্থান থাকেনা , স্থান না থাকলে ঈশ্বর তখন কোথায় থাকতেন ?

২) ঈশ্বর নিরাকার ছিলেন নাকি তার আকার ছিল , দেহ ছিল ? দেহ থাকলে সেই দেহের নিশ্চয়ই একজন স্রষ্টা ছিলেন ।

৩) ঈশ্বর সৃষ্টির জন্য নিশ্চয় আরেকজন ঈশ্বরের প্রয়োজন ছিল , সেই ঈশ্বরকে সৃষ্টি করতে আরও একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন ছিল , এইভাবে অনন্ত ঈশ্বরের প্রয়োজন হতেই থাকবে , যেটা অগ্রহণযোগ্য ।

৪) কোন উপাদান দিয়ে তিনি বিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন ? সেই উপাদানগুলো কি সেই উপাদান গুলো কি সৃষ্টির আগে থেকেই বর্তমান ছিল ? থাকলে সেই গুলো কোথায় কী অবস্থায় ছিল ?

৫) সৃষ্টির উপাদানগুলোর স্রষ্টা কে ?

৬) যদি ঈশ্বর তার দেহ থেকেই এই উপাদান তৈরি করে থাকে তবু প্রশ্ন থেকে যায়, সেই ঈশ্বরের দেহের স্রষ্টা কে ? একের পর এক ঈশ্বর আনলেও এর উত্তর মিল্বেনা ।

৭) ঈশ্বর কেন জগত সৃষ্টি করলেন ? কী অভাববোধ থেকে এই সৃষ্টি ? ঈশ্বরের অভাববোধ থাকার অর্থ তিনি পূর্ণ নন ।

৮) এই সৃষ্টিকে লীলা বললে ,বলতেই হয় ঈশ্বর দায়িত্বজ্ঞানহীন ।

৯) ঈশ্বর যদি করুণা থেকে জগত সৃষ্টি করে থাকেন , তাহলে জগতে এতো দুঃখ কেন ?
ঈশ্বর বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ঙ্কর আক্রমন আর কোনও দর্শনই সেই সময় হানতে পারেনি ।

স্বভাববাদ ঃ

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের যুগে আরও একটি যুক্তিমনস্ক মতবাদ উঠে এসেছিল , মতবাদটির নাম ‘স্বভাববাদ’ । স্বভাববাদের উল্লেখ আমরা পাই মহাভারতে, বৌদ্ধ লঙ্কাওবতার সুত্রে ও অশ্বঘোষের বুদ্ধ চরিত এ । স্বভাববাদ স্পস্টতই একটি যুক্তিমনস্ক মতবাদ । এই মতবাদ অনুসারে

১) বিশ্বপ্রকৃতি কার্যকারণের নিয়ম শ্রেংখলে বাঁধা ।

২) একটি বিশেষ ধরনের কাজের বা ঘটনার পিছনে একটি বিশেষ ধরনের কারন থাকে । যেমন মাটি থেকে মৃৎপাত্র-ই হতে পারে , পরিধেয় বস্ত্র নয় ,

৩) কারনহীন অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটা সম্ভব নয় ।

স্বভাববাদীরাও ছিলেন অতিপ্রাকৃতে অবিশ্বাসী নিরীশ্বরবাদী ।

বৌদ্ধ মতব

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×