somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। সেদিন লাখো জনতার সামনে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছিলেন, বাংলার জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামের শ্রেষ্ঠ নির্দেশনা হিসেবে তা গ্রহণ করেন।


তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি গ্রেফতার হই বা নাও থাকি তাহলে তোমরা ঘরে বসে থাকবেনা….তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রূর মোকাবেলা করবে”। বঙ্গবন্ধুর এ দির্দেশনামূলক ভাষণের পর বাঙালি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে হঠাৎ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাজারো মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার মাটি। বঙ্গবন্ধু তথা জাতির পিতাকে ওই রাতেই গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানের কারাগারে।
পরে শুরু হয় মহান মুক্তির সংগ্রাম। বাংলার দামাল ছেলেরা যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে। বাংলার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিজয় অর্জিত হয়।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হবার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তা ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামের জহুরুল আহমেদ চৌধুরীকে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী স্বকন্ঠে প্রচার করেন। ২৬শে মার্চ ঐ রাতেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসতে বলা হয়, তা না হলে তাঁকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু সাফ জানিয়ে দেন, বাঙালির অধিকার ছাড়া তিনি কোন কিছু মানবেন না। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে করাচীতে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের লায়ালপুর মিয়ানওয়ালী কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এরপর হতে মুক্তির আগপযর্ন্ত পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
১৯৭১ সালের ৩রা আগস্ট পাকিস্তান টেলিভিশন থেকে বলা হয় ১১ আগষ্ট থেকে সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু হবে। এই ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ এবং উদ্বেগের ঝড় বয়ে যায়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রবাসী বাঙালীরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইডকে ইসলামাবাদে পাঠান। কিন্তু পাকিস্তানী জান্তা সরকার বিদেশী আইনজীবী নিয়োগে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। ১৯৭১ সালের ১০ই আগস্ট পাকিস্তানী জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধুর পক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী একে ব্রোহীকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে যখন ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানের ভাষণের টেপ শোনানো হয় । তখন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে অস্বীকার করেন এবং আইনজীবী ব্রোহীকে অব্যহতি দেন। ১৯৭১ সালের ১১ই নভেম্বর বঙ্গবন্ধুকে ইয়াহিয়া খানের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়ার সংগে ছিলেন ভূট্টো এবং জেনারেল আকবর। ইয়াহিয়া করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালে বঙ্গবন্ধু বলেন ‘দুঃখিত ও হাতে বাঙালীর রক্ত লেগে আছে ও হাত আমি স্পর্শ করবো না’। ঐ সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরী হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবতা স্পর্শ করতে থাকে। এ সময় অনিবার্য বিজয়ের দিকে এগুতে থাকে আমাদের মহান মুক্তির সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধ।
১৯৭১ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির সংগ্রাম যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন লায়ালপুর কারাগারে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সংগে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ঐ সমঝোতার প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ঘৃর্ণাভরে প্রত্যাখান করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ত্রিশ লাখ শহীদ এবং তিন লাখ মা বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে আসে আমাদের বিজয়। বাঙালী জাতি মুক্ত হয় পরাধীনতার শৃংখল থেকে। কিন্তু মুক্তির অপূর্ণতা রয়ে যায় , কারণ স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালীর নয়নমণি জাতির জনক তখনও পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের নির্জন-অন্ধকার কারাগারে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর বিচার। এতে তার ফাঁসির আদেশ হয়। কারাগারের যে সেলে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের পাশে কবরও খোঁড়া হয়েছিল। তিনিই সেই বঙ্গবন্ধু যিনি, নির্জন সেলের সামনে কবর খুঁড়তে দেখেও ভয় পাননি; বরং পাক জেলারকে বলেছিলেন,“আমি বাঙালী, আমি মুসলমান, আমি মানুষ। মানুষ একবারই মরে, বারবার মরে না। আমি কখনোই আত্মসমর্পণ করব না। যদি তোমরা আমাকে মেরে ফেলো, মৃত্যুর পর আমার লাশটা আমার দেশে আমার মানুষদের কাছে পৌঁছাইয়া দিও।”
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি ও প্রহসনের বিচার বন্ধ করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিশ্ব জনমতের চাপের মুখে স্বৈরাচার পাকিস্তানি সরকার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে সাহস পায়নি। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত হয়। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান হানাদার সরকার সদ্য ভূমিষ্ঠ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাণপ্রিয় নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
১৯৭২ সালের ৩রা জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভূট্টো করাচীতে ঘোষণা করেন ‘শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হবে’। ১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পান।

পাকিস্তানে বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি আজকের এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান এবং তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন।

শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। এদিন তাঁকে ও কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তাঁরা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে তিনি পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন।
বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাঁদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।


শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাঁকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।


"শেষ হাসি যার,প্রকৃত বিজয় তার"
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×