somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিডেটিভ

১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি আর আয়না ছাড়া নিজেকে এত কাছ থেকে দেখছি এই প্রথমবার। কানে এখনও হেডফোন, গান চলছে “কার পায়ে নূপুর বাজে .......।” আমি মারা গেছি এই তো মিনিট তিনেক। আমার দেহটা বেশ আরামেই ঘুমাচ্ছে বলে মনে হবে সকলের। পার্থর কাছে ঝগঝ যেতে আরো তিন ঘণ্টা বাকি। এখন রাত ৩:৩০। আমার দেহ শুয়ে আছে। একটা মশা এসে বসেছে মুখের ওপর। বেঁচে থাকলে হয়তো মেরেই দিতাম। আমি আমার দেহটাকে দেখছি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, তাছাড়া সময় কাটবে কী করে। মরে গেলে সময়টা আরও দীর্ঘ মনে হয়। কই, ওর জন্য যখন রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতাম, তখন তো মনে হতো, এই তো এই তোÑ কেবল দাড়ালাম। মশাটা উড়ে গেছে। দেহটা আবার দেখলাম আমি, চশমাটা পাশেই আছে। এখন অবশ্য দেখতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পার্থর কাছে ঝগঝ চলে গেল। ঘুমোতে যাবার আগে, যখন বেঁচে ছিলাম, তখনই টাইমার ঝগঝ-টা লিখেছিলাম। পার্থ আমার সবচেয়ে লম্বা ও সবচেয়ে ভালো বন্ধু । আমার এমন কিছু নেই যা ওর সাথে শেয়ার করি নি। আজ রাতে যে একুশটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে পড়ে আছি, ও আজ সকালেই জেনে যাবে। আব্বা উঠেছেন, কান থেকে হেডফোন খুলে নিয়ে ঘুড়িয়ে রাখলেন। ৪:৩০ মিনিটে যে আব্বা উঠেন, তা আগেই জানি। আব্বাকে দেখে খুব কান্না পাচ্ছে আমার। আত্মাদের বুঝি কান্নার শক্তি নেই। আব্বা আম্মাকে তোলার জন্য চলে যাচ্ছেন। আযান হচ্ছে। “এই রিফাত! এই ওঠ! ওঠ না!” আম্মা ডাকছেন। গায়ে হাত পড়ামাত্রই আম্মার মুখটা বদলে যায়। ভয় .......... প্রচণ্ড ভয়। হ্যাঁ, আম্মাই প্রথম বুঝলেন ব্যাপারটা। আম্মা কাঁদতে শুরু করেছেন খুব জোরে। আমি এখানে আর থাকতে পারলাম না। ছোট ভাই দুটিও অঝোরে কাঁদছে। “পার্থ, এই কেমন আছিস রে? ওঠ না ওঠ!” ধাক্কা দেয় পার্থকে। কাজ হবে না। আমি এই মুহূর্তে দুর্বল আত্মামাত্র। পার্থ নড়াচড়া করছে। উঠবে মনে হয়। ৮:১০ বাজে। কেমন করে জানি চলে এসেছি। এত্তো দূরে। খুব কষ্ট হতো আসতে এখানে, যখন বেঁচে ছিলাম। মোবাইলটাতে হাত দেয় ও, আধবোজা চোখ নিয়ে সময়টা দেখেই লাফিয়ে ওঠে। চোখ মুছতে মুছতে sms টা পড়ে ও। “Partho, ami toke sms korlam shesh barer moto. Tui jokhon porbi, ami tokhon sidetiv hoye mora gesi. Last ekta onurodh, kosom amar, kau-k bolish na, kau-k na. Shon tor r ekta kaj ase, seta holo amar physics boi-er 289 page-e j chithi-ta ase, seta RUPA-k dish. Pls.... R ha, kau-k bolish na egula...... bye. Ami tor challenge here gelam. Ami parlam na.” পার্থ হাসছে। উচ্চারণ করে বলে উঠলো, “ব্যাটা ফাজিল।” ফোন দিতে দেখেউ বুঝলাম যে ও আমাকেই ফোন দিচ্ছে। হ্যালো। ...............। কি! ...............। কীভাবে আংকেল? ...............। আচ্ছা আমি আসতেছি। আব্বা ধরেছিলেন বোধ হয়. পার্থ ওর লাল সাইকেলটা নিয়ে বের হয়েছে। আমি এখন রাফির পাশে, ফেসবুক ঘাটছে ও। আমার একটা স্ট্যাটাস-এ লাইক দিল ও “Her face was full of emotions, but Her smile was eruel.”” ওর চয়ের কাপটা থেকে সুগন্ধ আসছে, খুব খেতে ইচ্ছে করছে, পারছি না আমি। পার্থ যে এভাবে কাঁদতে পারে এই প্রথম দেখলাম। আমার শরীরটা আঁকড়ে ধরেছে ও। সাকিব এসেছে, হ্যাঁ ঐ তো তুর্জ। সবাই কি জানে ‘জোকার’-টা গেছে? পার্থ ফিজিক্স বইয়ের ২৮৯ পৃষ্ঠা থেকে চিঠিটা সন্তর্পনে বের করে নেয়। ও একমাত্র সাক্ষি। আমি জানি ও বলবেনা। সবাই ভাববে ঘুমের ভেতরে মৃত্যু। নিশ্চিত জান্নাত। আচ্ছা আমি কিসে যাব? জান্নাত, না কি জাহান্নামে? পার্থের সাথেই আছি। শনিবার ১০:৩০-এ রূপার পড়া। পার্থ ওকে চিঠিটা দেবে ঐ ফার্মেসির মোড়টায়। ওর চোখ কালো। এখন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে ও। আমি দেখলাম রূপা আসছে। পার্থ চোখ মুছলো জামার হাতায়। এই রুপা। জ্বি বলেন। এটা তোমার। কী এটা? রিফাত দিয়েছে। ও। রূপা হাসেÑ আচ্ছা আমি যাই। আব্বা ভাইয়াকে ফোন করেছেন, উনি আসবেন পরশু; তার পরেই আমার দাফন। আমাকে এখন হাসপাতালের লাশঘরে রাখা। আরও দুটি লাশ দেখছি। একটা বাচ্চার লাশও আছে। আমি কি যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারছি, না কি কেউ একজন আমাকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে? আমি এখন রূপার ঘরে, ও এখন বুকের নিচে বালিশটা রেখে কাঁদছে। চাপা ভাবে মুখটা লাল হয়ে গেছে ওর। ও চিঠিটা আবার পড়ে। “শেষ পর্যন্ত উত্তরটা “না” শুনে আর পারলাম না বেঁচে থাকতে, রূপা। নিজেকে খুব তুচ্ছ লাগছে। আমি যাই, আর আসব না বিরক্ত করতে।” ওর চোখের পানি পড়ে এক ফোঁটা, আমার লেখা চিঠির উপর। ডায়রি নিয়ে বসে ও। লিখতে পারে না। ফ্যানের বাতাসে পেইজগুলি উড়ছে। আমি পড়তে চেষ্টা করছি, পারছি না। ও কলম তুলে নেয় হাতে; লেখে, “খুব বড় ভুল হয়ে গেছে আমার, কেন এই মিথ্যাটা ওকে বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমিও তো ওকে চাইতাম। এত আভিমান ওর! এত আভিমান? ও কি আমাকে দেখে বোঝে নি তাহলে কখনো? এখন আমার কি হবে? আমিও কি সিডেটিভ হব? সিডেটিভ!!” কান্নায় ঢলে পড়ে ও। খুব ইচ্ছে হচ্ছে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে, পারছি না অমি; চোখ ফেটে কাঁদছে। ও কাঁদুক না, কাঁদুক ......; আজ ওরই কাঁদার দিন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×