আজকে একটা গল্প বলি ।
আমার খুব চেনা, খুব কাছের একজন মানুষের গল্প। একজন সাদামাটা মানুষের গল্প। একজন বাবার গল্প, হ্যাঁ আমার বাবার গল্প।
শুনেছি আব্বুর ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রম করে বেড়ে উঠেছেন। “লজিং মাস্টার” বিষয়টা এখনকার যুগের মানুষের কাছে অপরিচিত হতে পারে, কিন্তু যারা জানেন তারা সহজেই বুঝতে পারবেন লজিং মাস্টার কি! সারঃসক্ষেপে যদি বলি , এটা হলো 'শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য'।
আমার বাবা গেরস্ত বাড়ির সন্তান হয়েও লজিং মাস্টার থেকেছেন। পরিশ্রমের ফল সুমিষ্ট হয়, আব্বুর সাথেও ঠিক তাই হয়েছে, আমার আব্বু আমাদের গ্রামের প্রথম স্নাতকত্তর পর্ব পেরুনো ব্যক্তি।
কর্মজীবনে প্রথমে শিক্ষকতা পরবর্তীতে এডভোকেট হিসেবে কাজ করে কেটেছে দীর্ঘ চল্লিশ বছর। তারপরও অনেকটা সাদামাটাই কেটেছে আমাদের জীবন। আর সেটা অবশ্যই আমার বাবার কর্মের প্রতি একনিষ্ঠতা আর তাঁর সততার জন্য। আর তাই বাবার হাত ধরে আমারো বেড়ে ওঠা একটা সাদামাটা মধ্যবিত্ত পরিবারে
মধ্যবিত্ত পরিবারের ঐ যে হয় আর কি! হাজার হাজার স্বপ্ন, কিন্তু সেই স্বপ্ন ছুঁতে পোহাতে হয় এক সহস্র দুর্গম পথ…
আমার সাথেও ব্যতিক্রম হয় নি। দীর্ঘ ৬ টা বছর আমি অর্থের অভাবে আমার পড়াশুনো চালাতে। এই ৬ টা বছর আমার কাছে মনে হচ্ছিলো যেন কয়েক যুগ। আশেপাশের মানুষের নানা কটু কথা, নানা হাস্যরসাত্বক বিষয়ে যেন পরিণত হয়েছিলাম আমি। চাপা এক বুক কষ্ট নিয়ে কেটেছে রাতের পর রাত। আব্বুর উপর অনেক অভিমান হত জানেন! কেন তিনি অন্যদের মত হলেন না, তাহলে কি আমার এত কষ্ট পেতে হত?
কেন তাকেই এত সৎ হতে হবে? দুনিয়ায় কি মানুষ কমতি ছিল?
আব্বুকে হারিয়েছি। আব্বু নাই আসলে মন কে বিশ্বাস করাতে পারিনা। একটু পর পর মনেহয় আমার বাবাটা আমাকে ডাকবে। আমাকে একটু শাশন করবে। আমাকে এটা ওটা করতে নিষেধ করবে!
কিন্তু না! আমার আব্বুটা চিরতরে যে চলে গেছেন। শুধু একটাই আফসোস লাগে মাঝেমাঝে, আমাকে প্রতিষ্ঠিত বা ভালো কোথাও দেখে যেতে পারলেন না…
আজ আমার আব্বুর জন্মদিন। আমার আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ্ তায়ালা যেন আমার আব্বুকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:২৬