somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় কবিতা

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাহুর প্রেম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শুনেছি আমারে ভালো ই লাগে না ,
নাই-বা লাগিল তোর ,
কঠিন বাঁধনে চরণ বেড়িয়া
চিরকাল তোরে রব আঁকড়িয়া
লৌহশৃঙ্খলের ডোর ।
তুই তো আমার বন্দী অভাগিনী
বাঁধিয়াছি কারাগারে ,
প্রাণের শৃঙ্খল দিয়েছি প্রাণেতে
দেখি কে খুলিতে পারে ।

জগৎ-মাঝারে যেথায় বেড়াবি ,
যেথায় বসিবি , যেথায় দাঁড়াবি ,
কি বসন্ত শীতে দিবসে নিশীথে
সাথে সাথে তোর থাকিবে বাজিতে
এ পাষাণ প্রাণ অনন্ত শৃঙ্খল
চরণ জড়ায়ে ধ'রে ।
এক বার তোরে দেখেছি যখন
কেমনে এড়াবি মোরে ।
চাও নাই চাও , ডাক নাই ডাক ,
কাছেতে আমার থাক নাই থাক ,
যাব সাথে সাথে , রব পায় পায় ,
রব গায় গায় মিশি —
এ বিষাদ ঘোর , এ আঁধার মুখ ,
হতাশ নিশ্বাস , এই ভাঙা বুক ,
ভাঙা বাদ্য-সম বাজিবে কেবল
সাথে সাথে দিবানিশি ।
অনন্ত কালের সঙ্গী আমি তোর
আমি যে রে তোর ছায়া —
কিবা সে রোদনে কিবা সে হাসিতে
দেখিতে পাইবি কখনো পাশেতে ,
কখনো সমুখে কখনো পশ্চাতে ,
আমার আঁধার কায়া ।
গভীর নিশীথে একাকী যখন
বসিয়া মলিন প্রাণে ,
চমকি উঠিয়া দেখিবি তরাসে
আমিও রয়েছি বসে তোর পাশে
চেয়ে তোর মুখপানে ।
যে দিকেই তুই ফিরাবি বয়ান
সেই দিকে আমি ফিরাব নয়ান ,
যে দিকে চাহিবি আকাশে আমার
আঁধার মুরতি আঁকা ।
সকলি পড়িবে আমার আড়ালে ,
জগৎ পড়িবে ঢাকা ।
দুঃস্বপ্নের মতো , দুর্ভাবনাসম ,
তোমারে রহিব ঘিরে —
দিবস-রজনী এ মুখ দেখিব
তোমার নয়ননীরে ।
বিশীর্ণকঙ্কাল চিরভিক্ষাসম
দাঁড়ায়ে সম্মুখে তোর
‘ দাও দাও ' বলে কেবলি ডাকিব
ফেলিব নয়নলোর ।
কেবলি সাধিব , কেবলি কাঁদিব ,
কেবলি ফেলিব শ্বাস —
কানের কাছেতে প্রাণের কাছেতে
করিব রে হা-হুতাশ ।
মোর এক নাম কেবলি বসিয়া
জপিব কানেতে তব ,
কাঁটার মতন দিবস রজনী
পায়েতে বিঁধিয়ে রব ।
পূর্বজনমের অভিশাপ-সম
রব আমি কাছে কাছে ,
ভাবী জনমের অদৃষ্টের মতো
বেড়াইব পাছে পাছে ।
ঢালিয়া আমার প্রাণের আঁধার
বেড়িয়া রাখিব তোর চারি ধার
নিশীথ রচনা করি ।
কাছেতে দাঁড়ায়ে প্রেতের মতন
শুধু দুটি প্রাণী করিব যাপন
অনন্ত সে বিভাবরী ।
যেন রে অকূল সাগর-মাঝারে
ডুবেছে জগৎ-তরী —
তারি মাঝে শুধু মোরা দুটি প্রাণী
রয়েছি জড়ায়ে তোর বাহুখানি ,
যুঝিস ছাড়াতে , ছাড়িব না তবু
সে মহাসমুদ্র- ' পরি ।
পলে পলে তোর দেহ হয় ক্ষীণ ,
পলে পলে তোর বাহু বলহীন ,
দুজনে অনন্তে ডুবি নিশিদিন —
তবু আছি তোরে ধরি ।
রোগের মতন বাঁধিব তোমারে
নিদারুণ আলিঙ্গনে —
মোর যাতনায় হইবি অধীর ,
আমারি অনলে দহিবে শরীর ,
অবিরাম শুধু আমি ছাড়া আর
কিছু না রহিবে মনে ।
গভীর নিশীথে জাগিয়া উঠিয়া
সহসা দেখিবি কাছে ,
আড়ষ্ট কঠিন মৃত দেহ মোর
তোর পাশে শুয়ে আছে ।
ঘুমাবি যখন স্বপন দেখিবি ,
কেবল দেখিবি মোরে ,
এই অনিমেষ তৃষাতুর আঁখি
চাহিয়া দেখিছে তোরে ।
নিশীথে বসিয়া থেকে থেকে তুই
শুনিবি আঁধারঘোরে ,
কোথা হতে এক কাতর উন্মাদ
ডাকে তোর নাম ধ'রে ।
সুবিজন পথে চলিতে চলিতে
সহসা সভয় গণি ,
সাঁঝের আঁধারে শুনিতে পাইবি
আমার হাসির ধ্বনি ।

হেরো অন্ধকার মরুময়ী নিশা —
আমার পরান হারায়েছে দিশা ,
অনন্ত এ ক্ষুধা অনন্ত এ তৃষা
করিতেছে হাহাকার ।
আজিকে যখন পেয়েছি রে তোরে
এ চিরযামিনী ছাড়িব কী করে ।
এ ঘোর পিপাসা যুগ-যুগান্তরে
মিটিবে কি কভু আর ।
বুকের ভিতরে ছুরির মতন ,
মনের মাঝারে বিষের মতন ,
রোগের মতন , শোকের মতন
রব আমি অনিবার ।
জীবনের পিছে মরণ দাঁড়ায়ে ,
আশার পশ্চাতে ভয় —
ডাকিনীর মতো রজনী ভ্রমিছে
চিরদিন ধরে দিবসের পিছে
সমস্ত ধরণীময় ।
যেথায় আলোক সেইখানে ছায়া
এই তো নিয়ম ভবে ,
ও রূপের কাছে চিরদিন তাই
এ ক্ষুধা জাগিয়া রবে!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×