বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আয়োজিত বিভাগীয় নাট্য প্রদর্শনী চলছে, একটা আগ্রহ নিয়ে গেলাম। আগ্রহের কারণ হলো এ সময়ে নাটক করা অনেক বড় কাজ। আর্থ-সামাজিক এ প্রেক্ষাপটে নাটকে নিজেকে জড়িত করা চাট্টিখানি বিষয় নয় বলে মানি। অনেকটা নিভৃতেই চলছে অনুষ্ঠান – একথা অতি কথন নয়।
গায়ন নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক অদ্ভুত অন্ধকার। ফ্রিৎজ করিন্থিও লেখা এবং সাইফুল আলম চেšধুরী অনুদিত। ২৫ এপ্রিল ২০১১, জেলা শিল্পকলায় মঞ্চস্থ।
একটি নাটক মঞ্চস্থ হওয়া মানে অনেকগুলো সময়কে ধারণ করা, ঘটনার উপস্থাপন করা, মানুষ-সমাজ-সময় ত্রৈয়’র মেল বন্ধ’র উপস্থাপন করা। নাটক যারা দেখেন মুলত তাদের জন্য রয়েছে বড় ভুমিকা পালনের কর্তব্য। দর্শক যদি আত্নগত ভাবে কর্তব্য পরায়ন না হন তাহলে নাটক মঞ্চস্থ হওয়া বা না হওয়ায় কোন পার্থক্য সৃষ্টি হয় না। কর্তব্য পরায়ন মানে এ নয় যে দর্শক নাটকের বিশাল সমঝদার হবেন বা তিনি নাটকের প্রত্যেকটি ধ্রুপদি শাখা বুঝবেন বা জানবেন। কর্তব্য পরায়ন মানে তিনি নূন্যতম কান্ডজ্ঞান নিয়ে নাটক দেখতে বসবেন। সেটা মানুষ হিসেবে, মঞ্চ নাটকের দর্শক হিসেবে নয়। যেমন তিনি কথিত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা নাও মাড়াতে পারেন, পেশা হিশেবে যে কোন আপাতদৃষ্টে সাধারণ কাজ করতে পারেন হতে পারে জুতা সেলাই।
গণায়নের নাটকটিও আপনি সে ভাবে দেখা শুরু করতে পারেন। নাটকটির মূল প্রতিপাদ্য শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা, বিশেষ করে শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, বিদেশী নাটক হলেও আমাদের বর্তমান সময়ের সাথে এর চমৎকার মিল আছে। নাটকটি আগে পড়া থাকায় আরো উৎসাহ বড়ে গেল। গল্প/বিষয় জানা থাকলে অন্য বিষয়গুলোতে মনোযোগ দ্রুত দেয়া যায়।
নাটকে যারা কাজ করেন তাদের মুখের জড়তা থাকা মানে হচ্ছে বিলাস বহুল প্রসাদের মতো যাতে টয়লেট/ বাথরুম থাকে না। এটি যে কেউ বুঝতে পারেন, নাট্যকর্মীদের প্রথমদিকের বড় কাজ হয় মুখের জড়তা কাটানো এবং প্রমিত উচ্চারণে কথা বলা শেখা। এর কোননাই যদি ভালো ভাবে রপ্ত না হলে তার মঞ্চে উঠাই অনুচিত। আর কণ্ঠ’র অনুশিলনতো আরো জরুরী। এ অনুপস্থিতিতে সে নাটক যদি আপনি দেখেন কোন বড় অনুষ্ঠানে, সেটা খুব সুখকর হওয়ার কথা নয়।
নাটক দেখার দর্শকদের নাট্যকর্মীরা দু'ভাগে ভাগ করতে পারেন। এক. সাধারণ কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন দর্শক, ২. নাটকের ধ্রুপদি অবস্থা বোঝেন এমন দর্শক। মজার বিষয় হচ্ছে দু'টোকেই কাজে লাগানো বা যোগ্য করার জন্য নাট্য কর্মীদের সহোযোগীতা জরুরী।
নাটকের ২য় ধারার দর্শকদের মতো ১ম ধারার দর্শকদের আপনি কোন ভবাবেই ফেলতে পারেন না। সাধারন মানুষ'র যে সহজ বোঝা পড়া তার সাথেও সংযোগ স্থাপন করা নাটকের জন্য জরূরী। অদ্ভুদ অন্ধকার নাটকটিতে ১ম ধারার দর্শক হিসেবে আমি ২ টি সমস্যায় পড়ি। এক হচ্ছে নিজে যদিও প্রমিত ভাষায় কথা বলতে পারি না কিন্তু নিজের কান এটা শুনতে অভ্যস্ত। অন্তত টিভির জন্য হলেও।
নাটকে কোনটি সাধারন ভাষা আর কোনটি অনভ্যাষজনিত চিৎকার তা ধরা যায়।
এখানের এর মারাত্নক অভাব দেখা গেছে। দ্বিতীয় হচ্ছে নাটক দেখার পর নাটকের শেষেই ( নাটকের অংশে) যদি বলতে চেষ্টা করা হয় এর মরাল বা উদ্দেশ্য কি, তা হলে যারা নাটক করছেন তারা ছাগল নয়তো যারা নাটক দেখছেন তারা ছাগল।