somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু থাকো..........শুধু একটু........

১৫ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় প্রবেশ করতেই কেমন যেনো লাগছে। সারা বাসায় কেউ নেই। হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে পাশের সোফায় বসে জুতো জোড়া খুললাম।কিছুক্ষণ বসেই রইলাম চুপচাপ। কেনো যেনো কিছুই ভালো লাগছে না।ডাইনিং টেবিলে রাখা আছে খাবার,কিন্তু খেতে যে মন চাইছে না।
রাত ১২টা পার হয়েছে সেই কখন, নিজের রুমের দিকে এগুলাম। আমার রুমের দরজা লাগানো , আজবতো! আমিতো কখনো দরজা লক তো দূর,ঘুমানোর সময় ছাড়া দরজা কখনোই লাগাইনা।

যাই হোক, দরজা খুলে তো আরো অবাক, বাতি অফ করা। নাহ, নতুন কাজের মানুষটার একেবারেই কান্ডজ্ঞান নেই।বাতির সুইচ টিপতেই চমকে উঠলাম।
একি!!!!!! সারা রুম যে বাচ্চাদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের মত করে সাজানো ! আশ্চর্য, আজ হয়েছে কি আমার ,কেমন যেনো সব লাগছে। দোলনচাঁপার গন্ধে রুম সুবাসিত।

"শুভ জন্মদিন"

আমি চমকে উঠে তাকালাম রুমে লাগোয়া বারান্দার দিকে, আর বললাম ,"কে ? কে ওখানে"?

"আমি", বলেই বারান্দা হতে রুমে ঢুকলো আমার ভালোবাসার মানুষটি। পরনে সাদা সালোয়ার-কামিজ আর হালকা নীলাভ ওড়না।হাতে গাঢ় নীল কাঁচের চুঁড়ির শব্দ হচ্ছে।বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।আমার দিকে তাকিয়ে স্বভাবসুলভ হালকা করে হাসি দিলো। যে হাসির জন্য কিনা আমি জীবন পর্যন্ত দিতে পারি।

আবারো বললো- শুভ জন্মদিন
আমি - তুমি কখন এলে? তাও এত রাতে
সে - অনেকক্ষণ, আজ যে তোমার জন্মদিন, কিভাবে আমি তোমাকে ছাড়া এতদূরে থাকি?
আমি - আমি কি এখনো বাচ্চা?
বলে হেসে দিলাম।

সে - তুমিতো আমার বাবুসোনা।(এসে গাল টিপে ধরলো)
আমি - ধ্যাৎ, কিযে বলনা?
বলেই আবারো হেসে দিলাম।

রুমের মাঝের টেবিলে ছোট্ট এক কেক, সেদিকে টেনে নিয়ে হাতে নাইফ দিয়ে বললো," আমি জন্মদিনের কেক এ মোমবাতি পছন্দ করিনা জানোইতো, তাই শুধু কেক রা্খলাম, আমি জন্মদিনের গান গাইবো আর তুমি কেক কাটবে"।

এর কথামত সব করলাম, কেক কেটে একে খাওয়ালাম, সে আমাকে খাইয়ে দিল।দু'জন বারান্দায় বসলাম, শুরু হলো পুরনো দিনের স্মৃতিরোমন্থন। কিন্তু সব সেই বলে গেল, আমি শুধু তার পানেই চেয়ে আছি। প্রচন্ড বাতাস বইছে,মনে হয় ভালো বৃষ্টি হবে।বাতাসে তার চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, আমি হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছি।

সে - কেনো তুমি মনমরা হয়ে থাকো সবসময়?
আমি - কেনো তুমি এতদূরে থাকো?
সে - আমি না হয় দূরে থাকি, তাই বলে তুমি এমন করে থাকবে?
আমি - আমার তোমাকে ছাড়া কে আছে বলো?
সে - আমি তো আছি, এই যে আজ তোমার কাছে ছুটে এলাম।
আমি - তুমি কি জানো আমি কতটা তোমাকে ভালোবাসি?
সে - না জানলে কি আজ আমার ভালোবাসার মানুষের জন্মদিনে ছুটে আসি?

আমি - আমার কাছেই থাকো, প্লিজ আমার কাছেই থাকো।
বলেই তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার দু'চোখ অশ্রুতে ভরে উঠলো

সে - আমি সবসময়ই তোমার কাছে আছি, শুধু একবার নাহয় ডেকে দেখো্।
আমি - কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে?
সে - আমি কি যেতে চেয়েছি বলো? আমি কি করতে পারি? নিয়তি যে ছিল।
আমি - আর যেওনা, আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা।
আবার জড়িয়ে ধরলাম।দু'চোখের পানি থামছেনা আমার

সে - না, এ হয়না, আমাকে যেতেই হবে।আমি নিয়তি খন্ডন যে করতে পারিনা।
আমি তার হাত দু'টো ধরে কান্নামাখা কন্ঠে বললাম, "প্লিজ, আরেকটু থাকো, আর কিছুক্ষণ। আর কিছু চাই না।"

সে - থাকলাম তো অনেকক্ষণ, আবারো আসবো।
বলে আমাকে জড়িয়ে কান্নামাখা কন্ঠে বললো ,"তুমি ভালো থাকবে, বলো, কথা দাও যে কখনো তুমি কষ্টে থাকবেনা, আমার জন্যও না"

আমি - আমি কিচ্ছু জানিনা, প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।
সে - আমি আসবো, আবারো আসবো..........তোমার জন্যই আসবো, তোমার কাছেই আসবো...........

আমি - তুমি যেওনা, আমাকে ছেড়ে যেওনা.............
আমি চিৎকার করে উঠলাম। আমার ভালবাসা আমার কাছ থেকে চলে যাচ্ছে, বাতাসে তার চুল এলোমেলো, মুখে স্মিত হাসি আর চোখে জল।

হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। ভোরের আযান শোনা যাচ্ছে, সাথে বৃষ্টির শব্দ। বারান্দায় দাঁড়ালাম। ঠান্ডা বাতাস বইছে।আজ কত তারিখ? ২১শে অক্টোবর কি? মোবাইলে তারিখটা দেখলাম, হ্যাঁ, ২১শে অক্টোবর, আমার জন্মদিন।

এক বুকভরা ব্যথা আর চোখের জল নিয়ে আমার ভালবাসার মানুষটির কথা ভাবতে থাকলাম। যে কিনা আমাকে ছেড়ে বহুদূরে চলে গেছে, যেখান থেকে কখনো কেউ ফিরে আসেনা। ল্যাপটপ অন করে ছেড়ে দিলাম একটি গান।

"যেখানেই সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার
ভালবাসা হৃদয়ে নিয়ে, আমি বারেবার আসি ফিরে,
ডাকি তোমায় কাছে............................"
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৪১
৫০টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×