somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনমন....

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজেকে আজকাল সময় একেবারেই দেয়া হয় না।
শুধু মাত্র নিজেকে ব্যস্ততায় সঁপে দিয়ে যেন বোঝাতে চাচ্ছি অনেক ভাল আছি। হয়ত বা আশেপাশের সবার জন্য ভাল থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আমার মন কি ভাল আছে?
মন কি আমার পরিতৃপ্ত এই জীবনে? মনেহয় সবার জীবনেই কিছু না কিছু অতৃপ্তি থেকে যায়। আমারো নাহয় থেকে যাক।বিধাতা এই বোধহয় লিখেছিল আমার জীবনে।

থাক, বিধাতার নির্ধারিত নিয়তিতে নাহয় সময় চলুক। আমারতো নিজেকে সময় দেয়া উচিত। আজ হতেই দেবো, এখুনি দেবো। আজকের এই বিকেলটা হবে শুধুই আমার নিজের জন্য। আর চিন্তা না করে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। হাঁটবো আজ মনটা ভরে। হেঁটে হেঁটে যতদূর পারি যাবো। ভাববোনা কারো জন্য, আজ সময় যে শুধুই আমার।

প্রবল ব্যস্ততায় সবাই কি রকম ঘরে ফিরছে। দিনের শেষে ঘরে ফিরে পরিবারের সবার সাথে মিলিত হবার মাঝেই তো আছে প্রশান্তি। শত ক্লান্তির মাঝেও সবার মুখে একটা অন্যরকম প্রশান্তির ছোঁয়া আছে যেন। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, আর লক্ষ্য করছি চলন্ত সবার দিকে। ভাল লাগছে, অনেক ভাল লাগছে। যেতে যেতে বনানীর "কফি ওয়ার্ল্ড"-এ পৌঁছে গেলাম। একটু কফি মনে হয় পান করা যেতে পারে। আমার খুব পছন্দের জায়গা এটি।

আমেরিকানো কফির মগে চুমুক দিতে পাশের টেবিলে হঠাৎ নজর গেলো। ২১ কি ২২ বছর বয়সী দু'জন ছেলে মেয়ে বসে আছে। এই বয়সটাই অন্যরকম। একসময় আমিও ছিলাম, ছিল অন্যরকম একটি জগৎ। সে জগতেও তুমি ছিলে। মনে আছে কি আমি আর তুমি মাঝে মাঝে সেই ধানমন্ডির "কফি ওয়ার্ল্ড"-এ যেতাম। কত কথাই যে আমি শুধু বলতাম আর তুমি শুধু শুনে যেতে। কেনো যে এত শান্ত ছিলে তুমি তা আজো আমার কাছে রহস্য রয়ে গেল। তোমার ব্যবহার দেখে মনে হত আমি একটা বাচ্চা ছেলে , যে কিনা সারাদিন স্কুলে কি করেছে তা এসে তোমার কাছে বলছে। ওহ! আমি তোমার কথা কেনো ভাবছি এখন? আজ তো সময়গুলো শুধুই আমার। আমি শুধু আমাকে নিয়েই ভাববো।

কফি শেষ না করেই বের হয়ে গেলাম। সন্ধ্যা প্রায় কাছাকাছি।
আবার পা দু'টোকে চলন্ত করলাম।শার্টের হাতা দু'টোও ভাঁজ করে নিলাম। আচ্ছা, এয়ারপোর্টের ওদিকে গেলে কেমন হয়?
কতক্ষণ লাগলো জানিনা, সেই কখন থেকেই হাঁটছি। প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম এয়ারপোর্টের। মানুষ আসছে আবার যাচ্ছে।
কেউ আসছে প্রিয়জনকে বিদায় দিতে, কেউবা প্রিয়জনকে স্বাগত জানাতে। আমাদের জীবনের জন্ম-মৃত্যর সাথে কতইনা মিল।
জন্মের শুভ লগ্নে আপনজন পাশে থাকে নবজাতককে স্বাগত জানাবার জন্য। আর মৃত্যুর পর কবরে বা শশ্মানেও আমরা বিদায় দিয়ে আসি। আমি তোমাকে কতবার বিদায় দিয়েছি?

মনে পড়ে কি তোমার, যেদিন আমি এয়ারপোর্টে এসেছিলাম তোমাকে বিদায় দিতে। তুমি সেদিন হুইল চেয়ারে বসেছিলে। তোমার মা-বাবা একটু দূরে সরে যান যেনো আমরা ভালমত কথা বলতে পারি। সেদিন তোমার হাত দু'টো ছিল খালি। আমি তোমার হাত দু'টো ধরে কাঁদছিলাম। তুমি আমাকে কপট রাগ করে বলেছিল কেনো আমি এমন করছি। কোনো জানো? আমি তো তোমাকে এভাবে দেখিনি আগে। তোমার হাত দু'টোতে থাকতো কাঁচের চুঁড়ি।আর সবসময় মুখে থাকতো স্নিগ্ধ হাসি। সেই তুমি কি এই তুমি? তাও আমিতো কথা দিয়েছিলাম, আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।
মনে আছে আমাদের কি কথা হয়েছিল?

তুমি বলেছিলে তুমি সুস্থ হয়ে আবার আমার কাছে ফিরে আসবে।
আমি তোমার জন্য যেনো হালকা সবুজ আর গাড় হলুদ রঙের কাঁচের চুঁড়ি নিয়ে অপেক্ষা করি এয়ারপোর্টে। আর সাথে যেনো থাকে দোলনচাঁপা ফুল। তুমি কি জানো, যখনি আমি দোলনচাঁপা ফুল পাই, আমার রুমে এনে তা সাজিয়ে রাখি। দোলনচাঁপার সুবাসে মনে হয় তুমি আমার আশেপাশেই আছো।

মনে আছে তুমি বিদায়বেলায় আমাকে কি বলেছিলে?
বলেছিলে আমি যেনো কখনো তোমাকে ভুলে না যাই। মনে হয় ভুলে গেলে কতইনা ভাল হতো। শেষ বিদায়টা কি মনে আছে?
তুমি ঘাড় বাঁকিয়ে বারবার আমাকে দেখছিলে, আর চোখ কি ভেজা ছিলনা?
আমার ছিল। আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি। হয়ত বা সেটাই শেষ দেখা ছিল বলে। তুমি জানো, তুমি চলে যাবার পরও ২ ঘন্টা আমি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।চোখের পানি থেমে গিয়েছিল সেই কখন কিন্তু মনের অশ্রু কি থেমেছিল?

আজ নিজেকে সময় দিতে গিয়েও এয়ারপোর্টের সামনে এসে তোমার কথা মনে পড়ে গেল আবারো। নিজেকে আর সময় দেয়া হলনা। মনে হচ্ছে তুমি আমার পাশে দাঁড়িয়ে বেশ মজা পাচ্ছো। কারণ তুমিই তো জয়ী হলে। কেঁড়ে নিলে আমার সমস্ত সময়।

দোলনচাঁপার কিছু তোড়া নিয়ে ঘরে আসলাম। চাবি দিয়ে খুললাম লকার, আর বের করে আনলাম তোমার জন্য রাখা হালকা সবুজ আর গাড় হলুদের কাঁচের চুঁড়ি। সব আছে রাখা আজ তোমার জন্য। দোলনচাঁপা ফুল আর কাঁচের চুঁড়ি। শুধু আজ তুমিই নেই।


মনকে সময় দিতে চেয়েছিলাম আজ। কিন্তু মন তো শুধু চায় তোমাকেই সময় দিতে। থাকুক না হয় মন তার অতীত স্মৃতিগুলো নিয়ে। তবুও যদি সে ভাল থাকে.....................








[ আমার লেখা জীবন কাহিনীগুলো বেশ বিরক্তিকর, এটা আমি জানি। তাই আগেই সবার নিকট হতে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচ্ছি।]

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৪৪
৭৬টি মন্তব্য ৭৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×