somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্যোৎস্নার গভীরে স্পর্শহীন ভালোবাসা (কেয়া এবং আমি )

১৮ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বসন্ত তখন ধীরে ধীরে নেমে এসেছে।
আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। বাতাসে একটা মৃদু শীত আর গন্ধে মিশে থাকা নাম না জানা ফুলের সুবাস। এমন এক রাতে আমি পুকুরপাড়ে গেলাম সিগারেট হাতে নিয়ে আর কেয়াকে একটা মেসেজ দিয়ে রাখলাম, আমি পুকুরপাড়ে, তার সাথে এই সুন্দররাতে পুকুরপাড়ে বসে থাকতে ইচ্ছা করছে কিন্তু আবার মনে ভয় হচ্ছে মানুষ দেখে ফেললে কি বলবে !
আমাকে অবাক করে কেয়া পুকুরপাড়ে চলে আসল ! আমি আর কেয়া , দুজনেই বসে আছি একটা ছোট্ট পুকুর পাড়ে—নীরব অথচ গভীর কোনো অনুভূতির আশ্রয়ে।

সবে মাত্র, বসন্ত এসেছে, গাছের পাতায় নরম কুঁড়ির মতো, বাতাসে এক মায়াবী শিহরণ।
সেই রাতে, আকাশ ছিল সম্পূর্ণ জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া ।
আর আমি ছিলাম কেয়ার সামনে, যেন সময়কে থামিয়ে রাখা কোনো কবিতার পঙক্তি।
সেটা সাধারণ রাত ছিল না—তা ছিল এক জীবনের স্থিরতা, যেখানে সময় থেমে গিয়েছিল শুধু কেয়ার জন্য।

কেয়া তাকিয়ে ছিল পুকুরের পানির দিকে।
চাঁদের প্রতিফলন তার চোখে এসে পড়ছিল।
আমার মনে হচ্ছিল, আমি হয়তো পৃথিবীর একমাত্র সৌভাগ্যবান মানুষ,
যে এমন করে দেখতে পারছে কেয়াকে—
নিঃশব্দে, অপার্থিবভাবে।

চাঁদের আলো যখন ছড়িয়ে পড়ছিল কেয়ার মুখে। সে আলো যেন কোনো জাদু দিয়ে আঁকা—মুহূর্তেই বাস্তবতা ভুলিয়ে দেয়।
কেয়া তাকিয়ে ছিল নিচের দিকে, একটু লাজুক, একটু নরম। আর আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম—নিঃশব্দ, অথচ সমস্ত হৃদয় দিয়ে।
কখনো কখনো মনে হচ্ছিল, আমি যেন স্বপ্ন দেখছি, অথচ সেই স্বপ্নের মাঝেই নিঃশব্দে হাঁটছি।

চাঁদের আলো যখন খেলা করছিল কেয়ার মুখে,
আর সে আলো যেন তাকে ধরণীর বাইরের কিছু করে তুলেছিল — এক অপসরী।
এক জ্যোৎস্নার দেউলে গড়া দেবী,
যার চোখের ভিতর ছিল হাজারো নক্ষত্র।
কেয়া কিছুটা লাজুক, চোখ নামিয়ে বসে ছিল,
আর আমি অপলক তাকিয়ে ছিলাম তার মুখের প্রতিচ্ছবির দিকে —
যেন আমি তার চোখে ঢুকে পড়েছি,
আর সেখানেই জন্ম নিচ্ছে এক অনন্ত প্রেম যা ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশ থেকে মহাবিশ্বে ।

সময় থেমে গিয়েছিল তখন । পুকুরের পানিও থেমে গিয়েছিল যেন আমাদের দুজনকে শ্রদ্ধা জানাতে।
কেয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি, অপলকে। সেই চোখ যেন আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল এক অজানা মহাকাশে, যেখানে শুধু কেয়া আর আমি।

সে সময় আমি কেয়ার ঠোঁটের নড়াচড়া দেখছিলাম, কিন্তু কথা শুনছিলাম না—
কারণ আমার মন, আমার সমস্ত সত্তা, হারিয়ে গিয়েছিল তার চোখের ভিতর।
সেই চোখ…
সেই চোখ যেন গল্প বলে, শত জন্মের,
সেই চোখে ছিল ভালোবাসা, ছিল স্বপ্ন, ছিল প্রতিজ্ঞা।
আমি জিজ্ঞেস করিনি,
সে কি ভালোবাসে আমাকে?
আমিও বলিনি,
"আমি ভালোবাসি তোমাকে কেয়া।"
কারণ আমরা দুজনেই বুঝে গিয়েছিলাম,
এ সম্পর্ক কোনো উচ্চারণের উপর দাঁড়িয়ে নেই—
এটা জন্মেছে সেই স্থান থেকে,
যেখানে ভাষার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়।

তবে আমরা কথা বলেছিলাম অনেক—
চাঁদের আলোয়, বসন্তের হাওয়ায় ভেসে থাকা কথোপকথন।
পুকুরপাড়ে বসে আমরা দুজনেই হালকা কাঁপছিলাম —
বসন্তের হিমে, না কি আবেগে, বলা মুশকিল।
কিন্তু তবু আমরা একে অপরের হাত ছুঁইনি।
না, সেটা দুর্বলতা বা দূরত্ব নয়।
সেটা ছিল এক শক্তির বহিঃপ্রকাশ —
যেখানে ভালোবাসা এতটাই পরিণত,
যা দাবি করে না স্পর্শ, চায় না অধিকার।
সেটা ছিল ভালোবাসার এক নীরব সম্মান।
সীমার মাঝে থেকেও অনুভবের অতল ছুঁয়ে যাওয়া।

আমাদের মাঝখানে ছিল না কোনো শূন্যতা,
ছিল এক অদৃশ্য দেয়াল,
যে দেয়ালের ইট ছিল পারস্পরিক সম্মান,
আর মর্টার ছিল হৃদয়ের নিঃশব্দ সম্মতি।

সেটি রাত ছিল না শুধু প্রেমের —
সেটি ছিল আত্মার আত্মাকে ছুঁয়ে যাওয়ার মুহূর্ত।
চাঁদ সাক্ষী ছিল, নীরব জোৎস্না সাক্ষী ছিল,
যে আমরা একে অপরকে ভালোবেসেছি —
স্পর্শ ছাড়াই, দাবি ছাড়াই, শব্দের মাঝেও নীরবতার গভীরতায়।

রাত শেষের দিকে যাচ্ছিল।
চাঁদের আলো ফ্যাকাশে হয়ে আসছিল।
আমি বুঝছিলাম, এই মুহূর্তটা শেষ হতে চলেছে,
তবুও হৃদয়ের ভিতরে সে সময় থেমে আছে।
কেয়া আমার দিকে তাকিয়ে ছিল একবার।
আমার মুখের দিকে নয়—
সরাসরি চোখের গভীরে।
সেই দৃষ্টিতে যা ছিল, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

আমরা উঠে দাঁড়ালাম, ধীরে, নিঃশব্দে।
কোনো প্রতিজ্ঞা ছাড়া, কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়া,
কিন্তু এমন এক অদৃশ্য বন্ধনে বাঁধা হয়ে,
যেটা সময় ভাঙতে পারবে না, দূরত্ব ছিঁড়তে পারবে না।

সেই রাতটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে পবিত্র প্রেমের মুহূর্ত।
যেখানে কেয়া ছিল না শুধুই একজন নারী—
সে ছিল আমার বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি,
আমার হৃদয়ের জ্যোৎস্নায় ভিজে ওঠা নামহীন প্রার্থনা।


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×