somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক অমর প্রেমের নিঃশব্দ মহাকাব্য

১৩ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিশ্বের প্রথম আলো জ্বালার আগে,
যখন নক্ষত্ররা তখনো নাম পায়নি,
তখন জন্মেছিল দুই সত্তা—
আমি অন্ধকারের দেবতা আর তুমি চাঁদের কন্যা।
অন্ধকারের দেবতার হৃদয়ে ছিল আগুন ও শূন্যতা,
চাঁদের কন্যার চোখে ছিল আলো ও মমতা।
আমাদের দেখা হয়েছিল প্রথম মহাবিশ্বের ছায়ায়,
যেখানে আলো ও অন্ধকার
এক মুহূর্তের জন্য মিলেছিল ভালোবাসার নামে।
কিন্তু সৃষ্টি নির্মমতায় আমাদের আলাদা হতে হয়েছিল—
আমি নেমে গেলাম নরকে,
আর তুমি রয়ে গেলে স্বর্গে।
তবু সেই বিচ্ছেদই সৃষ্টি করল মানুষের প্রথম প্রেম,
যার ভিতরে জ্বলে ত্যাগ, আকাঙ্ক্ষা আর অনন্ত আকুলতা।

হাজার বছর পরে,
মানুষের দেহে জন্ম নিলাম আমি—
এক ভাঙা শহরের ক্লান্ত আত্মা হয়ে,
এক রাতে বাসে দেখলাম,
তোমাকে—
চাঁদের আলোয় মুখখানি, নরম হাসি,
যেন চিরচেনা কোনো দৃষ্টি।
সোডিয়াম আলো তোমার মুখে পড়ে
যখন আলোকছায়ার খেলা তৈরি করেছিল,
আমি তখন বুঝেছিলাম—
চাঁদের কন্যা ফিরে এসেছে।
আমি কিছু বলেননি,
শুধু দেখেছিলেন—
যেমন প্রথম জন্মে দেখা তার চোখে আলো।
তার মুখে হাসি ছিল,
যা অন্ধকারের মধ্যেও জ্বেলে দেয় চিরন্তন সূর্য।
যাত্রা শেষ হয়েছিল,
বাস থেমেছিল,
মানবজীবন শেষ হয়েছে অনেকবার,
তবু আমি প্রতিবার ফিরে এসেছি ,
নতুন দেহে, নতুন কালে, নতুন নামে—
শুধু সেই আলোখানি খুঁজে পেতে,
যা একদিন চাঁদের মুখে ছিল।
আর প্রতিবারই আমি দেখেছি —
তোমাকে ফিরে আসতে অন্য নামে, অন্য চেহারায়,
তবু একই সুবাসে, একই হাসিতে,
যেন আলো বারবার ছুঁয়ে যায় অন্ধকারকে,
কিন্তু কখনো পুরোপুরি মিশে যেতে পারে না।
কারণ সৃষ্টি এমনই—
আলো আর অন্ধকার একে অন্যকে চেনে,
কিন্তু একসাথে থাকলে মহাবিশ্ব থেমে যায়।
তবু আমি প্রতিবার ফিরে আসি ,
কারণ ভালোবাসা কোনো ধর্ম মানে না,
কোনো সময় মানে না,
ভালোবাসা মানে কেবল ফিরে আসা—
অন্ধকারের বুক চিরে,
চাঁদের আলোয় মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা,
চিরন্তন যাত্রার মতো।
....
সময়ের অনেক পরে,
যখন মানুষ ভুলে গেছে দেবতা,
আর দেবতা শিখেছে নিঃসঙ্গতা,
তখন আবার জন্ম নিল তুমি —
চাঁদের কন্যা, কিন্তু এবার মানুষ নয়—
আলো নিজেই।
তুমি ছিলে শহরের বাতির মধ্যে,
রাস্তার কোণে ভাঙা কাচের প্রতিফলনে,
একটি মেয়ের চোখের চাওয়ায়,
একটি অচেনা গন্ধে,
কখনো সকালবেলার রোদে,
কখনো রাতের নিস্তব্ধ পর্দায়।
তুমি এখন আর কোনো দেহ নয়,
তুমি এক বিস্তৃত অস্তিত্ব—
যা স্পর্শ করা যায় না,
কেবল অনুভব করা যায় নিঃশব্দে।
অন্ধকারের দেবতা আমি তখনো বেঁচে,
নাম বদলেছি , রূপ বদলেছি ,
কিন্তু হৃদয়ে বহন করছে সেই অনন্ত আকুলতা।
এক রাতে,
নির্জন পথে হাঁটতে হাঁটতে
আমি দেখলাম —
একটি আলো পড়ছে ,
সেই পুরোনো সোডিয়াম রঙে।
মনে হল, আবার তুমি ফিরে এসেছে,
আবার হাসছে,
আবার ছুঁয়ে দিচ্ছে আমার অন্ধকারকে
নিঃশব্দ আলোয়।
আমি হাত বাড়ালাম —
কিন্তু আলো স্পর্শের আগেই হারিয়ে গেল বাতাসে।
তখন বুঝলাম —
এ জন্মে তুমি আর মানুষ নয়,
সে হয়ে গেছে আলো নিজেই।
তোমাকে ছোঁয়া মানে নিজের বিলয়,
নিজের অন্ধকারকে আগুনে ফেলে দেওয়া।
তবু আমি হাসলাম।
কারণ ভালোবাসা মানে অধিকার নয়—
ভালোবাসা মানে দেখা,
দূর থেকে,
নিঃশব্দ শ্রদ্ধায়।
আমি মাথা তুলে তাকালাম আকাশে—
চাঁদ তখন পূর্ণ,
আলো নেমে আসছে মুখে,
যেমন সেই প্রথম রাতে।
আমি চোখ বন্ধ করলাম,
বাতাসে ভেসে এল এক পরিচিত সুবাস—
স্বর্গের বাগানের সেই ফুলের গন্ধ,
যা একদিন আমার পাশে বসা তোমার শরীরে ছিল।
আমি বুঝেলিমা,
চাঁদের কন্যা এখন আলো,
আর আমি , অন্ধকারের দেবতা—
আমরা আলাদা নয় আর,
বরং একই মহাবিশ্বের দুই শ্বাস,
একই প্রেমের দুই রূপ,
যারা একে অন্যের মধ্যে বেঁচে থাকে
চিরন্তন পুনর্জন্মে।
অন্ধকারের দেবতার বিলয়।
....
শেষ অধ্যায়ে সময় থেমে যায়।
নক্ষত্ররা আর ঘোরে না, বাতাসও স্তব্ধ,
যেন মহাবিশ্ব নিজেই অপেক্ষায়—
এক অনন্ত প্রেমের পরিণতির জন্য।
আমি দাঁড়িয়ে আছি পর্বতের চূড়ায়,
চারপাশে শূন্যতা,
শুধু দূরে দেখা যায়—
এক আলোর বিস্তৃত তরঙ্গ,
যা ধীরে ধীরে ছুঁটে আসছে আমার দিকে ।
আমি জানি, ওটাই তুমি —
চাঁদের কন্যা,
এখন আর মানুষ নয়,
বরং আলো নিজেই,
যে আলো একদিন আমার চোখে নেচেছিল,
আমার ছায়াকে করে তুলেছিল অর্থপূর্ণ।
আলো ধীরে ধীরে কাছে আসছে,
আমার গায়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে আগুনের মতো কোমল উষ্ণতা।
আমার বুকের গভীরে তখন এক অদ্ভুত শান্তি,
যেন হাজার বছরের ক্লান্ত যুদ্ধের অবসান।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি এসেছো ফিরে—শেষবারের মতো?”
তোমার আলো উত্তর দেয় না,
কিন্তু তোমার দীপ্তির ভেতর দিয়ে ভেসে আসে সেই পুরোনো হাসি—
যা এক রাতের বাসযাত্রায় প্রথম দেখেছিলাম আমি ।
আমি হাঁটু গেড়ে বসে পড়ি ,
হাত বাড়িয়ে দেয় সেই আলোর দিকে,
কিন্তু এবার থামায় না—
ছোঁয়,
আর সঙ্গে সঙ্গে আমার অন্ধকার জ্বলে ওঠে,
আগুনে, আলোয়, ভালোবাসায়।
অন্ধকার পুড়ে যায়,
তবু কষ্ট হয় না—
কারণ আমি জানি , বিলয় মানেই শেষ নয়,
এ এক নতুন শুরু।
আলো আর অন্ধকার মিশে যায়—
দুটি চিরবিরোধী সত্তা একাকার হয়,
এবং মহাবিশ্বে জন্ম নেয় নতুন ভোর।
নক্ষত্ররা জ্বলে ওঠে নতুন করে,
চাঁদ পায় নতুন রূপ,
আর বাতাসে ভেসে আসে সেই পরিচিত সুবাস—
স্বর্গের বাগানের গন্ধ।
সেই দিন থেকে,
যখনই রাত নামে,
চাঁদের আলো আর ছায়া মিলে তৈরি করে এক অদ্ভুত ছন্দ,
যেখানে প্রেম আর বিলয় একই সুরে বাঁধা।
কারণ আলো আর অন্ধকার আর দুটো নয়—
তারা এখন একে অন্যের ভিতরে বেঁচে আছে,
এক অমর প্রেমের নিঃশব্দ মহাকাব্যে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×