somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিদিন একটি মুভি - ৪: The Namesake

১৬ ই জুন, ২০০৯ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন একটি মুভির আজ চতুর্থ পর্ব, বাকী থাকল তিনটি পর্ব

প্রথম পর্ব: City Lights
দ্বিতীয় পর্ব: L.A. Confidential
তৃতীয় পর্ব: Water


আপনাকে যদি ১২২ মিনিটের একটি ফিল্ম বানাতে হয় যার মধ্যে ২৫ বছরের গুরুত্বপূর্ন ঘটনাগুলোকে উপস্থাপন করতে বলা হয়, তখন কি করবেন? "২৫ বছর পর" - টাইটেল দিয়ে পচিশ বছর পরের ঘটনা দেখানো খুব কঠিন কিছু নয়, কিন্তু সেতো ২৫ বছর পরের কিছু ঘটনা। মীরা নায়ারকে নিশ্চয়ই বেশ কিছুটা পরিশ্রম করতে হয়েছিল এই সমস্যা সমাধান করার জন্য। তিনি যে সফল হয়েছিলেন তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ "দি নেমসেক"।

নেমসেক ঝুম্পা লাহিড়ির উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। ঝুম্পা লাহিড়ি প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন তার 'ইন্টারপ্রেটার অব ম্যালাডিস' বইয়ের কারনে। ইমিগ্রান্ট ইন্ডিয়ানদের কাহিনীকে, সমস্যাকে তুলে এনেছিলেন তার ছোট ছোট গল্পগুলোতে। নেমসেক এর কাহিনীতেও তাই। আসলে ব্রিটিশরা চলে যাবার পর থেকে যেসব ভারতীয় প্রবাসে বিশেষত: আমেরিকায় পাড়ি জমায়, তাদের পরবর্তী জেনারেশন এখন ব্যবসা বানিজ্য চালাচ্ছে, তৃতীয় জেনারেশনের অনেকেই তাদের জীবন শুরু করেছে। এই দ্বিতীয় জেনারেশন এর জীবনে যে জটিলতা, তা সহজে উপেক্ষা করার নয়। একই সাথে দুই দেশের সমাজ সংস্কৃতি, নিয়ম কানুন বজায় রেখে - একই সাথে বাবা মাকে সন্তুষ্ট রেখে, এগিয়ে যাওয়া, জীবনের কার্যাবলী পালন করতে গিয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠা - সে তো মোটেই অস্বাভাবিক নয়। যেমন হয়েছে গোগলের বেলায়!

দ্য নেমসেক মুভির প্রধান চরিত্র কে? অসীমা (টাবু)? নাকি অশোক (ইরফান খান) নাকি গোগল (কাল পেন)? দ্বন্দ্বে পড়ে যাওয়া যায়। একজনের পাল্লা একটু ভারী হতে শুরু করলেই অন্য দুটি চরিত্র এসে যেনো ভীড় জমায়। এবং ... সবাইকে ছাপিয়ে উঠে প্রধান চরিত্র হিসেবে জায়গা করে নেয় স্ট্রাগল, ক্রস কালচারাল স্ট্রাগল।

কাহিনীর শুরু সেই ১৯৭৭ সালে । অশোক যাচ্ছিলেন ট্রেনে চড়ে, পড়ছিলেন নিকোলাই গোগল। ঘটে গেল দুর্ঘটনা, পড়ে রইলেন হাত-পা ভেঙ্গে বিছানায়। কিন্তু দুর্ঘটনার আগে ট্রেনের ভদ্রলোক সেই যে বলে গেলেন দুনিয়া ঘুরে বেড়াতে, তাই হয়তো সুস্থ্য হয়ে চলে এলেন আমেরিকায়। তারপর আবার বে' করতে আসলেন ইন্ডিয়ায়, বে' করে নিয়ে গেলেন আসীমাকে। শুরু হয়ে গেল প্রথম জেনারেশনের বাকী জীবন।


একটি অসাধারন রোমান্টিক শট পাওয়া যাবে এখানে
নিকোলাই গোগলের প্রতি ভালোবাসা আর পুনর্জীবন লাভ করার স্মৃতিকে বাচিয়ে রাখার জন্য প্রথম ছেলের নাম রাখা হয় গোগল, পরবর্তীতে এই নামই গোগলের জন্য যন্ত্রনা হয়ে দাড়ায়। নানা ঘটনা তাকে দ্বিধাদ্বন্দে ফেলে দেয়। কোন কালচার আকড়ে ধরবে, জন্মস্থান আমেরিকা, নাকি শেকড় ইন্ডিয়া? দোটানার একটি চিত্র ধরা পড়ে তাজমহল দেখে আর্কিটেক্ট হবার সিদ্ধান্ত দেখে।

মীরা নায়ার খুব ভালোভাবেই দুই প্রজন্মের ব্যবধান গুলো দেখিয়েছেন। যেখানে অসীমা বিয়ের আগে অশোকের জুতোয় পা ঢুকিয়েছিলেন, সেখানে গোগল বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে জুড়ে নিতে পিছপা হয় না। যেখানে অসীমা আর অশোকের সম্পর্ক টিকে ছিল আমৃত্যু সেখানে গোগলের সম্পর্ক ভঙ্গে দুবার, একবার বিয়ের আগে, অন্যটি বিয়ের পরে। হয়তো সব কিছুকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে মীরা নায়ার এবং ঝুম্পা লাহিড়ি বলতে চেয়েছেন, আমেরিকা নয়, ভারতবর্ষই সেরা।


এত লম্বা সময়কে ১২২ মিনিটে ধরার চেষ্টা করা খারাপ লাগতে পারে, তবে ঘটনাপ্রবাহ সেটা ভুলতে সাহায্য করবে। আর নিজেকে বাঙ্গালী হিসেবে খুব ফিল করবেন যখন, অশোকের দেহভস্ম গঙ্গায় ছড়িয়ে দেবার সময় মাঝি গায় ... ... মাঝি বাইয়া যাওরে, অকূল দড়িয়ার মাঝে আমার ভাঙ্গা নাওরে মাঝি ...

যারা প্রবাসে সেটলড হতে চাচ্ছেন, তারা বোধহয় একবার দেখে নিতে পারেন মুভিটি।

এরকম দুএকটা বড়দের দৃশ্যও চোখে পড়ে যাবে ;), তবে ভারতীয় বলে গ্রহণ করবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার!

আগামীদিন: ২০০১: এ স্পেস ওডিসি
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×