somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারে জমিন পার

১৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ এই লেখাটা যখন লিখেছিলাম তখনও ব্লগ লেখা শুরু করিনি, লেখাটা কিছুটা সম্পাদিত হয়ে যায়যায়দিন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল, মূল লিংক দিতে পারলে ভালো লাগতো, কিন্তু ওদের ওয়েবসাইটে বেশ সমস্যা, আর্কাইভ হাওয়া হয়ে গেছে... ]


হিন্দী মুভির প্রতি আমার কিছুটা বিতৃষ্ণা আছে। কারণটা বেশ স্বাভাবিক। ইন্ডিয়ার মুভিগুলোকে ‘ফরম্যাট ফিল্ম’ বলা চলে । কতগুলো নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুসরন করে সব ধরনের দর্শকের চাহিদা পূরণ করে তাদের কমার্শিয়াল ফিল্ম গুলো ভালোই ব্যবসা করছে। তবে আমির খান একটু ব্যতিক্রম। লগন, দিল চাহতা হ্যায়, ফানা, রঙ দে বাসন্তি’র মত মুভিগুলো এই বিশ্বাস সৃষ্টি করে পাকাপোক্ত করেছে। সুতরাং ‘তারে জমিন পার’ও যে একটি ভালো মুভি হবে, দেখার আগেই সে সম্পর্কে নিশ্চিৎ হয়েছিলাম - কিছূটা ট্রেলার দেখে, কিছূটা নিউজপেপার পড়ে।

‘তারে জমিন পার’ পুরোপুরি শিশুদের ছবি। অন্ততঃ প্রযোজক, পরিচালক শিশুদের কথা মাথায় রেখেই ছবিটি বানিয়েছেন। শিশুদের সেই রঙ্গীন জগৎ, যেখানে মাছ, পাখি আর ফুল ফলে ভরা, আর যেখানে সকল বস্তুই নেচে গেয়ে আনন্দে মত্ত থাকে - ঠিক তাকেই তুলে এনেছেন পরিচালক আমির খান। প্রযোজকের খাতায় নামটি আগেই লিখিয়েছিলেন, এবার সফল পরিচালকের খাতায় নাম লেখালেন ‘তারে জমিন পারে’র মাধ্যমে।


ছবির গল্পটা কিছুটা অন্যরকম। এমন একটি মানসিক সমস্যাকে পরিচালক তার মুভির মাধ্যমে তুলে এনেছেন যা সকল বাবা-মাকেই নতুন করে ভাবতে শেখাবে। মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্র ইশান নন্দীকিশোর আওয়াস্তি আট/নয় বছর বয়সী দুরন্ত বালক। আকর্ষনীয় এই বালকটি ডাইস্লেক্সিয়া নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত। বানান ভুল করা আর পড়াশোনায় গোলমাল এ রোগের অন্যতম প্রধাণ লক্ষণ। ইশান ক্লাসে কিছুই পারে না, পরীক্ষাতেও তার নম্বর সবার শেষে। অথচ তার বড় ভাই ইয়োহান সবদিক থেকেই শীর্ষে - পড়াশোনায় তো বটেই, খেলাধূলাতেও সে খুব ভালো। ইশানের দুরন্তপনা আর অ্যাকাডেমিক রিপোর্টে চরম ব্যর্থতাকে ‘ডিসিপ্লিনে’র আওতায় আনতে পাঠিয়ে দেয়া হয় বোর্ডিং স্কুলে। প্রিয় মা আর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইশান পাল্টে যায়। ক্লাসের সবচেয়ে চুপচাপ ছেলেটি হয়ে যায়। হঠাৎ একদিন রাম শঙ্কর নিকুম্ভ নামে এক নতুন আর্ট শিক্ষক যোগ দেয় বোর্ডিং স্কুলে। মুহুর্তেই পাল্টে যায় সবকিছূ। সম্পূর্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে পাঠদানের মাধ্যমে নিকুম্ভ স্যার সকলের প্রিয় হয়ে উঠেন। কিন্তু ইশানই একমাত্র ব্যতিক্রম। তার এই চুপচাপ ও মনমরা ভাব নিকুম্ভ স্যারের মনযোগ কেড়ে নেয়। আস্তে আস্তে সব কিছু জেনে নেন তিনি। যোগাযোগ করেন ইশানের বাবা-মার সাথে, চেষ্টা করেন ছেলের সমস্যাটি বোঝাতে, কিন্তুু ব্যর্থ হন। অবশেষে প্রিন্সিপালের অনুমতিক্রমে ইশানকে ব্যক্তিগতভাবে এবং ইশানের ছবি আকাঁর অসাধারণ প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সারিয়ে তুলেন এই রোগ থেকে। সকলের অংশগ্রহনে একটি ছবি আকার প্রতিযোগিতায় ইশান চ্যাম্পিয়ন হয়, নিকুম্ভ স্যার হন রানার আপ। বাকী গল্প সহজেই অনুমেয়, ইশানই হয় ক্লাসের সেরা ছাত্র।

মুভি শুরু হওয়ার আধাঘন্টা বাদেই আপনি হয়তো আঁচ করতে পারবেন শেষ পর্যন্ত কি ঘটবে। কিন্তু তারপরেও ছবির সামনে থেকে উঠতে মন চাইবে না। শুরুর দৃশ্যে ইশানের ড্রেন থেকে মাছ ধরে বোতলে করে বাড়ি নিয়ে আসা কিংবা রাস্তা থেকে চকচকে বস্তুটি তুলে নিয়ে পকেটে ভরা মার্ক টোয়েনের সৃষ্টি হাকলবেরি ফিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু একটু পরেই বোঝা যায় মুভির গল্প এগোচ্ছে নিজগতিতে। শিশুদের জন্য বলেই হয়তো জায়গামত এবং অত্যন্ত পরিমিতভাবে অ্যানিমেশন ব্যবহার করেছেন পরিচালক। ছবির আরেক প্রধান চরিত্র নিকুম্ভ স্যাররূপী আমির খান পর্দায় প্রবেশ করেছেন মুভি শুরুর প্রায় একঘন্টা পরে যা ভিন্নতার আমেজ বহন করে। চমৎকার লোকেশন, শ্রুতিমধুর গান, আর প্রত্যেক চরিত্রের বাস্তব অভিনয় ছবিটিকে সাফল্যের দ্বারে পৌছুতে সাহায্য করেছে । ইশানের চরিত্রে রূপদানকারী দারশিল সাফারীর অনবদ্য অভিনয় চরিত্রকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। নতুন এ শিশুটির অভিনয় যে কোন প্রফেশনালের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

সব মিলিয়ে বলতে হয়, ‘তারে জমিন পার’ একটি অসাধারণ ভালো ছবি। পরিচালক আমির খান এ ধরনের ভিন্ন কাহিনীচিত্র নির্মান করে সকলের প্রশংসা কুড়ানোর যোগ্য কাজটিই করেছেন। পুরো ছবিটি যেন তার ট্যাগলাইন - এভারি চাইল্ড ইজ স্পেশাল - কেই প্রতিফলিত করেছে। সুতরাং প্রত্যেকের জন্যই আলাদা ট্রিটমেন্ট, আলাদা যতœ প্রয়োজন। ছবিটি দেখে না থাকলে আজই মনযোগ দিয়ে দেখুন, আমি বাজী রেখে বলতে পারি, আপনি চোখের পানি কোনভাবেই আটকে রাখতে পারবেন না।

29.03.2008
আমার ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×