এই পোস্টের একটা কাহিনী আছে। গতকালের যায়যায়দিন পত্রিকায় এই লেখাটা ছাপা হলো। অথচ লেখাটা আমি পাঠাইনি, তবে আমি কৃতজ্ঞ এই জন্য যে, তারা আমার নাম এবং ওয়েব অ্যাড্রেসটা ছাপাতে ভুল করেনি।
আপনার কি জানা আছে, কেউ নোবেল পেয়ে গেলে অন্যরা তাকে কিভাবে সম্মান দেখায়? নিজের কলমটি উপহার দিয়ে। জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে আ বিউটিফুল মাইন্ড ছবিটি। ম্যাথমেটিকস নিয়ে অনেকের ভীতি থাকলেও এই গণিতে জিনিয়াস লোকের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। এ কারণেই সিনেমার বিষয়বস্তুতে স্থান পেয়েছে গণিতও। এ ধরনের দু’টি বিখ্যাত সিনেমা হলো আ বিউটিফুল মাইন্ড এবং গুডউইল হান্টিং।
আ বিউটিফুল মাইন্ড
আ বিউটিফুল মাইন্ড মুভিটি জন ফোবর্স ন্যাশ, জুনিয়রের জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। মুভিটি বেশ বিখ্যাত, জন ন্যাশও একজন বিখ্যাত লোক। কারণ তিনি ১৯৯৪ সালে নোবেল জিতেছিলেন অর্থনীতিতে, যিনি গেম থিওরি নিয়ে কাজ করেছিলেন। মুভির পরিচালকের নাম রন হাওয়ার্ড, যার ছবি এ পর্যন্ত মোট ১১ বার অস্কার নমিনেশন পেয়েছে, এদের মধ্যে অ্যাপোলো ১৩, সিনডারেলা স্টোরি এবং গেল বছরের ফ্রস্ট/নিক্সন মুভি অন্যতম। ড্যান ব্রাউনের বেস্ট সেলার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত দ্য ভিঞ্চি কোড এবং অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনসও তার পরিচালনা। এমন একজন গুণী পরিচালকের হাতেই আকিভা গোল্ডসম্যানের চিত্রনাট্য একটি সফল মুভিতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য মুভিটি একই নামের বেস্ট সেলার পুলিৎজার প্রাইজ মনোনীত বই, যার লেখক সিলভিয়া নাসার থেকে উৎসাহিত হয়ে নির্মিত হয়েছে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা রাসেল ক্রো।
ছবিটি জন ন্যাশের প্রাথমিক জীবনের কিছু ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। খুব মেধাবী ছাত্র ন্যাশ একপর্যায়ে সিজোফ্রেনিয়ার রোগীতে পরিণত হয়। এ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের চার পাশে একটি কল্পিত জগৎ তৈরি করে, বিভিন্ন শব্দ শুনতে পায়, হ্যালুসিনেশন হয়। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে আগমনের মাধ্যমে মুভিটির শুরু। রুমমেট সাহিত্যের ছাত্র চার্লস হারম্যান তার ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়, অথচ তার সহপাঠীরা তাকে নিয়ে বেশ বিব্রতকর কিছু পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে ন্যাশ মানুষের চেয়ে সংখ্যাকে বেশি ভালো বুঝতে পারে আর এ কারণেই পানশালায় কোনো এক নারীকে দেখে তার প্রতি অনুরক্ত না হয়ে তিনি তার গাণিতিক অর্থনীতির থিওরি গভর্নিং ইকনোমিকসের ধারণা লাভ করেন। পরে জন ন্যাশ এমআইটিতে যোগদান করেন। কিন্তু নিজেকে ঘিরে এক কল্পজগৎ তৈরি করেন ন্যাশ, সরকারি গোপন সব সমস্যা সমাধান করতে থাকেন তিনি যদিও তা পুরোটাই ছিল তার কল্পিত। কিন্তু স্ত্রী ও বন্ধুদের সহায়তায় তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং শেষ বয়সে নোবেল পদক দ্বারা সম্মানিত হন।
আ বিউটিফুল মাইন্ড ছবির সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো এটি দর্শককেও সিজোফ্রেনিয়ার রোগীতে পরিণত করে। সিনেমা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বোঝার উপায় থাকে না যে আসলে কে সঠিক, ন্যাশ নাকি ডাক্তাররা? গুণী অভিনেতা রাসেল ক্রোর অনবদ্য অভিনয় আর রন হাওয়ার্ড এর অসাধারণ পরিচালনাই এর পেছনে বিদ্যমান কারণ। ছবিটি যে সমালোচকদের খুব প্রিয় তা বোঝা যায় বিখ্যাত সমালোচক রজার এবার্টে রেটিং দেখে, তিনি মুভিটিকে চারটি তারকায় সম্মানিত করেছেন, যা তার সর্বোচ্চ রেটিং। ছবিটির ব্যবসায়িক সাফল্যও বেশ, ৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে নির্মিত মুভিটি ব্যবসা করেছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ছবিটি সাতটি ক্যাটাগরিতে অস্কারের জন্য মনোনয়ন পেলেও চারটি অস্কার লাভ করে, যার মধ্যে সেরা ছবি ও পরিচালক অন্যতম। রাসেল ক্রো অনবদ্য অভিনয় করলেও হারাতে পারেননি ট্রেইনিং ডে ছবির হিরো শক্তিশালী অভিনেতা ডেনজাইল ওয়াশিংটনকে। জন ন্যাশের জীবনসঙ্গিনী চরিত্রে জেনিফার কনোলি অস্কার জিতে নিয়েছিলেন সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে। অবশ্য এই ছবিটিও কিছু কিছু ত্রুটি থেকে মুক্ত নয়, জন ন্যাশের চিত্রায়ন করতে গিয়ে বেশ কিছু ব্যাপার ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়, যা পরে সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়ে। সব কিছু ছাপিয়ে আ বিউটিফুল মাইন্ড এখনো দর্শকদের অনেক প্রিয় মুভির অন্যতম।
গুডউইল হান্টিং
গুডউইল হান্টিং ১৯৯৭ সালের মুভি। জাতে আমেরিকান ড্রামা। এ মুভিটাও ম্যাথমেটিকস নিয়ে, মূল চরিত্র উইল হান্টিং খুব ভালো মস্তিষ্কের অধিকারী এবং তার প্রকাশ পায় যখন এমআইটি’র প্রফেসর ল্যাম্বো তার ছাত্রদের সমাধানের জন্য একটি জটিল প্রশ্ন রেখে যান কালো বোর্ডে এবং উইল সেটা সমাধান করে। অথচ উইল এমআইটি’র ছাত্র নয়, সে একজন কর্মচারী মাত্র এবং তার রয়েছে একটি বেদনাদায়ক অতীত। কিন্তু মেধা কখনো লুকিয়ে থাকে না এবং প্রফেসর ল্যাম্বোর মাধ্যমে তার পরিচয় হয় থেরাপিস্ট শনের সাথে। শনের সহযোগিতায় উইল শুরু করে একটি নতুন জীবন।
গুডউইল হান্টিং মুভিটা পরিচালনা করেছে গাস ভ্যান সান্ত। এই পরিচালক কিছু দিন আগে অস্কার মনোনীত মিল্ক ছবির মাধ্যমে আলোচনায় আসেন, যদিও হিচককের সাইকো সিনেমার রিমেকের মাধ্যমে তিনি বছরের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পরিচালকের খেতাবও জিতেছিলেন ১৯৯৮ সালে। মুভিতে উইল হান্টিং চরিত্রে অভিনয় করেছে বর্ন সিরিজ খ্যাত ম্যাট ডেমন, অন্য দিকে থেরাপিস্ট শন চরিত্রে রবিন উইলিয়ামস। এ ছাড়াও রয়েছে বেন অ্যাফ্লেক। ছবির কাহিনী অভিনেতা ম্যাট ডেমন এবং বেন অ্যাফ্লেকের সৃষ্টি এবং মজার ব্যাপার হলো কাহিনীটি তারা লিখেছিলেন থ্রিলার হিসেবে। কিন্তু পরে তা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। মেল গিবসন কিংবা স্টিভেন সোডারবার্গের মতো ডিরেক্টররা এর পরিচালনা করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাট ডেমন এবং বেন অ্যাফ্লেকের মতানুযায়ী সান্ত পরিচালনা করেন।
ছবিটি সারা বিশ্বে বেশ আলোড়ন তুলেছিল। সমালোচকদের প্রিয় ছবির একটি গুডউইল হান্টিং এবং এর প্রতিফলন দেখা যায় রোটেন টমাটোস এ, তাদের মতে ৯৭ শতাংশ সমালোচক ছবিটিকে ফ্রেশ বলে আখ্যায়িত করেছে। ছবিটির অভিনেতা ম্যাট ডেমন এবং রবিন উইলিয়ামস অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন এবং রবিন উইলিয়ামস জিতে নেয় সেরা অভিনেতার পুরস্কার, অবশ্য ম্যাট ডেমন এবং বেন অ্যাফ্লেক বঞ্চিত হননি, তারা জিতে নিয়েছেন সেরা অরিজিনাল চিত্রনাট্যের পুরস্কার। বলা হয়, ২২৫ মিলিয়ন ডলার উপার্জনের মাধ্যমে গুডউইল হান্টিং মোট বাজেটের ২২ গুণ অর্থ ফেরত নিয়েছে। ব্যবসা যাই হোক না কেন, এই মুভিটা যে ম্যাট ডেমনকে সারা বিশ্বে পরিচিত করেছে, এতে কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
অন্যান্য পোস্ট :
দ্য কিংডম অব হ্যাভেন: ক্রুসেডারদের নিয়ে রিডলি স্কট
কেট আর ডিক্যাপ্রিওর মুভি: রিভ্যূলশুনারী রোড
সেপ্টেম্বর ডন: গনহত্যার ইতিহাস
গনিত নিয়ে সিনেমা: আ বিউটিফুল মাইন্ড এবং গুডউইল হান্টিং
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১১টি মন্তব্য ৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন