somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভিটক: ট্রিলজি অব ডেথ: অ্যামোরেস পের্রোস (প্রথম পর্ব)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুভি ট্রিলজির কথাটির সাথে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। বিশেষ করে গডফাদার ট্রিলজি, ব্যাক টু দ্য ফিউচার ট্রিলজি, লর্ড অব দ্য রিঙস ট্রিলজি, জ্যাসন বোর্ন ট্রিলজি, কিংবা আমাদের উপমহাদেশের বিখ্যাত সত্যাজিত রায়ের অপু ট্রিলজি ইত্যাদি সিনেমাগুলো মুভি ট্রিলজি সম্পর্কে মুভি দর্শকদের মধ্যে পর্যাপ্ত ধারনা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। সাধারণত একই বিষয়কে কেন্দ্র করে যখন তিনটি সিনেমা নির্মিত হলে সেগুলো ট্রিলজি হিসেবে পরিচিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই ট্রিলজিগুলো একই পরিচালকের সৃষ্টি, প্রায় একই অভিনেতারা অভিনয় করেন তবে ব্যতিক্রমও লক্ষ্যনীয়। যেমন গডফাদার ট্রিলজি, কিংবা জ্যাসন বোর্ন ট্রিলজির পরিচালক পাল্টে গেছেন কোন এক পর্বে।

ট্রিলজি অব ডেথ কিংবা সহজ কথায় ডেথ ট্রিলজির মুভি তিনটি ডেথ বা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এ পর্যন্ত দুজন পরিচালক ডেথ ট্রিলজি বানিয়েছেন, এদের একজন আমেরিকান ফিল্মমেকার গাস ভ্যান সান্ত যিনি তার গুডউইল হান্টিঙ এবং গেল বছরের মিল্ম সিনেমার জন্য বেশ সুপরিচিত, তার পরিচালিত তিনটি সিনেমার নাম হলো গ্যারি (২০০২), এলিফ্যান্ট (২০০৩) এবং লাস্ট ডেজ (২০০৫)। অন্য পরিচালক হলেন আলেজান্দ্রো গনজালেস ইনারতু, তিনি একজন মেক্সিকান পরিচালক। তার লিখিত এবং পরিচালিত ডেথ ট্রিলজির সিনেমাগুলো হলো আমোরেস পেরস, 21 গ্রামোস এবং বাবেল। এর মধ্যে তৃতীয় সিনেমাটি মুভি দর্শকদের কাছে বেশ পরিচিত কারণ ২০০৬ সালে সিনেমাটি সেরা চলচ্চিত্র সহ মোট সাতটি ক্যাটাগরীতে অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিল।

অ্যামোরেস পেরস একটি অ্যানথোলজি ফিল্ম। এ ধরনের সিনেমায় কাহিনী দু'তিনুটে ভাগে ভাগ করে বলা হয় যার প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্র, স্বাধীন কিন্তু পরস্পরের সাথে কোন না কোনভাবে এক সুতোয় বাধা। অ্যামোরেস পেরস সিনেমায় মোট তিনটি গল্প। প্রথম অংশে অক্টোভিয়া এবং সুসানার কাহিনী। অক্টোভিয়া তার বড় ভাইয়ের বউ সুসানার প্রেমে পাগল, তাকে নিয়ে পালিয়ে নতুন সংসার গড়ার ইচ্ছে তার। এ জন্য তাদের কুকুর্য কফিকে নিয়ে ডগ ফাইটে যোগ দেয় অক্টোভিয়া যেখানে কফি খুব সহজেই তার প্রতিপক্ষকে পরাভূত করে, কখনো কখনো হত্যা করে এনে দেয় হাজার হাজার ডলার। সেই টাকা অক্টোভিয়া আর সুসানা মিলে ভবিষ্যতের জন্য জমা করে। সিনেমার আরেক অংশে রয়েছে ড্যানিয়েল এবং ভ্যালেরিয়ার কাহিনী। নিজ স্ত্রীকে ত্যাগ করে ড্যানিয়েল সুপার মডেল ভ্যালেরিয়ার সাথে সংসার বাঁধে কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় পা হারাতে হয় সুপার মডেল ভ্যালেরিয়াকে। ঘটনা গুরুতর হয়ে দাড়ায় যখন ভ্যালেরিয়ার পোষা আদুরে কুকুর রিচি ঘরের কাঠের মেঝেতে ছিদ্র নিয়ে নিচে পড়ে যায় এবং দিন কতক আটকে থাকে। এই নিয়ে ড্যানিয়েল এবং ভ্যালেরিয়ার সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়।
ড্যানিয়েল-ভ্যালেরিয়া কিংবা অক্টোভিয়া-সুসানার থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের কাহিনী তৃতীয় অংশে যেখানে মূল চরিত্র এল চিভো, কাচা পাকা দাড়ি গোফের জঙ্গলে ঢাকা একজন নোংরা, অপরিস্কার ভবঘুরে, বেশ কিছু পোষা কুকুর নিয়ে শহরের এদিকে সেদিকে ঘুরে বেড়ায় সে। যৌবনে একজন গেরিলা যোদ্ধা এল চিভো বর্তমানে একজন ভাড়াটে খুনী, পয়সার বিনিময়ে মানুষ খুন করে সে। আর খুজে বেড়ায় তার মেয়েকে যাকে দুবছর বয়েসে ফেলে সে বেরিয়ে গিয়েছিল পৃথিবীকে পাল্টে দেবে বলে।

এই তিনটি কাহিনী আপাত দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন মনে হলেও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কিছু বিশেষ ঘটনার মাধ্যমে। আহত কুকুর কফিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবার সময় ভ্যালেরিয়ার গাড়িকে ধাক্কা দিয়েছিল অক্টোভিয়া। মারাত্মক আহত অক্টোভিয়া এবং ভ্যালেরিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও রাস্তার উপর ফেলে যাওয়া হয় কুকুর কফিকে। আর সেই কুকুরকে সেবা শুশ্রুষার মাধ্যেমে সুস্থ্য করে তোলে এল চিভো।
আলেসান্দ্রো গনজালেস তার এই মুভিতে মেক্সিকোর নিচু, মধ্যবিত্ত এবং উচু তলার মানুষের জীবনযাত্রার কিছু দিক তুলে ধরতে পেরেছেন। মানুষে মানুষে এবং মানুষে পশুতে ভালোবাসা-ঘৃণার যে রূপ খুব নিরাবেগের সাথে তুলে ধরা হয়েছে এই মুভিতে। অক্টোভিয়া সুসানাকে ভালোবেসে তার আপন ভাই রামিরোকে পেটানোর ব্যবস্থা করে, অথচ সেই সুসানা শত অত্যাচার সহ্য করে শেষ পর্যন্ত রামিরোকে ঠকিয়ে অক্টোভিয়ার সাথে পালাতে পারে না। এল চিভোকে দিয়ে ভাইকে হত্যা করার চেষ্টা করে একজন, ঘটনাক্রমে এল চিভো তার টার্গেটকে বন্দী করে, কৌশলে নিয়ে আছে তার ক্লায়েন্টকেও। তারপর মুখোমুখি দুজনকে বন্দী করে মাঝখানে রাখে পিস্তলটা যেটা আয়ত্তে আনার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালায় দুজনেই, তবে এই চেষ্টা কি নিজেকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নাকি অপরপক্ষকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সেটা অবশ্য অপরিস্কার থেকেই যায়। সব কিছু ছাপিয়ে উঠে এল চিভোর পশুপ্রেম। রাস্তার কুকুরকে সে খুব ভালোবাসে, অথচ অর্থের বিনিময়ে মানুষ হত্যা করতে তার বাধে না।
২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় আরেকটি ব্যাপার বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়, সেটা হলো ভাগ্য, আরেকটু স্পষ্ট করে বললে সেটা হলো নিয়তি।

আগামীদিন দ্বিতীয় পর্ব: ২১ গ্রামোস

আমার অন্যান্য কিছু পোস্ট:
প্রতিদিন একটি মুভি-১: সিটি লাইটস - এক সপ্তাহে সাতটি মুভির রিভিউ লেখার ইচ্ছে ছিল। প্রথম দিন চার্লি চ্যাপলিনের সিটি লাইটস । রোমান্স-কমেডি মুভি।

প্রতিদিন একটি মুভি-২: এল এ কনফেডিন্সিয়াল - দ্বিতীয় পর্বে লিখলাম এল এ কনফেডিন্সিয়াল নিয়ে। পুলিসের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এ মুভিতে অভিনয় করেছেন রাসেল ক্রো, কেভিন স্পেসির মতো তারকারা।

ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাক্কুস নেস্ট - মেন্টাল হসপিটালে কি হয়? মানসিক রোগীরা কি আসলেই রোগী? বাস্তবতার প্রতীকি সিনেমা, জ্যাক নিকলসনের অসাধারণ অভিনয়।

কুল হ্যান্ড লিউক: সিস্টেমের বিরুদ্ধে হাসিমুখে প্রতিবাদ - কাক্কুস নেস্টের সাথে এই সিনেমার নাম উচ্চারণ করতেই হবে। পল নিউম্যানের অভিনীত এই সিনেমার থিম যে মোটামুটি একই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:১২
১৭টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×