somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Juno: সিনেমা এবং চাইল্ড প্রেগন্যান্সি

২৬ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমে সিনেমা দিয়েই শুরু করি।

জুনো নামের মেয়েটি, তার বয়স মাত্র ১৬, কিছুটা আগ্রহী হয়েছিল সহবাস অভিজ্ঞতা কিরূপ সেটা জানার জন্য। তার আগ্রহের সফল সমাপ্তি ঘটে তারই ক্লাসমেট-বন্ধু-প্রতিবেশী পলি ব্লিকারের মাধ্যমে। কিছুদিন পরে জুনো কিছু শারীরিক সমস্যা অনুভব করে এবং নিজেই টেস্ট করে জানতে পারে – সে পজিটিভ। স্কুলপড়ুয়া একটি মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে সেটা কতটা অস্বাভাবিক লাগবে সেটা ভিন্ন কথা কিন্তু জুনো তার ভ্রুনটিকে নষ্ট করতে হাজির হলো এমন একটি নারীবাদী প্রতিষ্ঠানে যারা ্অ্যাবরশনে সাহায্য করে। যে কোন কারণেই হোক, জুনো সেবা গ্রহন না করেই ফিরে এলো এবং সিদ্ধান্ত নিল – সে বাচ্চাটি জন্ম দিবে, তবে মা হবে না – বরং মা হতে পারছে না এমন কোন একটি পরিবারে বাচ্চাটি দান করে কিছু সহযোগিতা করবে। সুতরাং তার গর্ভে বড় হতে লাগলো বাচ্চাটি।

একজন দর্শক হিসেবে সিনেমাটিকে আপনি কিভাবে দেখবেন তার সম্পূর্ন স্বাধীনতা আপনারই – আপনি একে একটি নারীবাদী সিনেমা হিসেবে দেখতে পারেন যেখানে একজন নারী তার নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহন ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ দেখিয়েছে; আপনি একে ভ্রুনহত্যার প্রতিবাদ হিসেবে দেখতে পারেন অথবা নিছকই এক স্কুলগার্লের প্রেগন্যান্সি এবং রোমান্টিকতা হিসেবে দেখতে পারেন। আমি এই সবগুলো দৃষ্টিভঙ্গিতেই সিনেমাটিকে দেখতে পছন্দ করি তবে গ্রহন করতে পারি না। আমার কাছে কেমন যেন অস্বাভাবিক মনে হয় – একটি মেয়ে ইচ্ছে হলো তো এক পুরুষের সাথে বিছানায় গেল, প্রেগন্যান্ট হলো তো অ্যাবরশন করলো কি করলো না, একটা বাচ্চা জন্ম হলো অথচ তার বাবা-মা’র কোন পরিচয় জানলো না, কোথাকার কোন এক সিঙ্গল মহিলার অ্যাডপ্টেড সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠতে লাগলো – আমার কাছে কেমন অস্বাভাবিক লাগে। কেমন করে সম্ভব? আমি মানছি যে আমি আমার পরিবেশ-ধর্ম বিশ্বাস দ্বারা নির্মিত কাঠামোর বাহিরে চিন্তা করতে পারছি না, সেরকম চিন্তা করতে আমার তেমন কোন আগ্রহও হচ্ছে না – কিন্তু এটাই সত্যি যে আমি এই পুরো ঘটনার মধ্যে মানবিকতা দেখি না, দেখি পশুত্ব।

অ্যাবরশনের বিরুদ্ধে এই সিনেমা খুব ভালো একটি প্রতিবাদ, কিন্তু এর জন্য কি অপরিনত বয়সে অবৈধ সহবাসের প্রতি সমর্থন দেয়া হয়ে গেল না? আরো কোন ভালো সমাধান কি ছিল না? এই বয়সের একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের শারীরিক প্রয়োজন জাগতেই পারে, সেটা পূরনের সঠিক পন্থাটাকেই কি সমর্থন করা উচিত নয়? অপরিণত বয়ষে বিয়ের বিরোধিতা করা হচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু এর ফলে যে চাইল্ড প্রেগন্যান্সির মতো সামাজিক সমস্যাগুলো ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে তার কি হবে?

মানব শিশু মৃত্যুর হার যেনো হ্রাস পায় সেজন্য আপনি বাল্য বিবাহ বন্ধ করলেন, দেখা গেল বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বেড়ে চলছে, সেই সাথে প্রেগন্যান্সি, তাই জন্মনিরোধক সহজলভ্য করলেন, তা ব্যবহারের জন্য মানুষকে শিক্ষিত করতে লাগলেন, লাভ হচ্ছে না, তাই পিতৃ-মাতৃপরিচয়হীন শিশুগুলোর বেড়ে উঠার জন্য তৃতীয় কোন ব্যবস্থা গ্রহন করলেন – কেমন হাস্যকর শোনায় না? আপনাকে বাল্য বিবাহ চালু রাখার কথা বলছি না, বন্ধ করা দরকার সেই সমর্থন আমার আছে – কিন্তু যে শিক্ষাটা তাকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বিরত রাখবে – সেই শিক্ষাটা কি সেই পরিমানে দিচ্ছেন?

আমি খুব অযৌক্তিকভাবে এইসব কথা বলছি না – ২০০৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনে একটি রিপোর্টে ম্যাচাসুয়েটেসে ষোল বছরের নিচের ১৭ জন শিক্ষার্থীর প্রেগন্যান্সির ঘটনাকে উল্লেখ করতে গিয়ে তারা এই সিনেমার নামে ‘জুনো ইফেক্ট’ শব্দটি উল্লেখ করেছিল। মনে পড়ে, সারাহ পলিনের কিশোরী মেয়ে খুব আলোচনায় এসেছিল? বাংলাদেশে এই অবস্থা এতটা ভয়াবহ নয়, সেটা আমি অস্বীকার করি না, তবে তাই বলে যে পরিস্হিতি সে দিকে যাচ্ছে না তা কিন্তু নয়।

রাগ লাগে, তাই এইসব লিখি। সিনেমাটা ভালো, বেশ সফল – সেরা সিনেমার তালিকায় নাম তুলেছে যদিও কেউ কেউ দাবী করেন এটা একটা জাপানী সিনেমার নকল তারপরেও বলি, দেখতে ভালো লাগবে। কিন্তু দেখাটাই যেনো শেষ কথা না হয় – দেখার পর আপনার বিবেক শুধু চাইল্ড প্রেগন্যান্সি নয বরং বিবাহ বহির্ভূত এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে আরও শক্তভাবে দাড়াতে সাহায্য করে সেটা নিশ্চিত করা উচিত -এটা আপনারই দায়িত্ব।
=============================================
দারাশিকো ব্লগে আপনাকে আমন্ত্রন। দারাশিকো ব্লগ এখন আরও বিস্তৃত ও নতুন রূপে, সিনেমার লেখকদের জন্য বিশেষ সুবিধা সহ।


ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ: সমাজে কখনোই ভালো মানুষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় না, ভালো মানুষের অবর্তমানে সমাজ পুরোটাই পাল্টে যেতে পারে। সামুতে অপ্রকাশিত।

মহামন্দায় সিনেমা, মহামন্দার সিনেমা: সামুতে অপ্রকাশিত পোস্ট

সম্প্রতি কি সিনেমা দেখলাম : শেয়ার করুন আপনার দেখা লেটেস্ট সিনেমাটি
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

ফেসবুকে থাকুন দারাশিকোর ব্লগের সাথে
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১২:২৪
১৭টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×