somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Fetih 1453: তুরস্কের গৌরবময় ইতিহাসের ছবি

০৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফাতিহ তুর্কি শব্দ, এর অর্থ ইংরেজিতে ‘কনকোয়েস্ট’। তবে তুর্কির সুলতান মাহমুদের নামের সাথেই ‘ফাতিহ’ শব্দটি জড়িয়ে আছে, তার নাম উচ্চারন করা হয় – সুলতান মাহমুদ ফাতিহ। ১৪৫৩ সালে টানা ৫৭ দিন অবরোধের পর তুর্কি এই বীরের কনস্টানটিনোপোল (আজকের ইস্তাম্বুল) জয়ের কহিনী নিয়ে তুর্কিরা তৈরী করেছে তাদের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এপিক সিনেমা – ফাতিহ ১৪৫৩।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) ৬২৭ খ্রীস্টাব্দে ওফাতের পূর্বে বলেছিলেন – “Constantinople will surely be conquered. What a blessed commander is its and what a blessed army is its army” এবং এই উক্তিকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে বাইজেন্টাইন রাজ্যের রাজধানী কনস্টানটিনোপোল জয়ের জন্য এগিয়ে গিয়েছে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ (Mehmed II)। প্রথমবার সিংহাসনে আরোহন করেছিলেন মাত্র বারো বছর বয়সে, কিন্তু তার অল্প বয়স রাজ্য পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি করবে আশংকায় তাকে অল্পদিন পরেই সরিয়ে দেয়া হয়, পরবর্তীতে মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি বিশাল সেনাবাহিনী অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা আর যোগ্যতার সাথে পরিচালনা করে কনস্টানটিনোপোল জয় করেন। ফাতিহ ১৪৫৩ সিনেমার কাহিনী এটাই, এর পাশাপাশি তরকারীকে উপাদেয় করতে ইরা নামের এক তরুনীর প্রেমে মগ্ন একজন মুসলমান ও খ্রীষ্টান তরুনের ত্রিভুজ প্রেম কাহিনীও ফাঁদা হয়েছে।

মুসলমানদের শৌর্য বীর্যের একটি দারুন চিত্র ফুটে উঠেছে এই সিনেমায়। মুসলমানদের রণকৌশল, প্রযুক্তিজ্ঞান, সামরিক বাহিনীর দক্ষতা, ঐক্য ইত্যাদির মাধ্যমে ৫০০ বছর আগে মুসলমানদের গৌরবময় এক অধ্যায়ের সাথে পরিচিত করে দেয়ার এই চেষ্টা প্রশংসনীয়। বলা হচ্ছে, তুর্কিসহ বিশ্বের মুসলমানদেরকে অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের সিনেমা নির্মান (সূত্র: গার্ডিয়ান)। তুরস্কের সবচে’ ব্যয়বহুল এই সিনেমার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে খুব বেশী প্রশ্ন উঠেনি, ইতিহাসকে অনুসরণ করা হয়েছে। তবে, প্রতিপক্ষ খ্রীষ্টান সম্রাজ্যকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয় নি এবং ক্ষেত্রবিশেষে হীনভাবে উপস্থাপন করার অভিযোগ পাওয়া যায়। এই অভিযোগে লেবাননে ‘ফাতিহ ১৪৫৮’ সিনেমাটির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে (সূত্র: ডেইলি স্টার, লেবানন)। মুসলমানদের মহৎ করে দেখানোর উদ্দেশ্যে খ্রীষ্টানদের আয়োজনকে ছোট করে দেখানোর অভিযোগও পাওয়া যায়।



যেহেতু ইতিহাস নির্ভর সিনেমা, তাই কাহিনীতে তেমন গোলমাল পাওয়া যায় না, সেই চেষ্টা করাও ঠিক হবে না। হলিউডের সিনেমা দেখে অভিজ্ঞ যে চোখ তার কাছে এপিক এই সিনেমার সিজি অনেক ক্ষেত্রে অপরিপক্কতার চিহ্ন বহন করে। ৮০ হাজার থেকে ২ লক্ষ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে সুলতান মাহমুদ অগ্রসর হয়েছিলেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়, কিন্তু সেই তুলনায় সিনেমা সম্মুখ যুদ্ধের নৈপুন্য খুব বিকশিত নয়। কিন্তু সৈন্যবাহিনীর কস্টিউম সত্যিই বেশ চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে, সুলতান মাহমুদের লেবাশ তাকে উপযুক্ত হিসেবে উপস্থাপন করেছে। মুসলমানদের বাকানো আর খ্রীষ্টানদের ক্রসাকৃতির তরোয়ালের মাধ্যমে দুপক্ষকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াটা অভিনব, এছাড়া পোষাকের নির্বাচনও ভালো হয়েছে। বিরক্ত লেগেছে, অপ্রয়োজনীয় ভাবে বিভিন্ন নারী চরিত্রের উপস্থিতি। ইরা, হাসান এবংঅন্য খ্রীষ্টান বীরের উপস্থাপন অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে হাস্যকর। হাসান ও প্রতিপক্ষের প্রেমিক অন্য বীর এই ৫৭ দিন ব্যাপী যুদ্ধের ময়দানে কেন কোনরকম বর্ম ছাড়াই চলাচল করতো তা বোধগম্য নয়।

ফাতিহ ১৪৫৩ এর সাথে নাম উল্লেখ করা যেতে পারে রিডলি স্কট পরিচালিত সিনেমা ‘কিংডম অব হ্যাভেন’ এর, যেখানে মুসলিম বীর সালাহউদ্দীন এর বীরোচিত উপস্থাপন লক্ষ্যনীয়। কারিগরী প্রযুক্তির ব্যবহার আর কাহিনী-চরিত্রের বিশ্লেষনে ‘কিংডম অব হ্যাভেন‘ এ সব থেকেই এগিয়ে থাকলেও তুর্কি পরিচালক ফারুক আসকি’র এই উদ্যোগ নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। প্রায় ‘আনটাচড’ মুসলিম ইতিহাসের অন্যান্য গৌরবময় বিষয় তুলে আনার ব্যাপারে অন্যান্য ফিল্মমেকাররা উদ্বুদ্ধ হবেন ‘ফাতিহ ১৪৫৩’ দেখে – সেই শুভকামনা থাকল।

পরবর্তী রিভিউ:
হেমলক সোসাইটি

স্বাগতম দারাশিকো'র ব্লগের ফেসবুক পেইজে
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×