আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্পাই নেটওয়ার্ক হলো হিজড়াদের নেটওয়ার্ক। বিশ্বাস হচ্ছে না? আপনার পরিবারে একটি নতুন শিশু জন্মানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আপনার বিল্ডিং এর লোকজন না জানতে পারে, কিন্তু হিজড়ারা ঠিক টের পেয়ে যাবে। এমনকি তারা সেই বাসার সদস্যদেরকেও ডিটেক্ট করতে সক্ষম।
কিভাবে টের পায় সেটা নিশ্চিত নই। বারান্দায় বাচ্চার কাঁথা-কাপড় শুকাতে দেয়া হলে তারা সহজেই বুঝতে পারে। তবে আরও উপায় আছে। বাসার বুয়া, দারোয়ান, গলির দোকানদার ইত্যাদি অনেক সোর্স থেকেই তারা এই খবর পায়। কেউ কেউ বলে - হাসপাতালের আয়া থেকেও তথ্য পায় তারা, বিনিময়ে সোর্সকে ভাগ দিতে হয় - তবে এটা কতটুকু সত্যি তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
শিশু জন্মের এক মাসের মধ্যে তারা আপনার বাসায় হাজির হবে। সাধারণত দিনের বেলায় আসবে - এক, দুই বা আরও বেশি সদস্য নিয়ে। এ সময় হিজড়াদের মোকাবেলা করার মত শক্ত-সামর্থ্যবান পুরুষরা বাসায় থাকেন না। প্রসূতি মা-রা ভয় পান অনেক বেশি - যদি বাচ্চাকে নিয়ে যায়! হিজড়াদের দাবী একটাই - নতুন বাচ্চার আগমন উপলক্ষ্যে তাদেরকে বকশিস দিতে হবে।
বকশিসের পরিমাণ কত হবে সেটা সম্ভবত এলাকাভেদে কম-বেশি হয়। ১০০০ টাকার কম দিয়ে রক্ষা পেয়েছে এমন কাউকে পাইনি এখনও। সর্বোচ্চ দেখেছি ৫,০০০ টাকা দিয়ে রক্ষা পেতে।
তাদের এই দাবী পূরণ না করে উপায় নেই। তারা বিরক্ত করতেই থাকবে। চেষ্টা করবে - আপনার প্রতিবেশী বা অন্য কোন একটা মিথ্যা কথা বলে বাসার দরজা খোলার। দরজা যদি একবার খুলেন, তাহলে ফেঁসে গেলেন, আপনার নেগোশিয়েশন করার ক্ষমতাও কমে যাবে।
সুতরাং, শিশু জন্মানোর পর প্রতিবেশি-আত্মীয় স্বজনের বাসায় মিষ্টি বিতরণের সময়ই আপনার প্রস্তুতি নেয়া উচিত। কি করবেন?
১। বাসার দরজা খুলবেন না। দারোয়ান থাকলেও লাভ হয় না সাধারণত, তবে সে যেনো আপনাকে ফোন করে আগেই জানিয়ে দিতে পারে, সেই চেষ্টা করতে পারেন।
২। প্রথমে বাসায় কেউ নাই, টাকা নাই, পরে আসতে হবে ইত্যাদি বলে কিছুক্ষণ সময়ক্ষেপন করতে হবে।
৩। তারপর ১০০ টাকা থেকে দরকষাকষি শুরু করতে হবে। সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা পর্যন্ত দর তুলবেন। হিজড়ারা অবশ্য ৫,০০০ টাকার কমে রাজী হতে চাইবে না। যদি দরজা খুলে ফেলেন, তাহলে ১,০০০ টাকার বেশি আপনাকে দিতেই হবে।
৪। টাকা হস্তান্তরের আগে যে হিজড়ারা এসেছে তাদের নাম জেনে নিন, কাগজে তাদের নাম ও ফোন নাম্বার লিখে নিন। তারা কোন সর্দারের অধীনে চাঁদাবাজি করছে সেটাও জেনে নিন।
৫। শিশু যদি কেবল আপনার বাসায় না থেকে আপনার বাসার পাশেই নানা-দাদা-মামা-চাচা-ফুপু-খালার বাসায়ও থাকে, তাহলে আগেই বলে নিন - ওমুক এলাকায়ও আপনি থাকেন, আর কখনও টাকা দিতে পারবেন না।
৬। টাকা হস্তান্তর করে কাগজটি অন্ততপক্ষে এক বছর সময়কাল সংরক্ষণ করুন। এর মাঝে আরও কয়েকবার আসতে পারে, হিজড়াদের নাম ও ফোন নাম্বার আপনাকে এক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
৭। হিজড়াদের উৎপাত থেকে বাঁচার জন্য বারান্দায় কাপড় শুকাতে না দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এতে হয়তো কিছুটা উপকার হবে।
আপনাদের কোন পরামর্শ আছে? কিংবা অভিজ্ঞতা?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:২০