somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৈয়দ মুজতবা আলীর "চতুরঙ্গ" বইয়ের একটি পাদটীকা এবং ভুলে যাওয়া একটি ইসলামী শিক্ষা।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগে সৈয়দ মুজতবা আলীর "চতুরঙ্গ" নামক একটি প্রবন্ধের বই পড়ছিলাম। এই বইতে তার ২১ টি প্রবন্ধ আছে। দ্বিতীয় প্রবন্ধটির নাম "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব"। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (১৮৩৬-১৮৮৬) ছিলেন হিন্দু ধর্মের একজন ধর্মগুরু। তার সম্পর্কেই আলোচ্য প্রবন্ধটি লেখা। আমার এই প্রবন্ধ সম্পর্কে লিখতে বসার কারণ অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। হিন্দু ধর্মের ধর্মগুরু নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ থাকার কথা নয়, কারণ আমি মুসলমান। আগ্রহ দেখাচ্ছি কারণ ঐ প্রবন্ধের ৫ নং পাদটীকায় লেখক যে তথ্যটি দিয়েছেন আমার মতে বর্তমান যুগে বেশিরভাগ মুসলিমের সেই তথ্যটি অজানা।

লেখক লিখেছেন: বস্তুত, সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম পৃথিবীতে কোন মহাপুরুষ কখনোই আরম্ভ করেননি। বুদ্ধদেব বলতেন, তাঁর পূর্বে বহু বুদ্ধ জন্ম নিয়েছেন, মহাবীর জৈনদের সর্বশেষ তীর্থঙ্কর বা জিন। খ্রিষ্ট বলেন, তিনি বিধির বিধান ভাঙ্গতে আসেননি - তিনি এসেছেন তাকে পূর্ণরূপ দান করতে। হজরত মুহম্মদ বলতেন, তাঁর পূর্বে সহস্র পয়গম্বর আবির্ভূত হয়েছেন। বস্তুত এঁদের কেউ বলেননি, আমি প্রথম। প্রায় সকলেই বলেছেন, আমিই শেষ

এখানে দুটি বিশেষ তথ্য আছে। প্রথম তথ্য "সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম পৃথিবীতে কোন মহাপুরুষ কখনোই আরম্ভ করেননি"। যেহেতু নবী-রসূলগণ এক আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত। তাই প্রকৃতপক্ষে ধর্মও একটি। একারণে কোরআনে আছে, নূহ (আ.) তার জাতিকে বলেছেন, "আমার প্রতিদান একমাত্র আল্লাহরই কাছে এবং আমাকে মুসলিমদের/আত্মসমর্পনকারীদের অন্তর্ভূক্ত হবার আদেশ দেয়া হয়েছে।" (সূরা ইউনুস ১০:৭৩)

আরেক স্থানে লুত (আ.) এর জাতি সম্পর্কে লেখা আছে, "আর মুসলিমদের/আত্মসমর্পনকারীদের মাত্র একটি ঘরই আমরা সেখানে পেলাম।" (সূরা যারিয়াত ৫১:৩৭)

এ দুটি আয়াত থেকে লেখকের টীকার প্রথম তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হয়। এবার দ্বিতীয় তথ্যের দিকে দৃষ্টি দেই যা হচ্ছে - বস্তুত এঁদের কেউ বলেননি, আমি প্রথম। প্রায় সকলেই বলেছেন, আমিই শেষ

বোল্ডকৃত এই শেষ লাইনটিইতেই আমার সব আগ্রহ। কারণ আমি আল্লাহর প্রেরিত সকল নবী-রসূলদের সত্যবাদী বলে মনে করি। আমি যতটুকু জানতাম, পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবে মহান আল্লাহ তা'লা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে খাতামান্নাবীঈন বলেছেন। বর্তমানে ইসলমের ৭৩ ফিরকার মধ্যে ১ টি ফিরকা ব্যতীত সকলেই মনে করে "খাতামান্নাবীঈন" অর্থ নবীদের শেষ এবং একারণে তাঁর (সা.) এর পরে কোন নবী নেই। কিন্তু সৈয়দ মুজতবা আলীর উল্লেখিত তথ্য যদি সত্য হয়, তবে আমাদের বলতে হবে, আরও অনেক পয়গম্বরেরও দাবী ছিল যে তারা প্রত্যেকেই শেষ পয়গম্বর। তাহলে প্রশ্ন জাগে, এই তথ্য ভুল, নাকি পয়গম্বররা ভুল। আপনারা হয়তো বলবেন, তথ্যই ভুল। কিন্তু যদি তথ্যও সঠিক হয়, পয়গম্বররাও সত্যবাদী সাব্যস্ত হন, তাহলে কি বলবেন?

আল্লাহর রহমতে আমি সেই ১ ফিরকার সদস্য যারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে খাতামান্নাবীঈন বলে বিশ্বাস করে এবং এটাও বিশ্বাস করে আল্লাহ তা'লা তাঁর (সা.) এর ওফাতের পরেও তাঁর (সা.) এর উম্মতদের মধ্যে নব্যুয়তের পুরষ্কার জারি রাখবেন। এই বিশ্বাসের কারণ সূরা নিসার ৭০ নং আয়াত, যাতে আল্লাহ তা'লা তাকে ও তার প্রিয় রসূল (সা.) এর আনুগত্যকারীদের জন্য ইহকালেই চারটি পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:

"আর যে (সব ব্যক্তি) আল্লাহ্ ও এ রসূলের আনুগত্য করবে এরাই তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে, যাদের আল্লাহ্ পুরস্কার দান করবেন (অর্থাৎ এরা) নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সালেহদের (অন্তর্ভূক্ত হবে)। আর এরাই সঙ্গী হিসেবে উত্তম।"

রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের পরেও যে তাঁর (সা.) এর পবিত্র সাহাবীদের আল্লাহ তা'লা শাহাদাতের পুরষ্কার দিয়েছেন এটা কারো অজানা নয়। সিদ্দীক ও সালেহ এর নেয়ামতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অন্যান্য মুসলমান ফিরকার সাথে এই বিষয়ে আমাদের বিতর্ক খুব কমই হয়। তবে যখনই বাদবাকি ১টি পুরস্কারের প্রসঙ্গ উঠে তখনই বিতর্ক শুরু হয়। কারণ, সূরা আহযাবের ৪১ নং আয়াত:

"মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের মাঝে কারো পিতা নয়। কিন্তু (সে) আল্লাহর রসূল ও খাতামান্নাবীঈন। আর আল্লাহ্ প্রত্যেক বিষয়ে পুরোপুরি অবগত।"

একটু আগে একটি প্রশ্ন জাগিয়েছিলাম, সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রদত্ত তথ্যটি ভুল, নাকি পয়গম্বররা ভুল। ঐ প্রশ্নের উত্তর দেয়া একটু সহজ ছিল। কারণ একপাশে ছিলেন ত্রুটিবিচ্যুতির অধীন একজন সাহিত্যিক, অন্যপাশে আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বর। কিন্তু এবার একই ধরণের আরেকটি প্রশ্ন জাগাতে চাচ্ছি। সূরা নিসার ৭০ আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ভুল, নাকি সূরা আহযাবের ৪১ নং আয়াতে বর্ণিত খাতামান্নাবীঈনের উপাধির প্রচলিত অর্থটি ভুল। এবার উত্তর দেয়া এত সহজ হবে না কারণ আল্লাহ তা'লা স্বয়ং তাঁর কিতাবকে বলেছেন, "এ সেই পূর্ণাঙ্গ কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা বাকারা)

সন্দেহ যদি নাই থাকে, তাহলে মানতেই হবে দুটি আয়াতই সঠিক। রাসূল (সা.) খাতামান্নাবীঈন সত্য, তাঁর (সা.) এর পরে আল্লাহ ও তাঁকে (সা.) যারা মান্য করবেন তাদের কাউকে কাউকে আল্লাহ তা'লা নব্যুয়তের পুরস্কার দিলে তাতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু খাতামান্নাবীঈন মানে যে "শেষ নবী"। তাহলে পরে কিভাবে নবী আসতে পারে? পারে এভাবে যে, খাতামান্নাবীঈন অর্থ শুধুই শেষ নবী না বরং শরীয়তের শেষ নবী। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত শরীয়তবাহী (আমাদের শরীয়ত কুরআন শরীফ) নবীগণের শেষ নবী। প্রত্যেক পয়গম্বরই এ রকম বিভিন্ন স্থান, কাল, পাত্রের প্রেক্ষাপটে শেষ নবী ছিলেন। যে কারণে খাতামান্নাবীঈন রাসূল (সা.) এর জন্য বিশেষ সম্মান তা হচ্ছে খাতামান্নাবীঈন শব্দটির অর্থের গভীরতা। মহানবী(স.) বলেছেন, আমি তখনও আল্লাহর বান্দা ও খাতামান্নবীঈন ছিলাম যখন আদমের জন্মও সম্পূর্ণ হয় নি। অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনাতেই যে সম্পূর্ণ নবী সৃষ্টি করার পরিকণ্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছিল তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। আর সর্বাঙ্গীন পরিপূর্ণ নবীকেই খাতামান নবীঈন বলা হয়। খাতামান্নাবীঈন এর আরও অনেকগুলো অর্থ আছে। যেমন: নবীদের মোহর, নবীগণের আংটি, নবীগণের সত্যায়নকারী ইত্যাদি। এরকম খাতামান্নাবীঈনের যতগুলো অর্থ হয় সবগুলো অর্থেই আমরা রাসূল (সা.) কে খাতামান্নাবীঈন বলে মান্য করি।

তবে এটাও ঠিক তার পরে শরীয়তবিহীন নবীর আগমনের পথ খোলা আছে। এবং তাঁর (সা.) এর পরে নবী আসলেই যে পরবর্তী নবী শ্রেষ্ঠ নবী হবেন এরূপ ভাবা ভুল। যিনি শেষে আসেন তিনিই শ্রেষ্ঠ এই তত্ত্বের যৌক্তিকতা আমার কাছে অস্পষ্ট (কেউ স্পষ্ট করতে পারলে তাকে স্বাগতম জানাচ্ছি)। আর মজার বিষয় হল, এই তত্ত্বে বিশ্বাসীগণ আবার ঈসা (আ.) নবীউল্লাহর আকাশ থেকে পুনরাগমনে বিশ্বাসী। তাদের তফসীরে তারা স্পষ্ট লিখেছেন, আগমনকারী ঈসা(আ.) অবশ্যই নবী হবেন। তাকে না মানলে কাফের হয়ে যেতে হবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেও তারা খাতামান্নাবীঈনের (সা.) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে অক্ষম।

তবে রাসূল (সা.) এর উম্মাতের মধ্যে পুরস্কারস্বরূপ কাউকে আল্লাহ নবী মনোনীত করলে এই সমস্যায় পড়তে হয় না। কারণ সূরা নিসার আয়াতে ঐরূপ নবীর জন্য আল্লাহ ও তার রসূল (সা.) এর আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ পদমর্যাদায় রাসূল (সা.) এর পরে কোন নবী নেই। এটাও খাতামান্নাবীঈনের আরও একটি অর্থ এবং এ কারণেই রাসূল (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী। বিষয়গুলো অনেকেরই অজানা, তাই সবার জন্য শেয়ার করলাম। কেমন লাগলো জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪
২৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×