somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বনাম ধর্মভিত্তিক রাজনীতি

০৮ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়নি, বরং ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা (ঈড়সঢ়ষবঃব পড়ফব ড়ভ ষরভব). যাতে রয়েছে দ্বীনি আকীদা বিশ্বাস জীবনবোধ ও জীবনযাপন পদ্ধতি। সামাজিক বিধি-বিধান রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক পরিচালনা বিধি। ইসলামকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা বা তাকে ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা আর ইসলাম বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এক জিনিস নয়। এতে কোন সন্দেহ বা বির্তকের অবকাশ নেই।
রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের ব্যবহার অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের নিন্দায় যারা যত বেশী সোচ্চার মূলত তারাই ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তত বেশি পটু ও অগ্রগামী। কারণ তাদের আক্রমণের একমাত্র লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসমূহ। শুধু বাংলাদেশের পরিস্থিতিতেই নয় আর্ন্তজাতিক প্রেক্ষাপটেও চলছে এই আক্রমণ। সমালোচনার একমাত্র টার্গেট বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের পূণর্জাগরণের আন্দোলন। এখানে একটা কথা পরিষ্কার হওয়া দরকার বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে একমাত্র ইসলামই একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের সমাধান দিতে সক্ষম। কারণ, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলো যেমন ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ-তাওরাত, খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ-ইঞ্জিলে যেসব দিক নির্দেশনা ছিল তা বিকৃত এবং পরিত্যক্ত হয়েছে। এ হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলোতেও মানব জীবনের অন্যান্য ব্যবস্থা সম্পর্কে কোন দিক নির্দেশনা নেই। অতএব, ধর্মকে রাজনীতি থেকে বাদ দিলে একমাত্র ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্মের উপর আঘাত আসে না।
পক্ষান্তরে, ইসলামকে রাজনীতি থেকে আলাদা করলে বা ইসলাম ভিতিক রাজনীতি বাদ দিলে ইসলামে কিছুই থাকে না। অতএব ধর্মকে রাজনীতি থেকে বিছিন্ন করা মানে সুকৌশলে ইসলামেেক পঙ্গু ও নির্মুল করার এক সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয় । দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হল এক শ্রেণীর মুসলিম রাজনীতিবিদ ও বুদ্বিজীবীরাই এই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করছে।
বিষয়টি হচ্ছে আমাদের ছোট বেলায় পড়া লেজকাটা শিয়ালের মত। কারণ যেহেতু অন্যান্য ধর্মে মানব জীবনের সমস্ত দিক ও বিভাগ সস্পর্কে পূর্ণাঙ্গ দিক নিদের্শনা নেই। আধুনিক যুগের জিজ্ঞাসা-বাদের বিজ্ঞান সম্মত জবাব নেই। তাই সে সব ধর্মকে রাজনীতি ও আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড থেকে নিরাপদ দূরে রাখলে কিছুই যায় আসে না। তাই তারা ইসলামকেও এ হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু ইসলাম এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম । ইসলামে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের সব সমস্যার সমাধান তো রয়েছেই বরং আজকের দুনিয়ায় মানব সমাজে বিরাজিত সকল সমস্যার সমাধান একমাত্র ইসলামের ভিত্তিতেই সম্ভব। মানব সমাজকে সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন শোষণ ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি দেয়ার যোগ্যত একমাত্র ইসলামেরই আছে। কারণ মানব রচিত সকল আইন কানুন ও মতাদর্শের পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ পথে। এ সব মতবাদ মানুষের জীবনকে কিছুই দিতে পারেনি বরং অন্যায়, অত্যাচার, পাপাচার ও দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
যার অনিবার্য পরিণতিতে বিশ্বব্যাপী মানুষ আবার ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে । দেশে দেশে ইসলামের পক্ষে জাগরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যা ইসলামের বিজয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। আর ইসলামের অনিবার্য বিজয় ঠেকানোর জন্যই তারা ঐ লেজকাটা শিয়ালের পথ ধরেছে। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এবং নিজেদের রাজনৈতিক হীনস্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন দেশের একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও বুদ্বিজীবীরা ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে যে ভূমিকা পালন করছে তা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ইয়াহুদীবাদী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকেও হার মানায়। এরই কারণে দুনিয়ার সর্বত্র মুসলমানদের উপর নানাবিধ বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত ও ফেৎনা-ফ্যাসাদ নেমে আসছে ।
প্রকৃতপক্ষে যে সব রাজনৈতিক দল কুরআন সুন্নাহকে মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে ও দলের অভ্যন্তরে ইসলামী আর্দশের অনুসরণ করে এবং এর মাধ্যমে প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে মাঠে ময়দানে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে, তাদের রাজনীতিই মূলত ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতি । এটা কখনও এবং কোন অবস্থাতেই ধর্র্মকেই অর্থাৎ ইসলামকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার বলে পরিগণিত হতে পারে না।
পক্ষান্তরে, যাদের দলীয় ইশতেহারে আদর্শের ভিত্তি হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করা হয় না, যাদের বাস্তব জীবনে কোরআন-সুন্নাহর আদর্শের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় ভোট পাওয়ার জন্য ইসলামের নাম ব্যবহার করা এবং নিজেদেরকে ধার্মিক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার অভিনয় করাকেই বলা হয় রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের ব্যবহার বা ইসলামের ব্যবহার।
ইসলামী রাজনীতির বিজ্ঞ সমালোচক বা আলেম-ওলামাদের কাছে কমপক্ষে এই পার্থক্যটুকু পরিষ্কার থাকা উচিৎ। বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও এমন এক ধরনের কুচক্রী,স্বার্থান্বেষী, রাজনৈতিক দলকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা যায় যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন রাজনীতিতে বিশ্বাসী ,তারা ধর্মভিত্তিক অর্থাৎ ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতির ঘোরবিরোধী। অথচ তারাই ঘোষণা করে যে আমরাও মুসলমান। এমনকি ইসলাম কারো একচেটিয়া সম্পদ নয়,আমরাও ইসলামের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আমরাই মহানবীর (সা) প্রকৃত উম্মত। এরকম মন্তব্য করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। অথচ ইতিহাস সাক্ষী,তারা ক্ষমতায় আসায় যে শাসনতন্ত্র রচনা করেছিল তাতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পর্যন্ত ছিল না। ইসলামের ভিত্তিতে তারা দল গঠনকে নিষিদ্ধ করে।
তারা ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চিহ্নগুলো মুছে ফেলার উদ্যোগ নেয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে কোরআনের একটি আয়াত, যার অর্থ-“পাঠ কর তোমার প্রভুর নামে,যিনি সৃষ্টি করেছেন” (সুরা আলাক্ব:-১) তুলে দেয়। ঢাকা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সার্টিফিকেট থেকে “হে প্রভূ আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর”(সুরা ত্বা-হা:-১১৪) তুলে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও এ.কে.ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দেয়।
অথচ তাদেরই দলীয় নেতৃবৃন্দ ওমরার পোশাক পরিহিত অবস্থায় পোস্টারে ছবি ছাপিয়ে নিজেকে ধর্মানুরাগী হিসেবে উপস্থাপন করেন। হাতে তসবিসহ মোনাজাতরত অবস্থায় ছবিও জনগণের কাছে প্রচার করে নিজেকে অতিশয় নিষ্ঠাবান ধার্মিক হিসেবে তুলে ধরার ঘৃণ্য প্রয়াস চালান। অথচ সকলে জানেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নের কোন উল্লেখ নেই। এ হল ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের এক জীবন্ত নমুনা।
এ সমস্ত দলগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত লোকেরা ইসলামকে শুধুমাত্র ধর্ম ছাড়া অন্যকিছু চিন্তা করে না। তারা ইসলামকে নামায রোযাসহ কয়েকটি মৌলিক ইবাদত হিসেবে গণ্য করে মসজিদের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চায়। অথচ সমাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও যে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধান রয়েছে সে সর্ম্পকে তারা নিরেট মূর্খ।
ইসলামের মূল ভিত্তি কালেমা তাইয়্যেবা ইসলামী রাজনীতির উৎস । কালেমার মূল ঘোষণা ও অন্তর্নিহিত বাণী হলো এক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব গ্রহণ করা। গায়রুল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব স্বীকার করে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ জীবন যাপনের সকল ক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ (স) কে অনুসরণের অঙ্গীকারই কালেমার ঘোষণার দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য দিক। তাই কোন অবস্থাই ইসলামকে রাজনীতি থেকে বিছিন্নকরার সুযোগ নেই । মুহাম্মাদ (সা) কে আল্লাহর রাসুল ঘোষণা করার অর্থ ও তাৎপর্য হলো তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত আকারে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করা আর যা কিছু নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। এই কালেমার ঘোষণা দিয়ে যারা ইসলামে প্রবেশ করে মুসলিম মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত হয় তারা ইসলামহীন রাজনীতি অথবা রাজনীতিবিহীন ইসলামের কথা ভাবতেও পারে না।
হাদিসের আলোকে ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি বুনিয়াদ হল নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করা। এই দুটো কাজকে রাষ্ট্রপরিচালকদের মৌলিক দায়িত্ব হিসাবে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন সুরা হজ্জ্বের ৪১ নং আয়াতে। তাছাড়া আল্লাহর হুকুম আহকাম এবং রাসুলের আদর্শ অনুসরণের জন্য শাসক নিয়োগ ও শাসন ক্ষমতার অধিকারীদের আনুগত্যের যে নির্দেশ কুরআনে দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম কায়েম ও ইসলামী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।
ইসলামের এই মৌলিক বিষয়টিকে পশ্চিমা বিশ্ব মৌলবাদী হিসাবে সংঙ্গায়িত করেছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় এখন ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদের সাথে একাকার করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে ইসলাম নির্মূলের অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হল ইসলামের শত্রুরা মুসলিম রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশকেও এতে শরীক করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচিত ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনের সাথে সন্ত্রাসবাদের দূরতম কোন সর্ম্পক নেই। গুটি কয়েক ব্যক্তি ও সংস্থা অপরিণামদর্শী কিছু বক্তব্য ও কার্যক্রমকে বাহন হিসাবে ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের নামে বিশ্বব্যাপী ইসলামের আওয়াজকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে।
মূলত; বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে এবং ইসলামী আন্দোলনের মূল ধারার কার্যসমূহের উপর আঘাত হানার ক্ষেত্র প্রস্তুত বা অজুহাত সৃষ্টির জন্যই ঐ সব ব্যক্তি ও সংস্থাকে ইসলামের চিহ্নিত দুশমনরাই মাঠে নামিয়েছে। অতএব এই ব্যাপারে মুসলিম জনসাধরণের বিশেষ করে নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের যারা ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রমকে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন তাদের এই ব্যাপারে অসতর্ক থাকার কোন সুযোগ নেই। কারণ যুগে যুগে ইসলামী আন্দলনের ধারা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে এক ধরনের কুচক্রী দল থাকবেই যারা এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার ব্যর্থ প্রয়াস চালায় যা আল্লাহর রাসুলের (সা) সময়েও বিদ্যমান ছিল।
যারা ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন তারা “ধর্ম ও রাজনীতি ” আলাদা এই তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে যে সব অবান্তর যুক্তির আশ্রয় নিয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল “ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত ব্যপার”। একে রাজনীতিতে টেনে আনা উচিত নয়। অপরটি হল পবিত্র ধর্মকে রাজনীতিতে টেনে আনলে ধর্মকে অপবিত্র করা হয় । তারা এও বলে যে একটি দেশে বিভিন্ন ধর্মের লোক আছে! ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে অমুসলিমদের কি হবে ? ধর্ম কি ব্যক্তিগত ব্যপার ? তারা ধর্মের সংজ্ঞায় বলেছে যে- অ ঢ়ৎরাধঃব ৎবষধঃরড়হ নবঃবিবহ সধহ ধহফ মড়ফ” আল্লাহর সাথে বান্দার ব্যক্তিগত সম্পর্কই ধর্মের মূলকথা।এটি ইসলামের জন্য মোটেই প্রযোজ্য নয়।
সত্যি বলতে কি এ ধরনের সীমিত অর্থে ইসলাম কোন ধর্ম নয়। ইতোপূর্বে বলা হয়েছে ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন বিধান, যার পরিধি মানব জাতির সকল দিক ও বিভাগে বিস্তৃত। প্রচলিত অর্থে নবী করীম (সা)-কে নিছক ধর্মগুরু ও আসমানী কিতাব কে নিছক ধর্মগ্রন্থ মনে করা হয়, যা আদৌ ঠিক নয় । নবী করীম (সা)-কে প্রেরণ ও আসমানী কিতাব নাযিলের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,-“নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায় নীতি যাতে মানুষ সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি লৌহ দিয়েছি যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি এবং তাতে মানুষের জন্য রয়েছে বহুবিধ কল্যাণ। এই জন্য যে আল্লাহ জানতে চান কে প্রত্যক্ষ না করেও আল্লাহ ও রাসুলকে সাহায্য করে ? আল্লাহ শক্তি মান পরাক্রমশালী।” [সুরা আল হাদিদ: ২৫]।
অতএব ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার এই অজুহাত তুলে মানব জীবনের সিংহ ভাগ ইসলামের বাইরে রাখার কোন সুযোগ নেই । ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যপার এই অবান্তর কথাটি সম্পর্কে কুরআনের দুটি আয়াতের অপব্যবহার এবং অপপ্রয়োগ করতে দেখা যায় এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে। এর একটি আয়াত হল : “দ্বীনের ব্যপারে জোর জবরদস্তি নেই।” সত্যপথ ভ্রান্তপথ থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে। সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে যা কখনো ভাঙ্গবেনা, আল্লাহ সর্বশ্রোতা প্রজ্ঞাময় ”। [আল বাকারা: ২৫৬] এই আয়াতটির পুরো বিষয় বস্তুকে সামনে রাখলে তা থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা আবিষ্কারের কোন সুযোগ নেই।
এখানকার মূল বিষয়টি হল আল্লাহ তায়ালার সঠিক পরিচয় সামনে রেখে আল্লাহ তায়ালার প্রতি তার কিতাব ও রাসুলদের প্রতি এবং আল্লাহর কাছে চুড়ান্ত জবাবদিহিতার জন্য আখিরাতের জীবনের যে ধারণা দেয়া হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে । সুস্পষ্টভাবে জেনে বুঝে মানুষ ঈমান আনবে এটাই আল্লাহর বিধান। এই ঈমান বা বিশ্বাস আনার ক্ষেত্রে বল প্রয়োগের সুযোগ রাখা হয় নি।
অতএব,আমি ইসলাম কবুল করব কি করব না এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অবশ্যই আমার আছে। কিন্তু ঈমান আনার পর; ইসলাম কবুল করার পর; মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেয়ার পর আমি ইসলামী আইন মানব কি মানব না অথবা কোনোটা মানব কোনোটা মানবনা এই এখতিয়ার কারোর নেই।তাই রাজনীতি, অর্থনীতি সহ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য ইসলামের যে হুকুম রয়েছে তা ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার এই অজুহাতে পাশ কাটানোর কোন সুযোগ নেই। অপর যে আয়াতটি তারা ব্যবহার করে থাকে তা হল সূরায়ে ক্বাফিরুনের অংশবিশেষ। “তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য”। এটা ছিল মূলত; মুশরিকদের অযৌক্তিক একটি আপোষ প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করার উদ্দেশ্যে নাযিলকৃত আয়াত। আল্লাহর নির্দেশ না মানাকে ধর্মনিরপেক্ষতার দলিল হিসেবে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। এটা বলা হয়েছে অমুসলিমদের উদ্দেশ্যে। মুসলমানদের জন্য এটা কোন অবস্থায়ই প্রযোজ্য নয়।
পরিশেষে বলা যায়, রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের ব্যবহার আর ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করা- অন্য কথায় ইসলামকে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার আর নিষ্ঠার সাথে আন্তরিকতার সাথে ইসলামের ভিত্তিতে রাজনীতি করা যে এক কথা নয় তা সুস্পষ্ট এবং সুনিশ্চিত । এই দুটোকে এক করে দেখা চরম অন্যায় এবং সকল ন্যায়Ñনীতির পরিপšী’। একটি বর্জনীয় অপরটি ঈমানের অপরিহার্য দাবী।
ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করাকে যারা সত্যি অপছন্দ করেন, ক্ষতিকর বলে বিশ্বাস করেন , তাদের ভূমিকাও স্বচ্ছ সু¯পষ্ট হওয়া দরকার। কুরআন ও রাসুল (সা) এর আদর্শের মধ্যেই ইসলামের বাস্তব ও প্রকৃত রূপ অবিকল বর্তমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পরিকল্পিতভাবে মানবতা ও মনুষত্বের উপর ইবলিশি শক্তির বিজয় নিশ্চিত করার ধারাবাহিক প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা অব্যাহতভাবে চলতে থাকলে শুধু ইসলাম আর মুসলমানরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, বিপর্যস্ত হবে গোটা মানব সমাজ।
তাই গোটা মানব জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আজকের বিশেষ প্রেক্ষাপটে ইসলামের বিশ্বজনীন আদর্শ সম্পর্কে নতুন করে চিন্তা ভাবনা করা সময়ের অনিবার্য দাবী। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার জমীনে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টাকে আমৃত্যু অব্যাহত রাখার তাওফীক দান করুন
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×