somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

#পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ Animal Farm B:-) রাশিয়ান সমাজতন্ত্রের রূপকধর্মী ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বইঃ ANILAM FARM
লেখকঃ জর্জ অরওয়েল
GoodReads Rating: ⅘
Personal Rating: 9/10


ANILAM FARM বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে, যা একটি রাশিয়ান বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ার একটি ব্যঙ্গাত্মক মূলক উপন্যাস। বইটির লেখক জর্জ অরওয়েল ছদ্মনামের আড়ালে বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক লেখক যার প্রকৃত নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। অবিভক্ত ভারতের বাংলা প্রদেশের মতিহারিতে জন্ম হয়েছিল তাঁর। Animal Farm বইটিতে, ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের ঘটনা এবং এর পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্তালিন যুগে রাশিয়ার তথাকথিত সাম্যবাদের শাসন ও শোষণ প্রতিফলিত হয়েছে।

শুরুতেই বলে নেয়া ভালো বইটির প্লট বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মত যেখানে পশুপাখিরা বর্তমানের তুলনায় অনেক বেশি বুদ্ধিমান এবং ইংরেজিতে কথা বলতে ও লেখতেও সক্ষম।
কাহিনীর শুরুটা হয় একদল পশুপাখি যারা একজন মানুষের তত্ত্বাবধানে বাস করত। ফার্মটির নাম ছিলো ম্যানর ফার্ম। ম্যানর ফার্মের মালিক মি. জোন্স তার ফার্মের পশুদের ওপর দিনের পর দিন অবিচার করে আসছিলো। সে তাদের সময়মতো কখনো খাবার দিতো না, প্রতিদিনই মদ্যপ অবস্থায় ফিরে এসে নানা অত্যাচার চালাতো পশুদের ওপর। পশুপাখিরা তাদের মালিকের এই খারাপ ব্যবহার ও অত্যাচারের কারণে মোটেই খুশি ছিলো না। এরপর তারা সিধান্ত নেয় যে তারা মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে।


বিদ্রোহ করার পেছনে সবথেকে বেশি অনুপ্রেরণা যোগান ফার্মের সবচেয়ে জ্ঞানী এবং বয়স্ক শূকর ‘বৃদ্ধ মেজর’। ফার্মের শূকরগুলো অন্যান্য সকল প্রাণী থেকে ভিন্ন ছিলো। তারা ছিলো অনেক বেশি বুদ্ধিমান, অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে ও লেখতে সক্ষম, এমনকি তাদের মধ্যে নেতাগোছের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিলো।
একদিন বৃদ্ধ মেজর ফার্মের সকল পশু প্রাণীদের নিয়ে সভার আহবান করেন। সেখানে বৃদ্ধ শূকর পর্যায়ক্রমে তাদের উপর নির্যাতনের ইতিহাস শোনায়। তার মতে ফার্মের সকল প্রাণীরা সমান অধীকার ভোগ করবে। বৃদ্ধ মেজর তাদের মুক্তির জন্য লড়তে উব্দুদ্ধ করে, এই শোচনীয় অবস্থা উপেক্ষা করে পশুকূলের নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। সে ফার্মের সবাইকে এক নতুন দিনের স্বপ্ন দেখায় যেখানে পশুরাই হবে সবকিছুর মালিক, থাকবে না মালিকের শোষণ, যেখানে পশুরা পাবে সমান অধিকার, যেখানে কোনো পশুই থাকবে না ক্রীতদাস। পশুরা তখন নতুন দিনের আশা বাঁধে। কিন্তু তাদের কোনো কিছুই করার ছিলো না তখন। মনুষ্যশ্রেণীর সাথে লড়াই করে কি যেটা সম্ভব? তাই সকল স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
আকস্মিক ভাবে কিছুদিন পর মারা যায় বৃদ্ধ মেজর। কিন্তু তার মৃত্যুর সাথে সাথে ফার্মের সকল পশুপাখি নতুন ভাবে বিপ্লব করার সাহস লাভ করে। এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয় ফার্মের পশুদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী শুকর। হঠাৎ একদিন সুযোগ বুঝে ফার্মের সকল পশু ঐক্যবদ্ধ হয়ে অতর্কিত আক্রমণের মাধ্যমে ফার্ম থেকে বিতাড়িত করে ফার্মের অত্যাচারী মালিক মি. জোন্সকে। দখল করে সম্পূর্ণ ফার্ম। বদলে ফেলে মানুষের দ্বারা তৈরিকৃত নিয়মকানুন। ‘ম্যানর ফার্মের’ নাম পালটে রাখা হয় ‘অ্যানিম্যাল ফার্ম(Animal Farm)’। ধ্বংস করে দেয়া হয় অত্যাচারের জন্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র। মনুষ্যশ্রেণীর নির্যাতন, পরাধীনতা ভেঙ্গে পশুশ্রেণীর শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করা হয়। খামারের মধ্যে ‘পশুবাদ’ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয় ৭টি নীতিমালা, যা ফার্মের সকল পশুর জন্য অবশ্য পালনীয়। তাদের শেখানো হয় ইংরেজি বর্ণমালা। ৭টি নীতিমালা ছিলো এরূপঃ
1. Whatever goes upon two legs is an enemy. ।
2. Whatever goes upon four legs, or has wings, is a friend.
3. No animal shall wear clothes.
4. No animal shall sleep in a bed.
5. No animal shall drink alcohol.
6. No animal shall kill any other animal.
7. All animals are equal.
(পরবর্তিতে যদিও এই নীতিমালা পশুশ্রেনীর সুবিধাবাদী জনগোষ্টী পরিবর্তন করে। এটাই মূলত বইটির একটি অন্যতম মূল আকর্ষণ।)


পশুদের মুক্তির জন্য তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যারা মূল উদ্যোগ এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে থাকে তাদের মধ্যে সবথেকে কর্মঠ ছিলো দুটি শূকর, ‘নেপোলিয়ান’ এবং ‘স্নোবল’। এর পেছনে ছিলো দুটি কারণ, প্রথমত শূকর ছিলো প্রানীকূলের মধ্যে সবথেকে বুদ্ধিমান প্রাণী, দ্বিতীয়তঃ, তাদের লক্ষ্য ছিলো সাম্যবাদীটার লোভ দেখিয়ে ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ফার্মের দখল নেয়া। যাইহোক, পশুরা সবাই ‘নেপোলিয়ান’ নেত্তুত্বে খুশিই ছিলো। তারা সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে থাকে। তারা জমিতে ফসল বোনে, পাকা ফসল তুলে নিজেদের মতো করে মাড়াই করে এবং সমস্তটা নিজেদের জন্যই সংরক্ষণ করে রাখে। নতুন নীতিমালা মতে দুধ আর বাজারে বিক্রি করতে পারবে না, ডিম সংরক্ষণ করে রাখা হয় আগামীদিনের জন্য। এর পরথেকেই গল্পটা খুব আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। মিঃ জোন্স আবার তার ফার্ম দখলেন জন্য আক্রমণ করে। কিন্তু পশুকুলের সংঘঠিত প্রিতিরোধের মুখে সে পিছু হঠতে বাধ্য হয়। তারপর আবার আক্রমণ, পালটা আক্রমণ, হিংসে, বিশ্বাসঘাতকতা, দেশদ্রোহ(ফার্ম দ্রোহ), স্বজনপ্রীতি ইদ্যাদির মাধ্যমে টানটান উত্তেজনার সাথে গল্প এগিয়ে চলতে থাকে। আমি আর বেশি বলে গল্পটা স্পয়লার করতে চাচ্ছি না।


লেখক কাল্পনিক রূপক এর সহায়তায় অত্যন্ত সূক্ষ্ম ভাবে ব্যঙ্গধর্মী বর্ণনার মাধ্যমে রাশিয়ার বিপ্লব পরবতী সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রকৃত সমালোচনা করেন। আমার মতে এক্ষেত্রে তিনি ১০০ ভাগ সফল হয়েছেন। আগেই যেমনটি বলেছি, পশুবাদ দ্বারা তিনি তৎকালীন সোভিয়েত কমিউনিজমকে বুঝিয়েছেন। খামারের বৃদ্ধ মেজর দ্বারা বুঝানো হয়েছে কার্ল মার্ক্সকে যিনি সমাজতন্ত্র সৃষ্টির মাধ্যমে রাশিয়ান বিপ্লবের পথ দেখান কিন্তু নিজে কখনো সমাজতন্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা দেখে যেতে পারেন নি। মিঃ জোন্স হচ্ছেন রাশিয়ান বিপ্লব পরবর্তী অত্যাচারী নেতা জার নিকোলাস(Nicholas II)। আর নেপোলিয়নের মাধ্যমে তৎকালীন রাশিয়ার স্বৈরাচারী শাসক স্তালিনকে চিত্রিত করা হয়েছে। পশুদের প্রতীকী কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে তিনি রাশিয়ায় সাম্যবাদীতার মানে যে ভয়ানক খেলা চলছিলো তা ফুটিয়ে তোলেন। নাতিদীর্ঘ এই বইটিতে আমাদের সাধারণ জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী, যেমন নিজের দোষ অন্যয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া, সত্যকে ভুলভাবে এবং নিজের স্বার্থে সাজিয়ে উপস্থাপন করা, মিথ্যে প্রমাণ সৃষ্টি করা ইত্যাদি লেখক খুব সহজ ভাবে তূলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
যদিও বইটি পড়ার জন্য রাশিয়ার ইতিহাস জানার প্রয়োজনীয়তা নেই, কিন্তু যদি এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে বইটি পড়ার মজা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। হয়তো মনে হতে পারে গল্পটি বাচ্চাদের জন্য, যা অবশ্যই সত্য কারণ আমেরিকায় এই বইটি বাচ্চাদের কারিকুলামে অর্ন্তভুক্ত আছে। কিন্তু এই গল্পটি এতই চমৎকার যে সকল বয়সের মানুষ এটি পড়ে বিভিন্ন ধরণের উপলব্ধি লাভ করবে। জর্জ ওর‍্যেল মূলত বইটির শেষে তাঁর ব্যবহৃত রূপকের বিশ্লেষণ করেন যেখানে তিনি রাশিয়ার ইতিহাসের কথা বর্ণনা করেন। আর এই বইটির উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু Anime চলচিত্রও নির্মাণ করা হয়েছে। Youtube এ খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৩৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×