আগের ব্লগ গুলোর মতই এগুলো পাঠকদের জন্য নয়। নিজের স্মৃতি গুলো ধরের রাখার প্রয়াসে লিখছি মাত্র। আমার লিখা ভাল নয়, নিজের জন্যই লিখা।
যা ভয় করছিলাম তাই ই হল। ডাক্তার বললেন প্যানক্রিয়াস টিউমার এবং তা অনেক বড়, আমার মনে হয় ক্যান্সার হয়ে গেছে কিন্তু সেটা বের করে এনে টেস্ট না করলে বলা যাবে না। আমি সেই কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে চলে গেলাম আমার ডাক্তারী পড়ুয়া ১জন বন্ধুর কাছে। সে আমার খুবই কাছে বন্ধু। ইংরেজিতে ১টা কথা আছে, Brother from another mother. সেই ধরনের বন্ধু। সে আমাকে অনেক শান্তনা দিল। এরমধ্যে আব্বা নানার বাড়ি যেয়ে সবাইকে বলে দিয়েছে এসবের ব্যাপারে। সবাই দলে দলে আসা শুরু করে দিল আমাদের বাড়িতে আম্মা কে দেখতে। আমার বিশ্বাস আম্মা তখনই বুঝে গেছিলেন তার অবস্থা খারাপ।
এরপর শুরু হয়ে গেল কোথায় চিকিৎসা করান হবে তা নিয়ে আলোচনা আর টাকা জোগাড় করার কাজ। প্রথমে ভাবছিলাম ভারত নিয়ে যাব কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল যে আব্বা সরকারী করত। সে সময় সরকারী চাকুরেদের বিশেষ করে নিম্ন পদের লোকেদের দেশের বাইরে যাওয়া ছিল প্যারার কাজ, যা অনেক সময় সাপেক্ষ। আর সে সময় রাজনৈতিক অবস্থাও খুব খারাপ ছিল।বলতে গেলে সপ্তাহের ৪/৫ দিনই হরতাল লেগে থাকত। তাই সময় বেশী ছিলা না হাতে। তাই ঠিক করা হল ঢাকাতে ল্যাব এইডে যাব আমরা।
এদিকে আরেক সমস্যা হয়ে গেল। আব্বা টাকা খরচ করতে রাজি ছিল না। তার কথা হল ১লক্ষ টাকার মধ্যে যা হয় হবে। পরে অবশ্য যত টাকা লেগেছে উনিই দিয়েছেন। সে সময় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কমতি ছিল না আমাদেরমাঝে।
এত কিছুর পরেও অক্টবরের ২৫তারিখ আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম আমরা। আমি, আম্মা আর ছোট ফুপু-ছোট ফুপা। এটাই আম্মার জীবনের ১ম ঢাকা যাত্রা। কে জানত এটাই তার শেষ হবে!!!
আমি আর ফুপা বসা ছিলাম একসাথে। সিরাজগঞ্জে এসে যাত্রা বিরতিতে আম্মার কাছে আমি চলে যাই। যমুনা সেতুতে উঠে আম্মা কে সেতুটা দেখালাম। আম্মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। আদোর করেছিলেন অনেক। কখনই এরকম করে আদোর করতেন না, মানে তখন B. Sc. ৩য় বর্ষে পড়ি। এই বয়ষে এরকম আদোর পাওয়া যায় না। সেটাই যে শেষ আদোর, তখনও বুঝি নি।
আমরা ঢাকাতে এসে পৌছালাম রাত ১০টাই। উঠলাম ১জন দুঃসম্পর্কের ফুপুর বাসাই। সেই রাত আম্মার সাথেই ঘুমালা। সেটাও শেষবারের মত।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



