স্কুলে আমি বড় সাইজ এবং মার মুখো ছেলে হিসেবে ব্যাপক হারে পরিচিত ছিলাম কিন্তু নাইনের ২য় সাময়িক পরীক্ষার পর গুড বয় হবার চেষ্টা করছি। সেই হিসেবে বেশ সফলও হয়েছি। আমাকে দেখলে এখন মনে হতে পারে এর মত ভালো ছেলে নাই। এই ছেলে সাতে-পাঁচে ক্যান দুই-তিনেও নাই। আগেও অবশ্য এমনি ছিলাম। তবে মাঝে মাজে বড় ভাই কিংবা চোটদের ক্যালাতাম। একবার কলেজের একটা ক্যাডার ছেলেকে মেরে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছিলাম। শেষে একটা বড় ভাই থাকায় রক্ষা।
তবে বিজ্ঞান মেলায় আমার প্রজেক্ট দেখে উনি অজ্ঞান এবং মুগ্ধ প্লাস আমার কাছ থেকে শেখার আগ্রহে দগ্ধ। পরে তাকে কম্পিউটারের বিভিন্ন টিপস দিয়ে নতুন কেনা কম্পিউটার সেটআপ ইত্যাদি করে দিয়ে উনার প্রিয় পাত্র হয়েছি।
যাই হক আজকের ব্যাপারটা বলি স্কুলেও আজও সংস্কৃতি অনুষ্ঠান হবে এই সবে আমি বরাবরই অনুপস্থিত। যদিও আমার বন্ধুদের এবং আব্বার ধারণা আমি ভালো কবিতা আবৃতি করতে পারি কিন্তু কণ্ঠ ব্যাপক হারে বেসুরা(এটা আমার ধারণা) । তবে আজকের অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। যে ঘনাটা বলছি তা হল অনুষ্ঠান শেষের ঘটনা।
স্কুল থেকে বের হয়ে একটা মাঠের দিকে গিয়েছি। মাঠটা আমাদের স্কুল এর বাউন্ডারির পিছনে। বেশ বড় সাইজের মাঠ এক সাথে মাঝারি সাইজের দুইটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলা যায়। যা হক তখনও ক্রিকেট খেলা চলছে তবে দল একেবারে ছোট আকারের। খেলাটা মাঠের শেষ মাথায় হচ্ছে। মাঠের সামনে গিকে রাস্তা রাস্তার একটু নিচে অর্থাৎ মাঠের সাইডে দাড়িয়ে কয়েক জন মিলে গল্প করছি। আমাদের মত অন্যান্য ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরাও হাটতে হাটতে অথবা দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করছে। মনে হয় গল্পের বিষয় হল আজকের অনুষ্ঠান। শুধু উপস্থিত বক্তিতা ও কবিতা আবৃতি হয়েছে বলে তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান শেষ হল। কালকেও কিছু হবে। পুরষ্কার দিন পরে আরও একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেয়া হয়। এই সব আমার ব্যাপক হারে বোরিং লাগে।
যাই হক মূল ঘটনায় চলে আসি। রাস্তায় অনেক গুলো দৃশ্যের মধ্যে একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল। আমাদের পাসের নতুন কুড়ি স্কুলের কয়েটা ছেলে। একটা মেয়ের যাবার রাস্তার সামনে দাড়িয়ে আছে। আর একটা ছেলে একটা মেয়েটাকে কি যেন বলছে, মেয়েটাকে বেশ নার্ভাস মনে হল। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম মেয়েটা আমাদের ক্লাস নাইনের সেকেন্ড গার্ল চৈতি সাথে আমাদের বন্ধু তারেকের বোন। খুব ভদ্র এবং ভালো ছাত্রী হিসেবে চিনি। আমাদের সাথে তারেকও ছিল। তাই আমারা ব্যাপারটা দেখতে এগিয়ে গেলাম। দেখি আসলে ঘনটা সত্যি। ব্যাটা চৈতিকে “দ্যা থ্রি ম্যাজিক ওয়ার্ড” বলেছে। মেয়েটা বড়ই ভদ্র, তাই ভয়ে একেবারে কুকড়ে গেছে। অবস্থা দেখে মাথায় রক্ত চড়ে গেল আমাদের সবার।
মারামারি করার সময় মূলত রাজুক কথা বলে অবশ্য প্রথম ঘুষি আমি বসাই। এইবারও রাজু কথা শুরু করলো, “বেশ ভদ্র ভাবেই বলবো তোমার নাম কি?” ।
ছেলেটা রুক্ষ স্বরে বলল, “রাসেল”।
রাজু মনে হয় চৈতির সামনে ভ্যাজাল করতে চায় না। তাই চৈতিকে বলল, “চৈতি বাসায় যাও”।
চৈতি যেন বাঁচল। কোন কথা না হলে সোজা ধর রাস্তা!
রাজু এবার রাসেল এর দিকে নজর দিলো। বলল, “এই এলাকায় আর যেন দেখি, আর তার সাথে অবশ্যই চৈতির আসে পাসে”।
এবার ছেলেটা হিন্দি ভাষায় সকৌতুকে বলল, “এলাকা তো কুত্তোকা হোতা হে”।
এইবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। বললাম, “সেই জন্যই বলছি আমাদের এলাকায় কোন ইঁদুর চাই না। বিদায় হ। আর চৈতিরে আর জ্বালালে কপালে দুঃখ আছে।”
এই কথায় যেন ছেলের আঁতে ঘা লাগলো। একেবারে বেপরোয়া ভাবে কথা বলা শুরু করলো, “আমি জ্বলাবো! দেখি তুই কি করিস? শালা মানুষ চিনিস......”
এই সময় তারেক খুব ক্ষেপে গেল ওর বোনেকে জ্বলাবে তাও আবার এত বড় গলা। একটা ধাক্কা মেরে বসলো। তারেকো লম্বা কিন্তু শরীর মোটামুটি দুর্বল, তাই খুব একটা কাজ হল না।
একটা উল্টা ধাক্কা মারার জন্য রাসেল নামের ছেলেটা এগিয়ে আসলো। তবে মারতে পারলো না। কারণ আমার কাঠের তক্তার মত হাত ততক্ষণে কানের উপর পড়েছে। আমার এই থাপ্পড় খেয়ে কেউ দাড়িয়ে থাকতে পারে নাই। কারণ নিয়মিত বালির বস্তায় ঘুষির প্রাকটিস এবং ৬০ কেজি ওজনের ডাম্বল তুলি প্রতি দিন। এই ব্যাচারার ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো, পড়ে গেল। ওর সাথে যে কজন ছিল তাড়াও ভয় পেয়ে গেছে। প্রথম কারণ আমার থাপ্পড়ের শব্দ সাথে ছেলেটার পড়ে যাওয়া। দ্বিতীয় কারণ আমাদের স্কুলের অনেক গুলো ছেলে এসে জামা হয়েছে এবং সবারই মেজাজ ক্ষুদ্দ। যখন তখন ধরে ধোলাই দিতেই পারে।
অবস্থা একটু সমস্যার সৃষ্টি করলো কারণ ছেলেটা কানে ঝো ঝো শব্দ ছাড়া কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। স্কুল ফাকি দিয়ে এসে ইভ-টিচিং এর মত এটা বড় অপরাধ করা এবং বড় ভাইদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করার কারণে বিচার আমাদের পক্ষে ছিল। আর ছেলেটার ব্যাকগ্রাউন্ড রিপোর্ট ব্যাপক হারে খারাপ অন্য দিকে আমি এবং আমরা সাধু ছিলাম। এইটা হেট ম্যাডাম এর কাছ পর্যন্ত গেল না। আমাদের স্কুলের কয়েকজন স্যার এবং নতুন কুড়ির কয়েকজন মিলে বিষয়টা সমাধা হল। আর নতুন কুড়ির স্যারটা আমাকে চিনতেন। বিতর্ক প্রতিযোগিতার সময় তার সাথে পরিচয় হয়।
অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন বেঁচে গেলাম। ছেলেটারও ভাগ্য ভালো কারণ ওর আব্বার পজিশন ভালো। পেশায় পুলিশের একজন ভালো অবস্থানে আছেন। না হলে সোজা টিসি খাইতে হইতো। তবে একটা কারণে আমার মনটা খারাপ হল। কান ইয়ে করে দেবার জন্য সরি বলতে হল!
আল্লই জানে শুনল কিনা?