আমি নারী বিদ্বেষী! জোর গলায় বলছি “আমি নারী বিদ্বেষী”। কথাটা এত চিল্লাচিল্লি করে বলার কারণ আপনি যদি নারী স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন তাহলে মোল্লারা আপনার ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা করে দিবে আর যদি নারীদের বিপক্ষে বলেন তাহলেও মাথাটার অবস্থান নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে। যাই হক আমার কোন জন্ম গত “মেইল ইগো” নাই। বিভিন্ন ঘটনার সুতীক্ষ্ণ আঁচড়ের দাগ এর জন্য দায়ী। ওদের কোন ভাল কাজ আমার চোখে লাগে না (আসলে তারা করছেই বা কি?)!!
আমি আমার তিন সময় এর তিনটা ঘটনা উল্লেখ করছি তাহলেই বুঝবেন আমি কেন নারী বিদ্বেষী আর এখানে আমার কোন দোষ নেই।
১. একটু বেশীই পিছনে:
আমি তখন ক্লাস “টু” এর ছাত্র। একেবারে চরম ভদ্র ছেলে। অন্যরা যখন মারামারি আর থুথু ছিটাছিটি করত তখন আমি হাবলার মত এদিক ওদিক তাকিয়ে জগদীশ চন্দ্র হবার চেষ্টা করতাম। একদিন এক বিশাল সাইজের ললনা(জন্মের সময় আমি অন্য বাচ্চাদের তুলনায় সাইজের বড় ছিলাম! কিন্তু এ আসলে বয়সেই বড় ছিল) আমাকে আদেশ প্রদান করলো। একজনকে পেটানোর জন্য। আমি ভাই শান্ত সুবোধ বালক থুক্কু শিশু!! তাই এই কাজ রিজেক্টেড করে দিলাম। তার প্রতিশোধ হিসেবে একদিন সে আমার নাকটাকে ভেঙ্গে দিল। তাই আমার নাক আমার মায়ের নাকের মত লম্বা না হয়ে বাবার নাকের মত চ্যাপটা হয়ে গেল।
২. সবচেয়ে বড় ঘটনা আমার ছোট পরিবর্তন:
সিক্সে উঠলাম! বাবার কাছে চলে আসলাম। এত দিন মামাতো বোনদের অত্যাচার তো চলেছে। তবে সেই আলোচনা পরে আরেক দিন করছি।
মামা-মামি আমার পক্ষে ছিলেন। তাই গায়ের চামড়া সামান্য হলেও অবশিষ্ট ছিল। তাই নিয়ে স্কুলে ভর্তি হলাম। বাবার কারণেই কিনা জানি না আমার কবিতা আবৃতির বিশাল শখ দেখা দিল। এত বেশী যে, প্রথম পুরষ্কার আমার জন্য যেন দেয়া হত! সাথে উপস্থাপনা। ভাল শান্ত ছেলে হিসেবে ম্যাডামদের কাছে আগেই পরিচিত পেয়েছিলাম। এবার একটা স্কুলের অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে এবং কিছু কবিতা আবৃতি প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরষ্কার পেয়ে আমি রীতিমত স্টার বনে গেলাম।
কিন্তু আমার এই সুখের জীবনেই ক্রান্তি হয়ে দেখা দিল এক ললনা!! উনারও শখ ছিল কবিতা আবৃতি আমার জন্য নাকি স্কুলে টপ স্থান নিতে পারছিল না। তবে এই বিষয়ে আমি জ্ঞাত ছিলাম না। তার দুই নাম্বার শখ ছিল কুত্তা পালন! বিশাল দুইটা বিদেশী কুত্তা ছিল তার। স্কুলে আর খেলার মাঠে তার বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হত তাই কুত্তা দিয়ে আমাকে অপদস্থ করতে তার অসুবিধা হত না। মাঠে যাওয়া বন্ধ করলাম। ঐটা অবশ্য সাপে বর হয়ে দেখা দিল। নজরুল রবীন্দ্রনাথ, জীবন আনন্দ ছেড়ে তখন আমার প্রিয় কবি সুকান্তে এসে থামল। মাঠে যাওয়া বন্ধ করা যায় কিন্তু স্কুল? তাই ম্যাডামের কাছে ন্যায় বিচার চাইলাম। উনি উক্ত ললনাকে কিঞ্চিত ধমকা-ধমকি করলেন। কিন্তু বিষয়টা এমন যে এই বিষয় নিয়ে বেশী কিছুর বলারও নাই।
তবে লাভ হল যে, অত্যাচার দিগুণ হল। আগে শুধু কুত্তায় তাড়া করত এখন উক্ত ললনাও তাড়া শুরু করলো। তাই অতগ্য হয়ে তাকেই জিজ্ঞেস করলাম “কেন এমন করছ?”।
উত্তর দিলেন বাঁকা ভাবে। যা বোঝার ক্ষমতা তখন আমার ছিল না এবং বর্তমানেও নেই। তাপর তার একটা কাছে বান্ধবীর কাছে জানতে পারলাম আসল ঘটনা। রাগটা ঠিক আমার ওপর নয়।
ঐ সময়ই প্রথম ঘৃণা করা শিখলাম। ছেড়ে দিলাম কবিতা এবং উপস্থাপনা। বাবার নজরে ব্যাপারটা আসল কিন্তু তিনি ধরেই নিলেন ছোট বাচ্চাদের খুব সহজে যে কোন জিনিস এর প্রতি ঝোঁক চলে যাই আমারও তাই চলে গেছে।
কিছু দিন পর মনে হয় উক্ত ললনার কাছে ব্যাপারটা(আমার কবিতা ছাড়ার) দৃষ্টি গোচর হল, আমাকে মুক্তি দিল। কবিতা এখন আর আমি প্রয়োজন ছাড়া পড়ি না। আমার কথায় তোতলামো ভাব প্রচুর যোগ হয়েছে।
এখন অবশ্য ঘৃণাটা অভিমানে রূপ নিয়েছে। তবে ঐ মেয়ের উপর নয় আমার নিজের উপর! এত সহজে হেরে যাওয়া কি উচিৎ হয়েছিল? কিন্তু কোন দিন ঐ মেয়ে জানবে না তার সাময়িক আনন্দ এবং অহেতুক রাগ আমাকে ঠিক কতটা বলতে দিয়েছে।
৩. বর্তমানেও চলছে এর প্রতিক্রিয়া:
বর্তমানে অবশ্য আমার সাথে এমন কিছু করা সম্ভব নয়। আমার গায়ে অসুরের মত শক্তি। অন্যদের তুলনায় মগজ কম হলেও সামান্য গজিয়েছে। মেয়েদের সাথে আমার কথা বলতে অস্বস্থি লাগে(অন্যদের মত স্মুতলি কথা বলতে পারি না, ঝগড়া কিংবা তর্ক করতেও পারি না)। তবে তাদের কোন অসুবিধা নাই। এদের এইটুকু বুদ্ধিটুকুও নাই যে আমি ওদের পছন্দ করি না। যাই হক আমার সাথে মূলত প্রয়োজন এর জন্য মিল রাখে। কারণ চামচামি মার্কা কাজে(যেমন; নোট নেয়া, কম্পিউটারের সমস্যা সমাধান, অন্যের কাছে চিঠি দেয়া এবং তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া ইত্যাদি) আমার বিকল্প পাওয়া বেশ কঠিন।.
কিন্তু দেখি মাঝে মাঝেই বিশেষ করে এক-আধ জন আমার সাথে অকারণে ঝামেলা পাকানোর এবং ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা করছে। যে গুলা নিঃসন্দেহে বাচ্চাদের আচরণ। আমি ভাই শান্ত মানুষ এড়িয়ে যেতে খুব একটা অসুবিধা হয় না।
তিনটা ঘটনা শুনেই তো বোঝার কথা আমি অকারণে নারী বিদ্বেষী নই!!